ভ্যানে জীবন, ভ্যানেই সংসার
পাটুরিয়া লঞ্চঘাট এলাকায় ভ্রাম্যমাণ ভ্যানে ফল সাজাচ্ছেন বিক্রেতা মো. রওশন আলী
অভাব-অনটনের কারণে লেখাপড়া করতে পারিনি। বাবার সংসারে অর্থের জোগান দিতে ৩০ বছর আগে আরিচা ফেরিঘাটে ভ্যানে ফল বিক্রি শুরু করি। সেই থেকে শুরু। আজও ভ্যানে করে ফল বিক্রি করছি পাটুরিয়া ফেরিঘাটে। ফল বিক্রি করে যে টাকা আয় হয় তা দিয়ে সংসার চলে। মূূলত ভ্যানটাই আমার সংসার।
এভাবে কথাগুলো বলছিলেন পাটুরিয়া ফেরিঘাট এলাকার ভ্রাম্যমাণ ফল বিক্রেতা মো. রওশন আলী। ভ্যানে করে ফল বিক্রি করে সংসার চলে তার।
বিজ্ঞাপন
ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যাত্রী ও যানবাহনের যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথ। এ নৌপথে প্রতিদিন গড়ে দেড় থেকে দুই হাজার যান ও কয়েক হাজার যাত্রী পারাপার হয়। বাসযাত্রী, লঞ্চযাত্রী আর যানবাহন শ্রমিকদের কেন্দ্র করে পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় প্রায় শতাধিক ফল বিক্রেতার সংসার চলে।
সোমবার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা যায়, পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় যানবাহনের দীর্ঘ সারি। নদী পারের অপেক্ষায় প্রায় শতাধিক যানবাহন ও যাত্রী। ঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে আরসিএল মোড় পর্যন্ত শতাধিক ভ্যান ফল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
বিজ্ঞাপন
ভ্রাম্যমাণ ফলের ভ্যান
নৌপথ পার হতে আসা বাসযাত্রী, লঞ্চযাত্রী এবং শ্রমিকদের কাছে রকমারি ফলমূল বিক্রি করছেন ফল বিক্রেতারা। ফেরির জন্য ঘাট এলাকায় দীর্ঘসময় আটকে থাকা এসব যাত্রী ও যানের শ্রমিকরা হালকা খাবার হিসেবে এসব ফল কিনছেন।
পাটুরিয়া ফেরিঘাট এলাকার ফল বিক্রেতা তোতা মিয়া বলেন, ২০ বছর ধরে এই ঘাটে ফল বিক্রি করছি। ঘাট পার হতে আসা যাত্রীদের কাছে আমরা ফল বিক্রি করি। তবে আগের মতো বেচাকেনা নেই।
পাটুরিয়ার লঞ্চঘাটমুখী সড়কের পাশে ভ্যানে করে ফল বিক্রি করছেন রওশন আলী। প্রতিদিন কেমন ফল বিক্রি হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, করোনার কারণে যাত্রীরা আগের মতো ফল কেনে না। লঞ্চঘাটে যাত্রীদের চাপ থাকলে ৪-৫ হাজার টাকার ফল বিক্রি করতে পারি। করোনার কারণে আগের চেয়ে ব্যবসা অনেক কমে গেছে। কিন্তু ঘাট এলাকায় যানবাহন আর যাত্রী বেশি থাকলে ফল বেচাকেনা বাড়ে।
পাটুরিয়া জিরো পয়েন্ট এলাকার ফল বিক্রেতা ভজন কুমার দাস বলেন, এই ঘাটে ২০-২৫ বছর ধরে ভ্যানে করে ফলমূল বিক্রি করে সংসার চালাই। যে দিন ঘাটে গাড়ি আর যাত্রী কম থাকে সেদিন বেচাকেনা তেমন হয় না। ফল নিয়ে ক্রেতার জন্য অপেক্ষা করা লাগে। রাতে আড়াই হাজার টাকার ফল বিক্রি করছি। সারাদিনে আরও ৩ থেকে ৪ হাজার টাকার ফল বিক্রি করতে পারব বলে আশা করছি।
আরেক ফল বিক্রেতা আবুল হোসেন বলেন, মহাজনের কাছ থেকে ফল এনে ঘাট এলাকায় সারাদিন বেচাকেনা করে রাতে টাকা দেই। তাতে যা লাভ থাকে তা দিয়াই বউ পোলাপান নিয়া কোনোমতে চলছি। বেচাকেনা যেদিন ভালো হয় সেদিন সংসার ভালো চলে আর বিক্রি কম হলে কষ্ট করে চলতে হয়।
পাটুরিয়া ফল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দিলাল বলেন, পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় ৩শ ভাসমান হকার রয়েছে। এর মধ্যে ভ্রাম্যমাণ ভ্যানে করে ফল বিক্রি করে প্রায় ১শ হকার। ঘাট পারাপার হতে আসা যাত্রীদের কাছে ফল বিক্রি করেই তারা সংসার চালান। তবে ঘাটে গাড়ি আর যাত্রীর চাপ বাড়লে তাদের বেচাকেনা ভালো হয়।
এসপি