ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। পছন্দের প্রার্থীদের কাছে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম ও সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল হামিদের বিরুদ্ধে ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ উঠলে তড়িঘড়ি করে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করেছে কর্তৃপক্ষ। 

আমিনুল ইসলাম কর্মচারী নিয়োগ কমিটির আহ্বায়ক এবং আব্দুল হামিদ সদস্য সচিব। বিষয়টি নিয়ে তুমুল সমালোচনা চলছে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ২০ সেপ্টেম্বর নিম্নমান সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে একজন, অফিস সহায়ক পদে দুইজন এবং নৈশ প্রহরী পদে একজনকে নিয়োগ দিতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে নিম্নমান সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে ৫৪ জন, অফিস সহায়ক পদে ৭৪ জন এবং নৈশ প্রহরী পদে ১১ জন প্রার্থী চাকরির জন্য আবেদন করেন।

কর্মচারী নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলামকে আহ্বায়ক এবং সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল হামিদকে সদস্য সচিব করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির বাকি তিন সদস্যের মধ্যে একজন জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি, একজন সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি এবং আরেকজন জেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা।

গত ২২ নভেম্বর নিম্নমান সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর ও অফিস সহায়ক পদে আবেদনকারী প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষায় নিম্নমান সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে ৩৬ জন এবং অফিস সহায়ক পদে ৫৪ জন অংশ নেন।

অভিযোগ উঠেছে, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম একাই পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি করেন। পছন্দের তিন প্রার্থীর কাছে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার জন্য ঘুষ চান আমিনুল ইসলাম ও সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল হামিদ। কম্পিউটার অপারেটর পদের জন্য ১০ লাখ এবং অফিস সহায়ক পদের জন্য ৫ লাখ টাকা করে ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ ওঠে তাদের দুজনের বিরুদ্ধে।

খোদ জেলা পরিষদের সদস্য আইয়ুব আলীও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ করেছেন। তবে অভিযোগ ওঠার পর গত ২৪ নভেম্বর অনিবার্যকারণ উল্লেখ করে নিয়োগ প্রক্রিয়া সাময়িক সময়ের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেছে জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা পরিষদের সদস্য আইয়ুব আলী বলেন, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম একাই পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি করেছেন। তিনি নিম্নমান সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি দেওয়ার জন্য এক প্রার্থীর কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। ওই প্রার্থী তিন লাখ টাকা দিতে চাইলে তিনি রাজি হননি। 

তবে চাকরি প্রার্থীদের কাছে ঘুষ চাওয়ার অভিযোগটি মিথ্যা বলে দাবি করেছেন জেলা পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল হামিদ।

জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব, সিভিল সার্জন এবং আমি মিলে প্রশ্নপত্র তৈরি করেছি। চাকরি দেওয়ার জন্য টাকা চাওয়ার অভিযোগ সত্য নয়। জেলা পরিষদের একজন সদস্য তার এক প্রার্থীকে চাকরি দিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু আমরা নিয়ম মেনে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে চেয়েছিলাম। পরে তিনি নানা অভিযোগ তুলেছেন। পাশাপাশি সাংবাদিকরাও অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইছেন। সেজন্য নিয়োগ প্রক্রিয়া আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। 

আজিজুল সঞ্চয়/আরএআর