‘আর কত বুড়ি হইলে কার্ড পাইম?’
শতবর্ষী বৃদ্ধা জমিলা বেগম
শতবর্ষী বৃদ্ধা জমিলা বেগম। অনেক আগেই স্বামীকে হারিয়েছেন। বিধবা হওয়ার পর থেকে অসহায়ত্ব তাকে ভর করেছে। একাকিত্ব জীবন আর বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন জমিলা। হারিয়েছে ফেলেছেন দাঁড়ানোর শক্তিটুকু। লাঠিতে ভর দিয়ে চলাফেরা করেন। জীবনের পড়ন্তবেলায় একটু ভালোভাবে বেঁচে থাকার ইচ্ছা তার। কিন্তু উপায় নেই।
সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত জমিলা বয়সে ১০৪ বছরের বৃদ্ধা হলেও এখনো তার নাম ওঠেনি বয়স্ক ভাতার তালিকায়। অনেক চেষ্টা করেও বয়স্ক ভাতার একটি কার্ড হয়নি তার। নিদারুণ কষ্টে থাকা এই বৃদ্ধার এখন একটাই প্রশ্ন, আর কত বয়স হলে তিনি বয়স্ক নতুবা বিধবা ভাতার কার্ড পাবেন?
বিজ্ঞাপন
বিধবা জমিলা বেগমের বাড়ি রংপুরের পীরগাছা উপজেলায়। সেখানকার কল্যাণী ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৈয়ব গ্রামে বসবাস। স্বামী মৃত বাচ্চা মিয়া। দুই ছেলে আর এক মেয়ে সন্তানের জননী জমিলা বেগম। অনেক আগেই তার স্বামী মারা গেছেন। এক বছর আগে ছোট ছেলেও চলে গেছে না-ফেরার দেশে। এখন ৬০ বছর বয়সী তার একমাত্র বড় ছেলেই ভরসা। কিন্তু অভাব অনটনের সংসারে ষাটোর্ধ্ব ছেলে শতবর্ষী মায়ের ভরণপোষণের ঠিকমতো জোগান দিতে পারছেন না। অন্যের সাহায্য-সহযোগিতার ওপর নির্ভর হয়ে পড়েছেন জমিলা।
জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) অনুযায়ী জমিলা বেগমের জন্ম ১৯১৭ সালে। তবে স্থানীয় ব্যক্তিদের দাবি, জমিলার বয়স আরও বেশি হবে। এই বয়সেও জমিলার বয়স্ক বা বিধবা ভাতার কার্ড না হওয়ায় হতাশ গ্রামের লোকেরা। এর জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকে দুষছেন অনেকেই।
বিজ্ঞাপন
বৃদ্ধা জমিলা দাবি করেন, তিনি বয়স্ক ভাতার কার্ড পাননি। ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) গ্রাম্য চৌকিদার, ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেছেন। সবাই শুধু আশ্বাস দিয়েছেন, কিন্তু কেউ কথা রাখেননি। স্থানীয় ইউপি সদস্যকে বাড়িতে গিয়ে বয়স্ক ভাতার জন্য অনুরোধ করেছেন। সাবেক ইউপি সদস্যের কাছেও ধরনা দিয়েছেন। কারও কাছে গিয়ে কোনো লাভ হয়নি। কেউ তাকে বয়স্ক বা বিধবা ভাতার কার্ড করে দেননি।
কমবেশি যারা ভাতা পাওয়ার আবেদন করেছিলেন এবং ভাতা পাওয়ার জন্য বিবেচিত, তাদের তো কার্ড দেওয়া হয়েছে। তারপরও যদি কেউ বাদ পড়ে আমি চেষ্টা করব। কিন্তু বয়স হিসেবে তো জমিলার কার্ড পাওয়ার কথা। কেন হয়নি, তা খোঁজ নিতে হবে।
নূর আলম, চেয়ারম্যান, কল্যাণী ইউনিয়ন পরিষদ
আপেক্ষ আর হতাশা থেকে উল্টো প্রশ্ন ছুড়ে জমিলা বেগম জানতে চান, ‘আর কত বুড়ি হইলে মুই কার্ড পাইম? এই বয়সোত মাইনসের দুয়ারে দুয়ারে গেনু। তবুও মোর ভাগ্যোত একান কার্ড জুটিল ন্যা। এ্যালা (এখন) তো সবই শেখ সাহেবের বেটির (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) কাছে চাওয়া নাগবে। তায় ছাড়া তো হামার গরিবের কায়ো নাই।’
জমিলা বেগমের সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকা প্রসঙ্গে কল্যাণী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নূর আলম বলেন, আমার ইউনিয়নের ১৬টি গ্রামে প্রায় ৩০ হাজারের মতো লোকের বসবাস। এর মধ্যে তৈয়ব গ্রামে রয়েছে দুই থেকে আড়াই হাজারের বেশি মানুষ। আমাকে তো পুরো ইউনিয়নবাসীকে দেখতে হয়। কমবেশি যারা ভাতা পাওয়ার আবেদন করেছিলেন এবং ভাতা পাওয়ার জন্য বিবেচিত, তাদের তো কার্ড দেওয়া হয়েছে। তারপরও যদি কেউ বাদ পড়ে আমি চেষ্টা করব। কিন্তু বয়স হিসেবে তো জমিলার কার্ড পাওয়ার কথা। কেন হয়নি, তা খোঁজ নিতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পীরগাছা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. এনামুল হক জানান, জমিলা বেগমের জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী বয়স্ক ভাতা পাওয়ার কথা ছিল। কী জন্য তার বয়স্ক ভাতার কার্ড হয়নি, তা আমার জানা নেই। তবে আজ যখন জানলাম, আমি চেষ্টা করব যত দ্রুত সম্ভব জমিলার বয়স্ক ভাতার কার্ড যাতে হয়, সেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এনএ