কাজের সন্ধানে ছুটে চলছেন কায়েছ মিয়া

‘এহন আর আগের লাগান কাজকাম নাই। একটা সময় গেরামে-গঞ্জে লোহা ও ইস্পাতের তৈরি দা, বঁটি বেশি আছিল, তহন কাজকামও ছিল। রেডিমেট চায়না জিনিসপত্র বাজার দখল কইরা ফেলছে।’ এভাবেই বলছিলেন শাণওয়ালা কায়েছ মিয়া।

শাণওয়ালা! নামটি শুনলেই চোখে পড়ে কাঁধে একধরনের প্যাডেলচালিত বিশেষ যন্ত্র। নব্বই দশকের সময়ে গ্রামেগঞ্জে ইস্পাতের দা, বঁটি, চাকু, ছুরি ইত্যাদি শাণ দেওয়ার জন্য এই যন্ত্রের বেশ কদর ছিল। সেই সঙ্গে কদর ছিল শাণওয়ালাদেরও।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে লোহা ইস্পাতের তৈরি ধারালো অস্ত্র। কারণ, বাজার দখল করেছে চীন, কোরিয়া, থাইল্যান্ড ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানিক করা রেডিমেড ছুরি, চাকু, বঁটি। ফলে কদর কমেছে শাণওয়ালাদের। আগের তুলনায় আয়-রোজগার কমেছে প্রায় অর্ধেক।

কায়েছ মিয়ার দেশের বাড়ি সিলেট। পেশায় একজন শাণওয়ালা। তিনি নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনের আশপাশের গ্রামগুলোতে ঘুরে ঘুরে দা, বঁটি, পাটা ইত্যাদি শাণ দিয়ে থাকেন। যদিও এই পেশার নেই কোনো স্বীকৃতি। কিন্তু একটা সময় তাদের শাণ ব্যবসা ছিল চোখে পড়ার মতো।

কায়েছ মিয়াকে দিনের বেশির ভাগ সময় নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনের আশপাশে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। তবে সারাদিন সদরের আশপাশের মফস্বলে গিয়ে হাঁক ছাড়েন, ‘এই দা-বঁটি ধারাইবেননি! এ...ই দা-বঁটি...!’ সেখান থেকে এসে রেলওয়ে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মেই ঘুমিয়ে পড়েন। এভাবেই দিন কাটে কায়েছ মিয়ার।

শোঁ শোঁ শব্দ তুলে বঁটিতে শাণ দিচ্ছেন কায়েছ

ঢাকা পোস্টকে কায়েছ মিয়া বলেন, আমি ছোটকাল থেকেই এই কাজ করি। আমার বাপ, চাচা সবাই এই পেশার সঙ্গেই জড়িত ছিলেন। এখন আগের মতো কাজ নাই। দিনে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা ইনকাম হয়। কোনো দিন তা-ও হয় না। অন্য পেশায় জান না কেন, এমন প্রশ্নে বলেন, অন্যান্য কাজ শিখিনি বলে এই পেশাকে ছাড়তেও পারছি না। বাড়িতে মা আছে, বোন আছে। তাদের ঠিকমতো ভরণপোষণও করতে পারছি না।

বিলুপ্তপ্রায় এই পেশার মানুষদের এখন কাটছে দুঃসময়। তাদের নির্দিষ্ট থাকার জায়গাও নেই। তাই রাত কাটাতে হয় স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে। পরিবারের ভরণপোষণ দিতে না পারা কায়েছ মিয়াদের যেন দেখার কেউ নেই। তাই তাদের জীবনে আছে না বলা অনেক কষ্ট।

এনএ