শুষ্ক মৌসুমে গর্ত খুঁড়ে এভাবেই পানি সংগ্রহ করে চলে তাদের জীবন

ময়মনসিংহ জেলার সীমান্তঘেঁষা ধোবাউড়া ও হালুয়াঘাট উপজেলা। পানি সংগ্রহে এ দুই উপজেলার আদিবাসী ও বাঙালি পরিবারগুলোর দুর্ভোগ যেন নিত্যদিনের সঙ্গী। বছরের পর বছর বর্ষায় বৃষ্টির পানি আর শুষ্ক মৌসুমে গর্ত খুঁড়ে কর্দমাক্ত পানি সংগ্রহ করে চলে তাদের জীবনধারণ।

বর্তমানে অত্যাধুনিক টিউবওয়েল, গভীর নলকূপ, বিদ্যুৎচালিত মোটর ব্যবহার করে খাওয়ার পানি সংগ্রহ করলেও প্রত্যন্ত পাহাড়ি জনপদের বসবাসরত মানুষগুলো নিত্যনৈমিত্তিকভাবে দূষিত ও কর্দমাক্ত পানি ব্যবহার করছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ধোবাউড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী ১ নম্বর দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়নের দীঘলবাগ, ঘিলাগড়া গোবরচুনা গ্রামের শতাধিক পরিবার ও পার্শ্ববর্তী উপজেলার হালুয়াঘাটের ১ নম্বর গাজীরভিটা ইউনিয়নের ভুটিয়াপাড়া ও ডুমনিকুড়া এলাকার প্রায় ৫০টি পরিবার দৈনন্দিন সব কাজে ব্যবহার করছেন উত্তোলিত কুয়ার পানি। এলাকার পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কাছে এক কলস পানি যেন সোনার হরিণ।

পানি সংগ্রহের উৎপত্তিস্থল স্থানীয় নেতাই নদী বা বানাইজুরিসহ কখনো শাখা নদী থেকে। বর্ষায় ওই সব কুয়া পানিতে তলিয়ে গেলে দূরদূরান্ত থেকে যেসব স্থানে নলকূপ আছে, সেসব বাড়িতে গিয়ে পানি আনতে হয়। এদিকে চৈত্র-বৈশাখ মাসের খরার সময় পানিও অনেক কমে যায়। এক কলসি পানি সংগ্রহ করতে লেগে যায় কয়েক ঘণ্টা।

গর্ত থেকে পানি নিচ্ছেন এক নারী

ধোবাউড়া উপজেলার দীঘলবাগ গ্রামের হতদরিদ্র চেজিনা মান্দা ও রাসি রংদি আক্ষেপ করে বলেন, সারাজীবন পানির জন্য কষ্ট করলেও শেষ বয়সে এসে আর পারছি না। আর এ গভীর নলকূপ বসাতে যে খরচ হয়, তা আমাদের মতো হতদরিদ্র পরিবারের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। ফলে বাধ্য হয়েই ওই নদী থেকে ওঠানো কূপের পানি খেতে হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. ফজলুল হক ঢাকা পোস্টকে জানান, পাহাড়ি এলাকায় মাটির নিচে প্রচুর পরিমাণে পাথর থাকায় সেখানে কোনো টিউবওয়েল স্থাপন সম্ভব হয় না। কম লেয়ারের নলকূপের পানি লালচে থাকে আর পাহাড়ি ঝরনায় পানি স্বচ্ছ থাকায় সবাই তা ব্যবহার করে। একসময় আমরাও ব্যবহার করেছি। আর কিছু জায়গায় সরকারি নলকূপ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

একই ইউনিয়নের ঘিলাগড়া গ্রামের পূর্ণিমা মান্দিক জানান, মাটির নিচে পাথর থাকায় গভীর নলকূপ ছাড়া পানি ওঠানো সম্ভব নয়। গ্রামের বেশির ভাগ পরিবার গরিব ও দিনমজুর। গ্রামে কোনো উৎসব বা অনুষ্ঠান হলে পানির জন্য ঝামেলায় পড়তে হয়।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. সালাহ উদ্দিন ইউসুফ ঢাকা পোস্টকে বলেন, সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোয় বিগত সময়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় ২০টি রিংওয়েল স্থাপন করা হয়েছে। আপাতত রিংওয়েল আর দেওয়া হচ্ছে না। তবে আমরা চেষ্টা করব মেশিনের মাধ্যমে টিউবওয়েল স্থাপনের জন্য। সে ক্ষেত্রে ব্যর্থ হলে রিংওয়েল স্থাপন করা হবে।

অন্যদিকে হালুয়াঘাট উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান ঢাকা পোস্টকে জানান, এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। ভুক্তভোগীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আগামী বরাদ্দে এ বিষয়টি অগ্রাধিকার থাকবে।

এনএ