উষ্ণতায় খড়কুটো যাদের ভরসা
খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা
কয়েকদিন ধরে ঘন কুয়াশায় লালমনিরহাটে সূর্যের দেখা মিলছে না। সন্ধ্যার পর থেকে শীতের প্রকোপ বাড়তে থাকে। শীতবস্ত্রের অভাবে নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। অনেকেই খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। বিশেষ করে চরাঞ্চলের লোকজন ঠান্ডায় কাহিল হয়ে পড়েছেন।
সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকালে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার অডিটোরিয়াম হল রুমের পাশে চারদিকে গোল হয়ে বসেছেন কয়েকজন। এ সময় তারা বলেন, হঠাৎ করে এমন ঠাণ্ডা শুরু হইছে বাহে! আর বাঁচি না। শীতে বুঝি মানুষ আর বাঁচবে না। সরকারি কর্মকর্তারাও ক্যানবা এবার খবর নেয় না। তাই হামারা এ্যালা (এখন) খড়কুটো জ্বালে শরীর গরম করি।
বিজ্ঞাপন
ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা হিমালয়ের পাদদেশের জেলা লালমনিরহাট। এ জেলায় বরাবরই আগাম শীতের দেখা মিলে। প্রথম দিকে শীত এ জেলার মানুষকে তেমন কাবু না করতে পারলেও হঠাৎ এই শীতে কষ্ট ফেলেছে ছিন্নমূল মানুষদের।
প্রতিদিনই কুয়াশার ঘনত্ব বাড়ার পাশাপাশি যুক্ত হওয়া শৈত্যপ্রবাহ। ঠান্ডা বেড়েছে কয়েকগুণ। শ্রমজীবী মানুষ পেটের দায়ে তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশাকে উপেক্ষা করে কাজে নেমে পড়েছেন।
বিজ্ঞাপন
চরাঞ্চলের আবু বক্কর মিয়া বলেন, চরাঞ্চলের মানুষের দিকে কেউ এখন তাকায় না। প্রচণ্ড এই শীতে ঘরের ভেতরে যেন ঠান্ডায় থাকা দায়। বাইরেও হাড় কাঁপুনি শীত। তাই কয়েকজনকে নিয়ে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছি। সরকারি কর্মকর্তারা যদি শীতের কাপড় দিত তাহলে আমাদের চরাঞ্চলের মানুষের কষ্ট থাকত না।
পাটগ্রাম শহরের মজিবন নেছা বলেন, পৌর নিবার্চন নিয়ে জনপ্রতিনিধিরা চরম ব্যস্ত। গরিব-দুঃখী মানুষের আর খেয়াল রাখছে না। তাদের আচার-আচরণ এমন আমরা বুঝি ভোটারই নই। ভোট চাওয়ার সময় কত আশা আশ্বাস দেন। ভোটের শেষে তাদের দেখা পাওয়া মুশকিল।
ভেলাগুড়ি সীমান্তের ৭০ বছরের বৃদ্ধ রমজান আলী বলেন, এই বুড়ো বয়সে আর জীবন চলে না। ছেলেরা ঢাকায় শ্রমিকের কাজ করে। তারা তাদের সংসার নিয়ে ব্যস্ত। ছেলেরা কষ্টে থাকে তাই তাদের শীতের কাপড়ের কথা বলি না। মেম্বারের কাছে কয়েকবার একটি কম্বল চেয়েও পাইনি।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, রোববার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল কুড়িগ্রামে ৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু আজ সকাল থেকে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে ৩ তারিখের আগে আবারও শীত বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
লালমনিরহাট সিভিল সার্জন ডা. নিমর্লেন্দু রায় বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে শিশু ও বয়স্কদের শীতজনিত রোগ বাড়ছে। তবে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশু। আমাদের ডাক্তার ও নার্স তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। হাসপাতালে পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ রয়েছে।
লালমনিরহাটের জেলা প্রসাশক আবু জাফর ঢাকা পোস্টকে বলেন, জেলার পাঁচটি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কেউ যেন এই শীতে কষ্টে না থাকে। গভীর রাতেও ছিন্নমূল মানুষের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে শীতবস্ত্র। পর্যাপ্ত পরিমাণে শীতবস্ত্র আমাদের হাতে রয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শীতবস্ত্র বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
নিয়াজ আহমেদ সিপন/এসপি