চাঁপাইনবাবগঞ্জে নির্বাচনে হেরে বিজয়ী প্রার্থীর বাড়িতে হামলায় বাধা দেওয়ায় পুলিশের ওপর হামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি) বিকেলে সদর উপজেলার ঝিলিম ইউনিয়নের হোসেনডাঙ্গা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। 

এ ঘটনায় অন্তত ৫ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে তিনজনকে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। 

পুলিশের ওপর হামলার পর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নবাবগঞ্জ সার্কেল) আতিউর রহমানের নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশ উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় রাত ১০টা পর্যন্ত ১৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ। বাকিদের আটকে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ ঘটনায় হোসেনডাঙ্গা গ্রামে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। তবে এ ঘটনায় পুলিশ সদস্য ছাড়া কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। ঘটনার পর পরাজিত প্রার্থী মনিরুল ইসলাম মনি ও আব্দুল কুদ্দুস সেরাতাল পলাতক রয়েছে।

পুলিশ, হাসপাতাল ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বুধবার (৫ জানুয়ারি) ভোটে ঝিলিম ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডে টিউবওয়েল প্রতীকে ৫৫৯ ভোট পেয়ে ইউপি সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন শরিয়ত আলী। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান ইউপি সদস্য মোরগ প্রতীকে ৫৪৫ ভোট পেয়েছেন মনিরুল ইসলাম মনি। এ ছাড়াও তালা প্রতীকে আব্দুল কুদ্দুস সেরাতাল ৫১৯ ভোট পেয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। এ ছাড়াও আনারুল ইসলাম আপেল প্রতীকে ৩০০ ভোট, আনু বাক্কার ফুটবল প্রতীকে ২৪০ ভোট ও সাদিকুল ইসলাম ফ্যান প্রতীকে পেয়েছেন ৪১ ভোট।

নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী মনিরুল ইসলাম মনি ও আব্দুল কুদ্দুস সেরাতাল এবং তাদের লোকজন বিজয়ী প্রার্থীর বাড়িতে হামলা করার পরিকল্পনা করে। শতাধিক লোকজন লাঠিসোটা নিয়ে বিজয়ী প্রার্থীর বাড়ির দিকে এগিয়ে আসে। শরিয়তের বাড়িতে যাওয়ার আগেই হোসেনডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে গেলে পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে হামলা করে তারা। 

নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য শরীয়ত আলী জানান, নির্বাচনে পরাজিত হয়ে আমার বাড়িতে হামলা করবে জানতে পেরে জরুরি সহায়তা সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিলে পুলিশ উপস্থিত হয়। এ সময় তারা পুলিশের উপর হামলা করে। পুলিশের একটি মোটরসাইকেল ভেঙে ফেলে তারা। নিজের জীবনের নিরাপত্তাও হুমকিতে রয়েছে বলে জানান তিনি।  

এ ঘটনায় অন্তত ৫ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়। তিনজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। জেলা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. সায়েদা সুলতানা মুঠোফোনে ঢাকা পোস্টকে জানান, তিনজন পুলিশ সদস্যকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে দুইজনের অবস্থা খুবই গুরুতর হওয়ায় বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেওয়া হয়েছে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহবুব আলম খান মুঠোফোনে ঢাকা পোস্টকে বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে পুলিশ। বাকি হামলাকারীদের আটক করতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে পুলিশ। 

প্রসঙ্গত, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে ৬৬ জন, ইউপি সদস্য পদে ৫৪৯ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য পদে ১৭৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। মোট ভোটার ২ লাখ ৬৭ হাজার ৪৩৫ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৩৫ হাজার ২৪১ জন ও নারী ভোটার ১ লাখ ৩২ হাজার ১৯৪ জন। ১৪ ইউনিয়নের মোট ভোটকেন্দ্র ১৩৪টি। 

মো. জাহাঙ্গীর আলম/আরআই