আকারে ছোট ও গোলাকার কমলা বারি-২। বছর দুই-তিনেক আগে খাগড়াছড়ি পাহাড়ি কৃষি গবেষণায় এই জাতের কমলা উদ্ভাবন করা হয়। তবে চায়নিজ ছোট জাতের এই কমলা পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাড়াও সিলেটের পাহাড়ি অঞ্চলে চাষাবাদের উপযোগী। এই কমলাগাছে ঝুলে থাকে গাঢ় হলুদ রঙের কমলা। ঝোপালাগাছে পাতার চেয়ে ফল বেশি হয়।

কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, নিয়মিত ফলদানকারী উচ্চ ফলনশীল চায়নিজ জাতের এই কমলা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষাবাদ করা গেলে পাহাড়ে কৃষিজ অর্থনীতি আরও সমৃদ্ধ হতে পারে বলে।

বারি-২ কমলা বর্তমানে দেশে বেশ জনপ্রিয় একটি ফল। কেবল খেতেই সুস্বাদু নয়, এটি দেখতেও বেশ সুন্দর। বারি-২-এর মিষ্টতার পরিমাণ প্রায় ৯ শতাংশ। খাগড়াছড়ি পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের মাতৃবাগানে গেলে এমন কমলার দৃশ্য চোখে পড়ে।

তবে কমলা জাতীয় ফলের গাছের ডাম্পিং, গ্রিনিং, গামোসিস রোগের সংক্রমণ বেশি। আক্রান্ত ফল সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে বা মাটির গভীরে পুঁতে ফেলতে হবে। ফল পাকার সঙ্গে সঙ্গে ফল সংগ্রহ করতে হবে। এ ছাড়া বাগানে ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করে বাগানের পোকা দমন করা যায়।

কমলাগাছে ঝুলছে কমলা

খাগড়াছড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের সূত্রে জানা যায়, পাহাড়ি কৃষি গবেষণার মাতৃবাগানে বারি কমলা-২ বা চায়নিজ কমলাগাছ রোপণ করা হয়। বৈশাখ অর্থাৎ মে-জুন হলো রোপণের সময়। তবে পাহাড়ে নিয়মিত সেচের ব্যবস্থা করা গেলে বছরের অন্য সময়ও এই জাতের কমলার চারা রোপণ করা যায়। রোপণের তিন থেকে চার বছরের মধ্যে ফলন পাওয়া যায়। সঠিকভাবে যত্ন ও পরিচর্যা করলে প্রতিটি গাছ থেকে কমপক্ষে ৫০০ থেকে ৬০০টি কমলা পাওয়া সম্ভব।

মাতৃবাগানে পরিচর্যা করা মংসানই মারমা জানান, বারি-২ জাতের কমলাগাছের সেবা করতে হয় খুব যত্নসহকারে। যত বেশি পরিচর্যা করা যায়, তত বেশি ফল উৎপাদন করা সম্ভব। গাছগুলোতে নিয়ম অনুযায়ী ওষুধ প্রয়োগ করে পোকামুক্ত রাখতে হয়। সঠিকভাবে যত্ন নিলে এই কমলা খুব রসালো ও সুস্বাদু হয়।

এ ব্যাপারে খাগড়াছড়ি পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুন্সী রাশীদ আহমদ ঢাকা পোস্টকে জানান, খাগড়াছড়ি পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র প্রথম বারি-২ জাতের কমলা উদ্ভাবন করে। বর্তমানে এই কমলা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। ইতিমধ্যে দেশের বেশ কয়েকটি জায়গায় বারি-২ কমলার চাষাবাদ হচ্ছে। ভবিষ্যতে কৃষকদের বারি-২ কমলার চাষ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে পারলে অত্যন্ত লাভজনক ফল ফসল হিসেবে পরিচিতি পাবে। বারি-২ কমলা একটি সৌন্দর্যবর্ধনকারী গাছ হিসেবেও বাড়ির আঙিনায় এবং ছাদেও কমলার চাষাবাদ করা যায়।

এনএ