যশোরের অভয়নগরের সুন্দলী ইউনিয়নের নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য উত্তম সরকারকে কথিত ‘নিউ বিপ্লবী কমিউনিস্ট’ পার্টির সদস্যরা হত্যা করেছে বলে প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। চাঁদার টাকা না পেয়ে ১০ জানুয়ারি রাতে স্থানীয় হরিশংকরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। 

গত দুই দিন অভিযান চালিয়ে জড়িত ৫ জনকে গ্রেফতারের পর রোববার (১৬ জানুয়ারি) দুপুরে প্রেস ব্রিফিং করে হত্যার রহস্য ও গ্রেফতার বিষয়ে তথ্য দিয়েছে পুলিশ।

গ্রেফতাররা হলেন- খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার রুদাঘরা গ্রামের ইসাহাক গোলদারের ছেলে ইকরামুল গোলদার, একই উপজেলার দিঘলিয়া গ্রামের মৃত বিষ্ণুপদ মণ্ডলের ছেলে বিজন কুমার মণ্ডল ওরফে বিনোদ, চুকনগর এলাকার ভাড়াটিয়া সাতক্ষীরার শ্যামনগরের দক্ষিণ কদমতলা গ্রামের মৃত শিব পদ মণ্ডলের ছেলে প্রশান্ত মণ্ডল, যশোরের অভয়নগরের সুন্দলী গ্রামের মৃত নিতাই বিশ্বাসের ছেলে প্রজিৎ বিশ্বাস ওরফে বুলেট ও মণিরামপুুরের সুজাতপুর গ্রামের পরিতোষ বিশ্বাসের ছেলে পল্লব বিশ্বাস।
 
তাদের কাছ থেকে একটি ওয়ান শুটারগান, একটি এয়ারগান, তিন রাউন্ড গুলি, দুটি গুলির খোসা, ছয় রাউন্ড ১২ বোর কার্তুজ, একটি লোহার রড, একটি ককটেল, ১০ গ্রাম বোমা তৈরির পাউডার (গান পাউডার), ৫০ গ্রাম বোমা তৈরির তারকাঁটা, পাঁচটি মোবাইল ফোন ও দুটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করেছে পুলিশ।

যশোর ডিবি’র অফিসার ইনচার্জ রুপন কুমার সরকার জানান, আসামিরা কথিত ‘নিউ বিপ্লবী কমিউনিস্ট’ পার্টির সক্রিয় সদস্য। দলীয় ছদ্মনাম ব্যবহার করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলায় অবৈধ অস্ত্র, বিস্ফোরকদ্রব্য ইত্যাদি ব্যবহার করে হত্যা, চাঁদাবাজি করে আসছে। ইতোপূর্বে আত্মসমর্পণ করে পুনরায় তারা সংঘবদ্ধ হয়ে যশোরের অভয়নগর, মণিরামপুর, কেশবপুরসহ আশপাশের জেলায় মাছের ঘের দখল, চাঁদাবাজি ও হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে। 

গত ১০ জানুয়ারি অভয়নগরের হরিশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে নব নির্বাচিত ইউপি সদস্য উত্তম সরকারের নিকট চাঁদার টাকা না পেয়ে তাকে গুলি করে হত্যা করে। এ ঘটনায় পরদিন অভয়নগর থানায় মামলা হলে পুলিশ সুপারের নির্দেশে তদন্তে নামে জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশ।

প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, হত্যার পর জড়িতরা বিভিন্ন জনের কাছে চাঁদা চাওয়ার সময় উত্তম সরকারকে খুন করার রেফারেন্স টেনে মোবাইলে ভয় দেখায়। ডিবি পুলিশ পরিদর্শক শেখ শাহিনুর রহমানের নেতৃত্বে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শামীম হোসেন ও মফিজুল ইসলামের সমন্বয়ে একটি চৌকশ টিম ১৫ থেকে ১৬ জানুয়ারি ভোর পর্যন্ত খুলনার ডুমুরিয়া থানার বিভিন্ন এলাকা, যশোরের অভয়নগর, মণিরামপুর ও কেশবপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ইকরামুল গোলদার, প্রজিৎ বিশ্বাস, প্রল্লব বিশ্বাস, প্রশান্ত মণ্ডল ও বিজন কুমার মণ্ডলসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করে। 

এর মধ্যে বিজন ও প্রশান্ত সরকারের আহবানে ইতোপূর্বে আত্মসমর্পণ করেছিল। তাদের কাছ থেকে হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র-গুলি, বিস্ফোরকদ্রব্য, মোবাইল ও মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় এসআই শামীম হোসেন বাদী হয়ে অভয়নগর ও মণিরামপুর থানায় পৃথক দুটি মামলা করেছেন। এর আগেও আসামিদের বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা ও চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে। 

জাহিদ হাসান/আরআই