নির্মাণের সময় দুবার ভেঙে পড়ল আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর
ঘরের পাশে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন উর্মিলা রানী- ছবি: ঢাকা পোস্ট
বরগুনার তালতলী উপজেলায় নির্মাণের সময় ভেঙে পড়েছে একটি হতদরিদ্র বৃদ্ধাকে দেওয়া সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের ১২ দিনের মাথায় বুধবার তালতলী উপজেলার বেহেলা গ্রামের স্বামী পরিত্যক্তা উর্মিলা রানীর (৭১) ঘরের দেয়াল ভেঙে পড়ে।
এর আগে সোমবার তার ঘরের দেয়াল ভেঙে পড়েছিল। নির্মাণের সময় দুবার ঘরের দেয়াল ভেঙে পড়ায় আতঙ্কে রয়েছেন উর্মিলা রানী।
বিজ্ঞাপন
খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও তালতলী উপজেলায় অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান।
স্থানীয় সূত্র জানায়, তালতলী উপজেলার কড়ইবাড়িয়া ইউনিয়নের বেহেলা গ্রামের স্বামী পরিত্যক্তা উর্মিলা রানী প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর আওতায় একটি ঘর উপহার পান। যা গত ২৩ জানুয়ারি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন।
বিজ্ঞাপন
২৯ জানুয়ারি উর্মিলা রানীর ঘরের নির্মাণকাজ শুরু করেন ঠিকাদার। নির্মাণের সময় দুবার ঘরের দেয়াল ভেঙে পড়ে। বুধবার সকালে দেয়াল ভেঙে পড়লে অল্পের জন্য বেঁচে যান উর্মিলা। এর আগে সোমবার একইভাবে তার ঘরের দেয়াল ভেঙে পড়েছিল।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর আওতায় যার জমি আছে ঘর নেই, তার জমিতে গৃহনির্মাণ করে দেওয়ার জন্য তালতলী উপজেলায় ১ কোটি ৭১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
প্রকল্পের আওতায় উপজেলার সাত ইউনিয়নে ১০০ গৃহনির্মাণ করা হয়। গৃহনির্মাণ বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান।
প্রকল্প তদারকির দায়িত্বে তালতলী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রুনু বেগমের নাম থাকলেও তার পরিবর্তে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মফিজুল ইসলাম তদারকি করছেন।
ঘর পাওয়া একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেছেন, নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে এসব ঘর নির্মাণ করেছেন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মফিজুল ইসলাম। এজন্য বার বার ভেঙে পড়ছে ঘর।
নির্মাণকাজ শুরুর দুদিনের মাথায় ঘরের এক পাশের দেয়াল ভেঙে পড়ে যায়। পরে ইউএনও এসে নতুন করে ঘর নির্মাণের নির্দেশ দেন। নতুন করে আবার ঘর নির্মাণ শুরু করেন ঠিকাদার। বুধবার আবার দেয়াল ভেঙে পড়ে। এদিন অল্পের জন্য বেঁচে গেলাম। অথচ এই ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার কথা বলে আমার কাছ থেকে নয় হাজার টাকা নিয়েছেন ঠিকাদার।
উর্মিলা রানী, সরকারি ঘর পাওয়া তালতলী উপজেলার বেহেলা গ্রামের বাসিন্দা
তালতলী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রুনু বেগম বলেন, উপজেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর আওতায় নির্মিত ঘরগুলোর তদারকি আমি করিনি। স্থানীয় এক ঠিকাদারের মাধ্যমে নির্মাণ করিয়েছেন ইউএনও। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কাজের তদারকি করেন।
তবে আমতলী উপজেলায় গৃহনির্মাণ ও তদারকির কথা অস্বীকার করেছেন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মফিজুল ইসলাম।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, উপজেলায় প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘরগুলোর মধ্য থেকে উর্মিলা রানীকে ঘর দেওয়া হয়। তার ঘরের দেয়াল ভাঙার সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ঠিকাদারকে দ্রুত ভেঙে পড়া ঘরের দেয়ালের মালামাল সরিয়ে নতুন করে টেকসই ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। উর্মিলা রানীর কাছ থেকে নেওয়া নয় হাজার টাকা ঠিকাদারকে ফেরত দিতে বলেছি। টেকসই করে ঘর বানিয়ে দেবেন ঠিকাদার।
সাইফুল ইসলাম মিরাজ/এএম