‘আমার আব্বুকে ওরা কোথায় নিয়ে গেল’ বলেই বুক চাপড়ে কাঁদছিল আর বার বার মূর্ছা যাচ্ছিল শিশু (১০) দেবশীল। এ সময় স্বজনরা কেউ তার মাথায় পানি ঢালছিলেন। কেউ হাত-পা ম্যাসেজ করে গরম করার চেষ্টা করছিলেন। চেতনা ফিরতেই আবারো আব্বু আব্বু বলে কেঁদে উঠছিল শিশুটি। সে নিহত অনুপমের ছোট ছেলে।

তার বুক ভাঙা কান্না দেখে চেনা-অচেনা অনেকেই কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে বুকে টেনে নিলেও তাকে সান্ত্বনা দেবার মতো ভাষা ছিল না কারোই। বরং তার কান্না দেখে অঝোরে কেঁদেছেন আশেপাশে উপস্থিত সবাই।

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বাবা ও ৪ চাচাকে সাদা পোশাকে শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্যটা কিছুতেই সহ্য করতে পারছিল না দেবশীল। 

গতকাল মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) ছিল দেবশীলের দাদার শুদ্ধি স্নান। পর দিন হওয়ার কথা ক্রিয়া অনুষ্ঠান। কিন্তু শুদ্ধি স্নানের দিনেই দাদার শ্মশান থেকে ফেরার পথে পিকআপ (ডাম্পার) কেড়ে নিল দেবশীলের বাবা ও চার চাচার প্রাণ। সঙ্গে ছিল আরো ২ ছেলে ও ১ মেয়ে। তারাও আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

দেবশীলের মা পূজাশীল জানান, আমাদের কে দেখবে? আমাদের তো আর কেউ রইল না। সবকিছু মিনিটেই শেষ। ভগবান ছাড়া আমাদের আর কেউ নেই। 

নিহত ৫ সন্তানের জননী মিনু রাণী বলেন ‘মা হয়বো হনে, মা বুলাইব কে?’ আমার জাদুগোরে আমার কাছে আনি দেন’ বলেই আর্তনাদ করছেন। ছেলেদের ছবি নিয়ে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছেন মিনু রাণী। 

এদিকে, বেলা ১১টার দিকে পাঁচ ভাই নিহতের বাড়িতে যান কক্সবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য এমপি জাফর। এ সময় নিহতদের মাগফিরাত কামনা করে তিনি বলেন, কক্সবাজারের ইতিহাসে এ রকম মর্মান্তিক ঘটনা কখনো ঘটেনি। এটাই প্রথম। এটার জন্য অদক্ষ চালকদের দায়ী করেন তিনি। 

এমপি জাফর আরো বলেন, নিহতদের পরিবারের সব সদস্যদের দায়িত্ব আমি নেব। তাদের মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনার কথা প্রধানমন্ত্রীকে জানাব। তাদের পুনর্বাসনসহ সব দায়িত্ব আমি নিলাম।

এমএএস