রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাসে। সম্প্রতি এই অভিযোগ করে দেশটির শিনশিন গ্লোবাল কোম্পানি লিমিটেড। শিনশিন গ্লোবাল কোম্পানি বলছে, অগ্নিনির্বাপণ ট্রাক সরবরাহের নামে তাদের সঙ্গে ১০ দশমিক ১২ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি করে রাসিক।

তবে ওই চুক্তি ভুয়া বলে দাবি করেছেন রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে এ নিয়ে নগর ভবনের সিটি হল সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেন মেয়র। সংবাদ সম্মেলনে মেয়র লিটন পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, একটি প্রতারক চক্র তার নামে জাল নথিপত্র তৈরি করে ওই কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছে।

মেয়র জানান, প্রতারক চক্রটি জাল নথিপত্র দিয়ে ৮টি ফায়ার ট্রাক কেনার জন্য কোরিয়ার শিনশিন গ্লোবাল কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে ১০ দশমিক ১২ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি করে। ট্রাক সরবরাহের কাজ পেতে কোম্পানিটি ফিলিপাইন ও যুক্তরাজ্যের দুটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৭৮ হাজার ৮৯৩ ডলার পাঠিয়েছে যা প্রতারকদের হাতে গেছে।

তিনি বলেন, অগ্নিনির্বাপণ রাসিকের সেবার মধ্যে পড়ে না। এর জন্য পূর্ণাঙ্গ একটি সরকারি সংস্থা আছে। স্বভাবতই রাসিক ফায়ার ফাইটিং ট্রাক কেনার প্রশ্নই আসে না। বিষয়টি অপ্রাসঙ্গিক ও অযৌক্তিক।

মেয়র লিটন বলেন, দক্ষিণ কোরিয়ার কোম্পানিটি তৃতীয় কোনো পক্ষের দ্বারা প্রতারিত হয়েছে নাকি কোম্পানিটির প্রেসিডেন্ট বায়ং চেয়ল শিন ও তার সহযোগীরা নিজেরাই ভুয়া নথিপত্র তৈরি করে রাসিককে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে তা তদন্ত করে জানা যাবে। এ ব্যাপারে বোয়ালিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। বিষয়টি পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিটসহ সরকারের উচ্চপর্যায়ে জানানো হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। 

মেয়র জানান, শিনশিন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে রাজশাহীতে ১০০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের আগ্রহ দেখিয়ে সিটি করপোরেশনের মেয়র বরাবর চিঠি দিয়েছিল। এর প্রেক্ষিতে কোম্পানিটির প্রেসিডেন্ট বায়ং চেয়ল শিন রাজশাহীতে এসেছিলেন। একাধিক আলোচনার পর রাসিক সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে অনাগ্রহ দেখায়। সেখানেই বিষয়টির পরিসমাপ্তি হয়।

এর প্রায় তিন বছর পর ২০২১ সালের ১ ডিসেম্বর বায়ং চেয়ল শিন টেলিফোন করে রাসিকের ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাডভাইজার মো. আশরাফুল হকের কাছে ফায়ার ফাইটিং ট্রাক সরবরাহের ব্যাপারে জানতে চান। কোনো ট্রাক কেনার ব্যাপারে তথ্য না থাকার কথা জানানো হলে তিনি ইমেইলে আটটি ফায়ার ফাইটিং ট্রাক কেনার ভুয়া ডকুমেন্ট ইমেইলে পাঠান।

সেটি যাচাই করে দেখা যায়, ফায়ার ফাইটিং ট্রাক ক্রয় নিয়ে যাবতীয় যোগাযোগ একটি ভুয়া ইমেইল ঠিকানা থেকে করা হয়েছে, যার সঙ্গে মেয়রের ইমেইল ঠিকানার মিল থাকলেও এক নয়। এছাড়া মেয়রের ভুয়া ফোন নম্বর, অস্তিত্ববিহীন কর্মকর্তাদের নাম ও পদবি এবং মেয়রের পাসপোর্ট জালিয়াতি করা হয়েছে বলেও অভিযোগ তোলেন সিটি মেয়র।

জালিয়াতি চক্রের সঙ্গে কোম্পানিটির যোগাযোগ থেকে জানা যায়। ১০ দশমিক ১২ মিলিয়ন ডলারের ওই কাজ পেতে ফিলিপাইনে একটি ব্যাংক হিসাবে ৩০ হাজার ডলার ও যুক্তরাজ্যে একটি ব্যাংক হিসাবে ৪৮ হাজার ৮৯৩ ডলার পাঠাতে বলা হয়। সিটি করপোরেশনে পাঠানো চিঠিতে কোম্পানিটি বলেছে যে, তারা ওই অর্থ পাঠিয়েছে।

মেয়র বলেন, রাসিক ও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে একটি আন্তর্জাতিক চক্র এই কাজ করেছে। কোম্পানিটি আমার বিরুদ্ধে সিউলে বাংলাদেশ দূতাবাসে অভিযোগ করায় আমি বিব্রত।

সংবাদ সম্মেলনে রাসিকের প্যানেল মেয়র-১ সরিফুল ইসলাম বাবু, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এবিএম শরীফ উদ্দিন, সচিব মো. মশিউর রহমান, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাডভাইজার মো. আশরাফুল হক, এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ ইমরানুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ফেরদৌস সিদ্দিকী/আরএআর