মো. আইয়ুব খান চৌধুরী

পেট্রোবাংলার পরিচালক ও কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আইয়ুব খান চৌধুরী এবং তার ছেলে মো. আশিকুল্লাহ চৌধুরীর যাবতীয় ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করতে চিঠি দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি দেশের সব তফসিলি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর এই চিঠি পাঠানো হয়েছে এনবিআর-এর সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট থেকে। চিঠিতে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করে এ সংক্রান্ত পরিপালন প্রতিবেদন জরুরি ভিত্তিতে জানাতে বলা হয়েছে।

আজ (মঙ্গলবার) এনবিআর ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। 

সূত্র জানায়, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আইয়ুব খান চৌধুরীর বিরুদ্ধে নিয়োগ দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অনেকগুলো অভিযোগ অনুসন্ধান পর্যায়ে আছে। এমন প্রেক্ষাপটে তিনি দুদকের উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনকে প্রাণে মেলে ফেলার হুমকি দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। 

এ বিষয়ে গত ৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রামের খুলশী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন শরীফ উদ্দিন। জিডিতে বলা হয়, শরীফের স্ত্রী ও দুই সন্তান দীর্ঘদিন চট্টগ্রামের খুলশী থানা এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন। তিনি কর্মসূত্রে পটুয়াখালীতে থাকেন। তিনদিনের ছুটিতে চট্টগ্রামে এলে ৩০ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৭টার দিকে এক লোককে নিয়ে তার বাসার নিচে আসেন আইয়ুব খান। সঙ্গের জন নিজেকে এলজিইডির লোক বলে পরিচয় দেন। দারোয়ানের উপস্থিতিতে তারা শরীফকে হুমকি দিয়ে বলেন, আইয়ুবের বিরুদ্ধে কেন নিউজ করাচ্ছি? এক পর্যায়ে তারা ফোন দিয়ে বাইরে থেকে লোকবল ডাকেন। শরীফ ও তার পরিবারকে এ সময় প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেন। জিডির সঙ্গে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংযুক্ত করা হয়েছে।

হুমকি-ধমকির এই ঘটনার পরে দুদকের চাকরি থেকে অপসারণ করা হয় শরীফকে। এসব নানা ঘটনা ও অভিযোগের কারণে আউয়ুব খান চৌধুরী এখন আলোচিত নাম।

দুদক সূত্রে জানা যায়, পেট্রোবাংলার অধীন কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) নিয়োগ জালিয়াতি ও পদোন্নতির অভিযোগ সংশ্লিষ্ট একটি অনুসন্ধান দুদকে চলমান রয়েছে। ওই অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে ২২ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের একটি দৈনিক পত্রিকায় কর্ণফুলী গ্যাসের ৩৭ ভুয়া কর্মকর্তাকে রাতের আঁধারে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে তথ্য প্রকাশ করে প্রতিবেদন ছাপা হয়। তাতে উল্লেখ করা হয়, নিয়োগ পরীক্ষায় ৩৭ কর্মকর্তা ফেল করেন। এদের অনেকের শিক্ষাগত যোগ্যতাও ছিল না। তবু ১০ বছর আগে ৩৭ জন লোক ‘নিয়োগ’ পেয়েছিলেন সহকারী ব্যবস্থাপক পদে। জালিয়াতি ধামাচাপা দিতে তাদের কোনো নথিপত্র সংরক্ষণ করা হয়নি। এদের নিয়োগ পরীক্ষার কোনো নথি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার খাতার কিছুই পাওয়া যায়নি। কারো কারো সনদও জাল। কেউ কেউ পাসের আগে পাস দেখিয়ে সার্টিফিকেট জমা দিয়েছেন নিয়োগের সময়। এমনকি নজিরবিহীন কাণ্ডে নিয়োগ পাওয়া সেই কথিত ‘কর্মকর্তারা’ গত ১০ বছরে পদোন্নতিও বাগিয়ে নিয়েছেন। অভিযোগের তীর কর্ণফুলী গ্যাসের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আইয়ুব খান চৌধুরীসহ একটি সিন্ডিকেটের দিকে। তাদের বিরুদ্ধে অর্ধডজন মামলার সুপারিশ দিয়েছিলেন অনুসন্ধান কর্মকর্তা এবং চট্টগ্রাম-২ এর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সাবেক উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন। যা এখনো কমিশনে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানা গেছে।

সূত্র আরও জানায়, ২০১৪ সালের ১ অক্টোবর কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির এমডি হিসেবে নিয়োগ পান আইয়ুব খান চৌধুরী। সেখানে তার দুই ছেলেকে নিয়োগ দিতে দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। বড় ছেলে আশিকুল্লাহ চৌধুরীকে নিয়োগ দিতে বোর্ডের সিদ্ধান্তকে বাইপাস করেন আইয়ুব। বোর্ডে সিদ্ধান্ত ছিল বুয়েটের মাধ্যমে পরীক্ষা নেওয়া। কিন্তু তা না করে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য পেট্রোবাংলার মাধ্যমে পরীক্ষা নেন বিধিবহির্ভূতভাবে। উপ-ব্যবস্থাপক (কারিগরি) পদের জন্য পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা বাধ্যতামূলক হলেও জব্দ করা আশিকুল্লাহ চৌধুরীর ব্যক্তিগত নথিতে অভিজ্ঞতার সনদ খুঁজে পায়নি দুদক। এমনকি দুদকের জিজ্ঞাসাবাদেও অভিজ্ঞতার সনদ দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন। আইয়ুব তার ছোট ছেলে মহিউদ্দিন চৌধুরীকে কেজিডিসিতে নিয়োগ দিতেও নানান অনিয়মের আশ্রয় নেন। দুদকের অনুসন্ধানে দুই ছেলের পদোন্নতি নিশ্চিত করার জন্য একজনকে টার্মিনেট করা এবং নিয়োগ প্রক্রিয়া ঝুলিয়ে রাখা, জনবল কাঠামো লঙ্ঘন করার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া অবৈধ সংযোগ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে আইয়ুব খান চৌধুরীর বিরুদ্ধে।

আরএম/এসআই/এইচকে