চৈত্রের গরমে শুরু হয়েছে রমজান মাস। কাঠফাটা রোদের তাপ আর গরমে সারাদিন পানাহার থেকে বিরত থাকার পর এক গ্লাস লেবুর শরবত চান সব রোজাদারই। সেই চাহিদাই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। রোজায় ইফতারের নিত্য অনুষঙ্গ লেবুর দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। সাধারণ সময়ে প্রতি পিস ৫-৬ টাকায় বিক্রি হলেও যে লেবু এখন প্রকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ১০-২০ টাকায়। রোজার শুরুতে লাগামহীন লেবু এখনো বিক্রি হচ্ছে আগের দামে।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা দেখা গেছে, ভিন্ন ভিন্ন দামে বিক্রি হচ্ছে লেবু। স্বাভাবিক আকারের প্রতিহালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা থেকে ৫০ টাকায়। রোজার এক সপ্তাহ আগেও এই লেবুর হালি বিক্রি হয়েছে ২০ থেকে ২৪ টাকায়। বড় আকারের লেবুর হালি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। এই লেবু আগে হালি বিক্রি হতো ৪০ টাকায়। এছাড়া পুরোপুরি পরিপক্ব হয়নি এমন ছোট আকারের লেবুও বিক্রি হচ্ছে বাজারে। দাম নিচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকা হালি।
     
মতিঝিলের দিলকুশায় বড় আকারের এক হালি লেবুর দাম বিক্রেতা চাইছেন ৮০ টাকা। ৭০ টাকা বলে দর কষাকষি করছেন সাজ্জাদ নামের এক ক্রেতা। বেশি দামে কেনা বলে কিছুতেই দাম ছাড়লেন না, বাধ্য হয়ে ৮০ টাকাতেই কিনলেন এক হালি লেবু। সাজ্জাদ বলেন, সারাদিন রোজা রাখার পর লেবুর শরবত দিয়ে ইফতার শুরু করি। কিন্তু প্রথম রোজা থেকেই দাম বেশি। গত রোববার দুটি লেবু কিনেছিলাম ৪০ টাকা দিয়ে। তিন দিন পরও দাম কমেনি। এই সাইজের লেবু আগে এক হালি পাওয়া যেত ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। এখন দাম দ্বিগুণ।    

মতিঝিল এলাকার লেবু বিক্রেতা জাকির জানান, রোজার কয়েকদিন আগে থেকে লেবুর বাজার চড়া। প্রথম রোজায় লেবুর দাম এক লাফে দ্বিগুণ উঠেছে, তা এখনো কমেনি। বড় লেবু একদাম ৮০ টাকা হালি। আর কাগজি লেবু বিক্রি করছি ৪০ টাকা হালি, গোল লেবু ৫০ টাকা। রোজার আগে এটি ২০ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হতো বলে তিনি জানান।

এদিকে খিলগাঁও, রামপুরা ও মুগদা এলাকায় ভ্যানে প্রতিহালি ২০ থেকে ৩০ টাকায় লেবু বিক্রি করতে দেখা যায়। মুগদার ভ্যানে ডেকে ডেকে লেবু বিক্রি করছেন বিক্রেতা। জাহাঙ্গীর নামের ওই বিক্রেতা হাঁকডাক দিয়ে বলছেন, রোজায় পাইকারি দামে লেবু, এক হালি ২০ টাকা, সাইজ ছোট রস প্রচুর, বাইছ্যা লন বিশ টাকা।

জাহাঙ্গীর জানান, রোজায় লেবুর দাম অনেক বেড়ে গেছে। তাই ছোট লেবুই বাজারে চলে এসেছে। ছোট হলেও রস আছে। ছোট বলেই তো দাম কম। আমি ২০ টাকা হালি বিক্রি করছি। বাজারে এক হালি লেবু কিনতে গেলে ৪০ টাকা নিচে পাবেন না।
   
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোজার প্রথম দিন থেকে পাইকারি বাজারেও লেবুর দাম চড়া। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে পাইকারি বিক্রেতারা বড় আকারের প্রতি হালি এলাচি লেবু বিক্রি করছেন ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। তবে মানভেদে ২০ টাকা হালিতেও লেবু বিক্রি করছেন পাইকাররা।

এদিকে রোজায় নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে সরকারি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। তারপরও দাম নিয়ন্ত্রণে আসছে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, রোজায় নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে আমাদের নিয়মিত অভিযান চলছে। রোজার শুরুতেই বেগুন, শশা, লেবুসহ বেশ কয়েকটি কাঁচা পণ্যের দাম হঠাৎ বেড়ে গেছে। আমরা এ বিষয়ে তদারকি করছি। যারা ইচ্ছে করে এ বাজার কারসাজির সঙ্গে জড়িত প্রমাণ সাপেক্ষে তাদের জরিমানা করা হচ্ছে। এছাড়া চাহিদা সরবরাহ ঠিক রাখতে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি কেনাকাটা না করার জন্য ক্রেতাদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কারণ যখন বেশি কেনাবেচা হয় তখনই দাম বাড়ানোর সুযোগ পায় অসাধু ব্যবসায়ীরা।        

এসআই/জেডএস