স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে স্বাধীনতা সড়ক নিয়মিত চালু রাখার ও মেহেরপুর জেলার মুজিবনগরে স্থায়ীভাবে ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন রয়েছে বেশকিছু প্রতিবন্ধকতা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পক্ষ থেকে গঠিত বিশেষ কমিটি স্থান পরিদর্শন করে সেই বাধাগুলো চিহ্নিত করে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দিয়েছে।

চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে দাখিল করা প্রতিবেদনে বেশকিছু প্রতিবন্ধকতার কথা উল্লেখ রয়েছে। সেইসঙ্গে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। এনবিআরের কাস্টমস বিভাগের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও চুক্তি শাখায় পাঠানো চিঠির সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদনে প্রতিবন্ধকতা ও সুপারিশের বিষয়ে বলা হয়েছে, মেহেরপুর বৈদ্যনাথতলায় একটি অচল স্থল কাস্টমস স্টেশন আছে, যার রুট মেহেরপুর (বাংলাদেশ)-চেপড়া (ভারত)। স্বাধীনতা সড়ক চালুর জন্য স্থল কাস্টমস ষ্টেশনটি সচল হিসেবে ঘোষণা করতে হলে প্রথমে প্রজ্ঞাপন সংশোধন করতে হবে। তবে কোনো কাস্টমস স্টেশন ঘোষণা করার সময় স্টেশনের চৌহদ্দি ঘোষণা করতে হয়। এ প্রেক্ষাপটে মুজিবনগর-হৃদয়পুর রুট নতুন করে ঘোষণা করা ভালো। এজন্য এনবিআর থেকে যশোরের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটকে প্রস্তাবিত কাস্টমস স্টেশনের সীমানা সংক্রান্ত তথ্য ও দলিল এনবিআরকে পাঠাতে পত্র দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের সহায়তায় দাগ নং ও খতিয়ান নং সম্বলিত তথ্যাদি পাওয়া মাত্র মুজিবনগর স্থল কাস্টমস স্টেশনের সীমানাসহ নতুন করে প্রজ্ঞাপন জারি করবে এনবিআর।

পাশাপাশি স্থল কাস্টমস স্টেশন ঘোষণার পর অবকাঠামো ও অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। স্থল কাস্টমস স্টেশনের অনুকূলে ভূমি বরাদ্দ দেওয়ারও প্রয়োজন রয়েছে। ভূমি বরাদ্দ পাওয়ার সংশ্লিষ্ট কমিশনারেট ডিপিপি প্রণয়ন করতে প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ পাওয়ার পর ভূমি উন্নয়নসহ অবকাঠামো নির্মাণ করতে হবে।

আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়লে সাধারণত স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষ স্থল কাস্টমস স্টেশনকে স্থল বন্দর ঘোষণা করে উন্নয়নমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারে। এক্ষেত্রে এখানে প্রাথমিক পর্যায়ে কেবল যাত্রী চলাচলে সীমিত থাকায় এটিকে স্থলবন্দর ঘোষণার সুযোগ কম মনে করছে বিশেষ কমিটি।

মুজিবনগরে দ্রুত ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট স্থাপনের তাগিদ থাকায় এক্ষেত্রে দ্রুততার সঙ্গে কার্যক্রম সম্পন্ন করার প্রয়োজনীয়তা থাকায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ কাস্টমসের নামে বরাদ্দ করা জায়গায় স্থাপনা নির্মাণ করতে পারে।

সর্বশেষ আগামী ২৬ মার্চ অথবা ১৭ এপ্রিল প্রস্তাবিত স্বাধীনতা সড়কের উদ্বোধন করতে হলে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শেষ করা সম্ভব না হলে, অস্থায়ী মঞ্চ বা আনুষঙ্গিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে কাস্টমস ও ইমিগ্রেশনের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া যেতে পারে।

এর আগে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে মুজিবনগরে স্থায়ীভাবে ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট স্থাপন উপলক্ষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এনবিআরের কাছে মতামত চাওয়া হয়েছিল।

স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর থেকে কলকাতা স্বাধীনতা সড়কটি নির্মাণ করবে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। একইভাবে মুজিবনগরে স্থায়ীভাবে ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট স্থাপন করবে এনবিআর।

স্বাধীনতা সড়ক চালু হলে ঐতিহাসিক মুজিবনগরের গুরুত্ব বাড়বে। সহজ হবে ওই এলাকায় দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ভ্রমণ। এতে সীমান্তের উভয় পাশের মানুষ উপকৃত হতে পারে। এ প্রেক্ষাপট বিবেচনায় সীমান্ত সড়কটি চালুর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আগামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতা সড়কটি চালুর কথা রয়েছে। এদিন ভারতের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে মুজিবনগরে স্বাধীনতা সড়ক (মুজিবনগর-কলকাতা) ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট উদ্বোধনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। স্বাধীনতা সড়ক চালুকে কেন্দ্র করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে (নিরাপত্তা ও বহিরাগমন) আহ্বায়ক করে ১১ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।

ঐতিহ্যবাহী মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর উপজেলায় ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল শপথ নেয় বাংলাদেশের প্রথম সরকার। ঐতিহাসিক এ স্থানে ইমিগ্রেশন স্থাপন ও স্বাধীনতা সড়ক চালু স্থানীয় মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। এতে স্বাধীনতার পুণ্যভূমি মুজিবনগর দেশের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিতি লাভ করবে। এর ফলে বন্ধুরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে বিদ্যমান সম্পর্ক আরও গভীর হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

প্রস্তাবিত স্বাধীনতা সড়কের জিরো পয়েন্ট থেকে মেহেরপুর জেলা সদরের আনুমানিক দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার ও স্থানীয় মুজিবনগর উপজেলা সদর থেকে দূরত্ব প্রায় এক কিলোমিটার। প্রস্তাবিত স্বাধীনতা সড়কের জিরো পয়েন্ট বা কাছাকাছি স্থানে কাস্টমসের কোনো স্থাপনা, ভূমি বা কার্যক্রম নেই। সেখানে ব্যাংক বা অন্য কোনো সরকারি দপ্তরের কার্যক্রমও নেই। তাই সীমান্ত সড়কের জিরো পয়েন্টের কাছাকাছি এলাকায় জেলা পরিষদের খাসজমি খোঁজা হচ্ছে।

বর্তমানে বৈদ্যনাথ তলা থেকে একটি স্থল কাস্টমস স্টেশন ও এর বিপরীতের মেহেরপুর-বৈদ্যনাথতলা-চেপরা রোড অচল রুট হিসেবে ঘোষণা করা আছে। এজন্য সেটিকে সচল রুট ঘোষণা করে ইমিগ্রেশনের জন্য বন্দর চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের বিপরীতে ভারতের অভ্যন্তরে সীমান্ত থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরত্বে ব্রাহ্মনগর বিএসএফ ক্যাম্প, ব্রাহ্মনগর ক্যাম্প থেকে বাম দিকে চার কিলোমিটার দূরত্বে হৃদয়পুর বিএসএফ ক্যাম্প আর ডান দিকে ১০ কিলোমিটার দূরত্বে তেহট্ট পুলিশ স্টেশন, ১৫৭ কিলোমিটার দূরত্বে ব্যারাকপুর ক্যান্টনমেন্ট ও ১৭১ কিলোমিটার দূরত্বে দমদম ক্যান্টনমেন্ট অবস্থিত।

আরএম/এসএসএইচ