সংগৃহীত ছবি

১৯৭১ সালে মাত্র চার হাজার ৯৮৫ কোটি টাকার অর্থনীতি নিয়ে যাত্রা শুরু করে স্বাধীন বাংলাদেশ। এর পরের বছর অর্থাৎ ১৯৭২ সালে প্রথম ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরের জন্য ৭৮৬ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়। সেই বাংলাদেশ এখন অনেক দূর এগিয়েছে।

উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় স্বাধীনতার ৫১ বছরের ব্যবধানে প্রায় ৮৬৩ গুণ বড় বাজেট নিয়ে জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এটি টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ সরকার এবং অর্থমন্ত্রী হিসেবে মুস্তফা কামালের চতুর্থ বাজেট উপস্থাপন।

বৃহস্পতিবার (৯ জুন) জাতীয় সংসদে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে এই বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী। তার আগে মন্ত্রিসভার অনুমোদন হবে এবং পরে ওই প্রস্তাবে সই করবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। ১ জুলাই থেকে নতুন অর্থবছর শুরু হবে।

এবার অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তব্যের প্রতিপাদ্য ধরা হচ্ছে ‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের প্রথম বাজেটের আকার ছিল ৭৮৬ কোটি টাকা। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে (১৯৭২-৭৩ অর্থবছর) ওই বাজেট দিয়েছিলেন প্রয়াত তাজউদ্দীন আহমদ। পরের দুটি বাজেটও দিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রথম অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন।

৫১ বছর পর অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বাংলাদেশের ৫১তম যে বাজেট উপস্থাপন করবেন তার আকার ধরা হচ্ছে ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এ হিসাবে স্বাধীনতার পর প্রথম বাজেটের চেয়ে আসন্ন নতুন বাজেটের আকার বেড়ে দাঁড়াবে ৮৬২ দশমিক ৬৭ গুণ বেশি।

এবার চতুর্থবারের মতো প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করবেন আ হ ম মুস্তফা কামাল। এর আগে টানা ১০ বার বাজেট দিয়ে রেকর্ড করেছিলেন প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। প্রয়াত অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া টানা ছয়টি বাজেট দেন। তবে, আবুল মাল আবদুল মুহিত টানা ১০ বাজেট ছাড়াও এরশাদ সরকারের সময় (১৯৮২-৮৩ এবং ১৯৮৩-৮৪ অর্থবছর) দুটি বাজেট দিয়েছিলেন। এ হিসাবে মুহিতের উপস্থাপন করা বাজেটের সংখ্যা ১২টি। এছাড়া প্রয়াত অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানেরও ১২টি বাজেট দেওয়ার রেকর্ড রয়েছে।

স্বাধীনতার পর বাজেটের আকার এবং অর্থমন্ত্রীদের তালিকা

• ১৯৭২-৭৩ >> তাজউদ্দীন আহমদ >> ৭৮৬ কোটি টাকা

• ১৯৭৩-৭৪ >> তাজউদ্দীন আহমদ >> ৯৯৫ কোটি টাকা

• ১৯৭৪-৭৫ >> তাজউদ্দীন আহমদ >> ১০৮৪.৩৭ কোটি টাকা

• ১৯৭৫-৭৬ >> ড. আজিজুর রহমান >> ১৫৪৯.১৯ কোটি টাকা

• ১৯৭৬-৭৭ >> মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান >> ১৯৮৯.৮৭ কোটি টাকা

• ১৯৭৭-৭৮ >> লে. জেনারেল জিয়াউর রহমান >> ২১৮৪ কোটি টাকা

• ১৯৭৮-৭৯ >> রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান >> ২৪৯৯ কোটি টাকা

• ১৯৭৯-৮০ >> ড. এম এন হুদা >> ৩৩১৭ কোটি টাকা

• ১৯৮০-৮১ >> এম সাইফুর রহমান >> ৪১০৮ কোটি টাকা

• ১৯৮১-৮২ >> এম সাইফুর রহমান >> ৪৬৭৭ কোটি টাকা

• ১৯৮২-৮৩ >> আবুল মাল আবদুল মুহিত >> ৪৭৩৮ কোটি টাকা

• ১৯৮৩-৮৪ >> আবুল মাল আবদুল মুহিত >> ৫৮৯৬ কোটি টাকা

• ১৯৮৪-৮৫ >> এম সাইদুজ্জামান >> ৬৬৯৯ কোটি টাকা

• ১৯৮৫-৮৬ >> এম সাইদুজ্জামান >> ৭১৩৮ কোটি টাকা

• ১৯৮৬-৮৭ >> এম সাইদুজ্জামান >> ৮৫০৪ কোটি টাকা

• ১৯৮৭-৮৮ >> এম সাইদুজ্জামান >> ৮৫২৭ কোটি টাকা

• ১৯৮৮-৮৯ >> মেজর জেনারেল (অব.) মুনিম >> ১০৫৬৫ কোটি টাকা

• ১৯৮৯-৯০ >> ড. ওয়াহিদুল হক >> ১২৭০৩ কোটি টাকা

• ১৯৯০-৯১ >> মেজর জেনারেল (অব.) মুনিম >> ১২৯৬০ কোটি টাকা

• ১৯৯১-৯২ >> এম সাইফুর রহমান >> ১৫৫৮৪ কোটি টাকা

• ১৯৯২-৯৩ >> এম সাইফুর রহমান >> ১৭৬০৭ কোটি টাকা

• ১৯৯৩-৯৪ >> এম সাইফুর রহমান >> ১৯০৫০ কোটি টাকা

• ১৯৯৪-৯৫ >> এম সাইফুর রহমান >> ২০৯৪৮ কোটি টাকা

• ১৯৯৫-৯৬ >> এম সাইফুর রহমান >> ২৩১৭০ কোটি টাকা

• ১৯৯৬-৯৭ >> এস এ এম এস কিবরিয়া >> ২৪৬০৩ কোটি টাকা

• ১৯৯৭-৯৮ >> এস এ এম এস কিবরিয়া >> ২৭৭৮৬ কোটি টাকা

• ১৯৯৮-৯৯ >> এস এ এম এস কিবরিয়া >> ২৯৫৩৭ কোটি টাকা

• ১৯৯৯-২০০০ >> এস এ এম এস কিবরিয়া >> ৩৪২৫২ কোটি টাকা

• ২০০০-০১ >> এস এ এম এস কিবরিয়া >> ৩৮৫২৪ কোটি টাকা

• ২০০১-০২ >> এস এ এম এস কিবরিয়া >> ৪২৩০৬ কোটি টাকা

• ২০০২-০৩ >> এম সাইফুর রহমান >> ৪৪৮৫৪ কোটি টাকা

• ২০০৩-০৪ >> এম সাইফুর রহমান >> ৫১৯৮০ কোটি টাকা

• ২০০৪-০৫ >> এম সাইফুর রহমান >> ৫৭২৪৮ কোটি টাকা

• ২০০৫-০৬ >> এম সাইফুর রহমান >> ৬১০৫৮ কোটি টাকা

• ২০০৬-০৭ >> এম সাইফুর রহমান >> ৬৯৭৪০ কোটি টাকা
 
• ২০০৭-০৮ >> এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম >> ৯৯৯৬২ কোটি টাকা

• ২০০৮-০৯ >> এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম >> ৯৯৯৬২ কোটি টাকা

• ২০০৯-১০ >> আবুল মাল আবদুল মুহিত >> ১১৩৮১৫ কোটি টাকা

• ২০১০-১১ >> আবুল মাল আবদুল মুহিত >> ১৩২১৭০ কোটি টাকা

• ২০১১-১২ >> আবুল মাল আবদুল মুহিত >> ১৬৫,০০০ কোটি টাকা

• ২০১২-১৩ >> আবুল মাল আবদুল মুহিত >> ১৯১৭৩৮ কোটি টাকা।

• ২০১৩-১৪ >> আবুল মাল আবদুল মুহিত >> ২ লাখ ২২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা

• ২০১৪-১৫ >> আবুল মাল আবদুল মুহিত >> ২ লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা

• ২০১৫-১৬ >> আবুল মাল আবদুল মুহিত >> ২ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা

• ২০১৬-১৭ >> আবুল মাল আবদুল মুহিত >> ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা

• ২০১৭-১৮ >> আবুল মাল আবদুল মুহিত >> ৪ লাখ ২৭০ কোটি টাকা

• ২০১৮-১৯ >> আবুল মাল আবদুল মুহিত >> ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা

• ২০১৯-২০ >> আ হ ম মুস্তফা কামাল >> ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা

• ২০২০-২১ >> আ হ ম মুস্তফা কামাল >> ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা

• ২০২১-২২ >> আ হ ম মুস্তফা কামাল >> ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা

আসছে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের সম্ভাব্য আকার ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। বিশাল এ বাজেটের ঘাটতি ধরা হচ্ছে দুই লাখ ৪১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। আর অনুদান ছাড়া ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে দুই লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। যা মোট জিডিপির ৫ দশমিক ৪ শতাংশ।

চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ছিল ছয় লাখ তিন হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। যদিও সংশোধিত বাজেটের আকার দাঁড়ায় পাঁচ লাখ ৯৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে আসছে নতুন বাজেটের আকার বাড়ছে ৭৪ হাজার ৩৮৭ কোটি টাকা।

এসআই/এমএআর