এক কেজিতে মিলেছে সাতটি টমেটো

নতুন বছরের শুরুতে রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতে আলু ও পেঁয়াজের দাম কমলেও কমছে না টমেটোর দাম। পাইকারিতে কম হলেও খুচরা বাজারে টমেটো বিক্রি হচ্ছে বেশি টাকায়। খুচরায় এ সবজির কেজি ৮০ টাকা। যা পাইকারিতে ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক কেজিতে টমেটো উঠছে ৭/৮টি। সে হিসেবে প্রতিটি টমেটোর দাম পড়ছে ১০-১১ টাকা।

সোমবার (৪ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর উত্তর পীরেরবাগ ছাপরা মসজিদ কাঁচাবাজার ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বাজারে হাইব্রিড টমেটোর কেজি ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, কাঁচা টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে মটরশুঁটি, কেজি ১০০ টাকা।

ওজন ও আকার ভেদে ফুলকপির দাম ২০ থেকে ৪০ টাকা। পাতা কপি ২৫ থেকে ৩০ টাকা, হাইব্রিড শসা ৪০, দেশি শসা ৬০, গাজর ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেগুন ৩০-৪০ টাকা, শিম ৩০-৪০ টাকা। করলা ৪০ টাকা ও মিষ্টি কুমড়ার কেজি ২৫ টাকা।

তবে বেড়েছে লাউয়ের দাম। গত সপ্তাহেও লাউয়ের পিস ছিল ৫০ টাকা, আজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। কাঁচা কলার হালি ২৫ টাকা। ধনে পাতার কেজি ৮০ টাকা তবে ১০০ গ্রাম ধনে পাতা বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকায়। পেঁপের কেজি ৩০ টাকা, মুলা বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায়।

বাজারে সবজির সমাহার

এদিকে, গত সপ্তাহের তুলনায় কমেছে আলুর দাম। আগের সপ্তাহে ৫০ টাকায় বিক্রি হওয়া আলুর দাম এখন ৩৮ টাকা। ছোট সাইজের আলু ৩৫ টাকা, তবে বাছাই করা বড় আলু এখনও ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

অন্যদিকে, মুড়িকাটা দেশি পেঁয়াজ মান ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকায়, দেশি পেঁয়াজ ৪০ টাকা, ইন্ডিয়ান ও চাইনিজ পেয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৫ টাকায়। মরিচের কেজি ৯০-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে আড়াইশ’ গ্রাম মরিচের দাম ২৫-৩০ টাকা।

বাজারের সবজি বিক্রেতা আনিছুর রহমান বলেন, ‘তুলনামূলকভাবে অনেক কিছুর দাম কমেছে। কিন্তু ইন্ডিয়ান আদা, দেশি টমেটো, ধনে পাতা ও মরিচের দাম এখনও বেশি। সরবরাহের ওপর নির্ভর করে সবজির বাজারে দাম প্রতিদিনই কিছুটা ওঠানামা করে। আর কয়দিন গেলে হয়তো কমবে টমেটোর দাম।’

এদিকে, কমেছে দেশি আদার দাম, বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়। তবে চাইনিজ আদার দাম এখনও আকাশচুম্বী। বিক্রি হচ্ছে ২০০-২৪০ টাকায়।

এ বিষয়ে আদা বিক্রেতা জুলফিকার বলেন, ‘দেশি আদা এখনও কাঁচা। ঘরে বেশি দিন রাখলে পচে যাবে। দামে কম বলে বিক্রি বেশি হচ্ছে। তবে চাইনিজ ও ইন্ডিয়ান আদাটা শুকনো তাই দাম কমছেই না। হোটেল ও বাবুর্চিরা এ আদা বেশি কেনেন।’

বেড়েছে লাউয়ের দাম

প্রতি হালিতে কাঁচা কলার দাম কমেছে পাঁচ টাকা, বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ টাকায়। লেবু প্রতি হালি ২৫-২০ টাকা দরে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।

প্রতি আঁটি লাল শাক, পালং শাক ১০-১৫ টাকা, পুঁই শাক ও ডাটা শাক ২০-৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। লাউ শাক বিক্রি হচ্ছে প্রতি আঁটি ২৫-৩০ টাকায়।

কিছুটা দাম কমেছে মাছের। বাজার ঘুরে জানা গেছে, প্রতি কেজি রুই ও কাতলা বিক্রি হচ্ছে আকারভেদে ১৮০ থেকে ২৫০ টাকা, মৃগেল ১৮০-২২০, ছোট তেলাপিয়া ১২০ ও বড় ১৫০-১৮০ টাকায়। কমেছে সিলভার কার্প মাছের দামও, কেজি ১২০-১৫০ টাকা। আইড় মাছ ৪০০-৬০০ টাকা, মেনি মাছ ৩০০-৫০০, বাইলা মাছ প্রকার ভেদে ৩০০-৫০০, বাইম মাছ ৪০০-৫০০, গলদা চিংড়ি ৬০০-৬৫০, সরপুঁটি ১৫০-২৫০, পোয়া ৩০০-৪৫০, মলা ৩২০-৩০০, পাবদা ৩৫০-৪০০, টাকি ২৫০-৩০০, শোল ৪০০-৫০০, বোয়াল ৪০০-৬০০, শিং ৩৮০-৫০০, দেশি মাগুর ৪০০-৫০০, পাঙাশ ১৬০-২০০, চাষের কৈ ২০০-২৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে মাছের সমাহার

এছাড়াও ছোট সাইজের ইলিশ ৬০০ টাকা, সর্বোচ্চ ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে পিস ৬৫০ থে‌কে ৭৫০ টাকায়।

মাছ বিক্রেতা তরিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে, ‘এখন শীতকাল, তাই মাছ বেশিক্ষণ বরফ ছাড়াই টাটকা থাকছে। মাছের সরবরাহও বেশি। দামেও কম। তাই বেচাকেনাও বেশি। মাছের বাজারে ক্রেতা বেশি থাকে সকালে।’

মাছের বাজারের পাশেই ‘কাদের গোশত বিতানে’ গিয়ে দেখা যায়, সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে মাংস বিক্রি করা হচ্ছে। গরুর মাংস প্রতি কেজি ৫৫০ টাকা, খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায়। ব্রয়লার মুরগি বি‌ক্রি হ‌চ্ছে ১২৫ টাকা কেজিতে। পাকিস্তানি ককের কেজি ১৮০ টাকা, লেয়ারের দাম ১৬৫ টাকা। দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৮০ টাকা দরে।

৫ টাকা কমে এ দোকানে ডিম (লেয়ার) প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকায়, খুচরায় ৯০ টাকা। দেশি মুরগির ডিম ডজন ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা এবং হাঁসের ডিম ১৫০ টাকা।

কাদের গোশত বিতানের মালিক বাদশা মিয়া বলেন, ‘আমাদের এখানে খুচরাও যা পাইকারিও তা। সব শ্রেণির মানুষ কম ও বেশি পরিমাণে গোশত ও ডিম কিনতে পারেন। প্রতিদিনকার বাজার দর আমরা লিখে টাঙ্গিয়ে রাখি। তাই দরদামের সুযোগ থাকে না। খুচরার চেয়ে কম দামেই বিক্রি হচ্ছে গোশত ও ডিম।’

সবুজ মিয়া নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘বাজারে ডিমের দাম কম, মাছেও কমতি দেখছি। সবজির দাম কমলেও অনেক সবজির দাম নাগালের মধ্যে নেই। যেমন- টমেটোর ওজন বেশি। মাত্র ৮-১০টি দেশি পাকা টমেটোর দাম ৮০ টাকা। আবার কাঁচা মরিচের দাম কিন্তু ১০০ টাকার নিচে নামছে না। সয়াবিন তেলের দাম কোনোটাই ৫৭০ টাকার (পাঁচ লিটার) নিচে মিলছে না।’

জেইউ/এফআর