পাঁচ বছরে পাটবীজে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্য
মতবিনিময় সভা
আগামী পাঁচ অর্থবছরে পাটের বীজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার। এতে প্রায় ৯০ শতাংশ আমদানি নির্ভরতা কমবে। লক্ষ্য বাস্তবায়নে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ‘উচ্চফলনশীল পাটবীজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে রোডম্যাপ বাস্তবায়ন’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
বিজ্ঞাপন
সভায় জানানো হয়, দেশে প্রতি বছর কৃষক পর্যায়ে প্রত্যায়িত বীজের চাহিদা ৫ হাজার ২১৫ মেট্রিক টন। চাহিদার বিপরীতে বিএডিসি সরবরাহ করে ৭৭৫ মেট্রিক টন। যার মধ্যে তোষা পাট ৫১৫ টন ও দেশি ২৬০ টন। তোষা পাটবীজের প্রায় পুরোটাই ভারত থেকে আনতে হয়। এই নির্ভরতা কমিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে কৃষি মন্ত্রণালয় পাঁচ বছর মেয়াদী কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেছে।
আগামী ২০২১-২২ থেকে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে দেশে ৪ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন পাটবীজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তোষা পাটবীজ উৎপাদনের জন্য ৮ হাজার ৭৮০ হেক্টর জমিতে চাষের প্রয়োজন হবে।
বিজ্ঞাপন
সভায় কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক জানান, অন্যের ওপর নির্ভরশীল না থেকে পাটবীজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। কৃষি মন্ত্রণালয়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে কাজ করা হবে।
তিনি বলেন, আমরা পাটবীজের জন্য বিদেশের ওপর নির্ভরশীল থাকতে পারি না। পাটবীজ ও পাটের উৎপাদন বাড়াব। পাট চাষকে এদেশের চাষিদের নিকট লাভজনক ফসলে উন্নীত করব।
বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে পাটের অসাধারণ ও গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা ফিরিয়ে আনার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন মন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী ও সময়োপযোগী উদ্যোগে পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট পাটের জিনোম আবিষ্কার করেছে বলে উল্লেখ করেন কৃষিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, সেই জিনোম ব্যবহার করে আমাদের বিজ্ঞানীরা উচ্চফলনশীল পাটবীজ রবি-১ জাত উদ্ভাবন করেছে। যার ফলন ভারতের পাটজাতের চেয়ে ১০-১৫ ভাগ বেশি। কৃষক পর্যায়ে এটির চাষ বাড়াতে পারলে পাটবীজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া সম্ভব।
অন্য ফসলের তুলনায় কম লাভজনক হওয়ায় পাটচাষে কৃষকের অনাগ্রহকে বীজ উৎপাদনের মূল সমস্যা বলে উল্লেখ করেন মন্ত্রী। কৃষকদের আগ্রহী ও চাষ লাভজনক করতে ভর্তুকির ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান মন্ত্রী।
সভায় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক) বলেন, অন্যের ওপর নির্ভরশীল থাকলে সবসময় অনিশ্চয়তায় থাকতে হয়। পাশাপাশি পাটবীজ রপ্তানির ওপর সংশ্লিষ্ট দেশের নিষেধাজ্ঞা আরোপের ভয়ও থাকে।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পাটআঁশ এবং পাটবীজ দুইটি আলাদা ফসল। পাটবীজ রবি মৌসুমের (আগষ্ট-ডিসেম্বর) ফসল। তোষা পাটবীজ সাধারণত আগষ্ট-ডিসেম্বর মাসের ফসল। এ সময়ে উচ্চমূল্যের রবি ফসলের পরিবর্তে কৃষক পাটবীজ উৎপাদনে তেমন আগ্রহী হন না। তাই পাটবীজ উৎপাদনের পরিবর্তে বাজার থেকে বীজ ক্রয় করে পাট চাষ লাভজনক মনে করেন কৃষক।
দেশে মূলত দেশি ও তোষা এ দুই জাতের পাটের চাষ হয়। বর্তমানে দেশি পাট ১৫ ভাগ ও তোষা পাট ৮৫ ভাগ উৎপন্ন হয়। তোষা পাটবীজের চাহিদার প্রায় ৮৫-৯০ ভাগ ভারত থেকে আমদানি করা জেআরও-৫২৪ জাতের মাধ্যমে মেটানো হয়।
তবে জিনোম গবেষণার মাধ্যমে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিটউট (বিজেআরআই) উদ্ভাবিত রবি-১ (তোষা পাট-৮) এর ফলন জেআরও-৫২৪ জাতের চেয়ে ১০-১৫ ভাগ বেশি। এটি ফরিদপুর ও যশোর অঞ্চলের কৃষকের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করেছে। যথাযথভাবে রবি-১ পাট জাতকে সম্প্রসারণের মাধ্যমে পাট বীজে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা সম্ভব হবে।
সভায় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব লোকমান হোসেন মিয়া, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও সাবেক কৃষি সচিব মো. নাসিরুজ্জামান, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ) মো. মাহবুবুল ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব (গবেষণা) কমলারঞ্জন দাশ, অতিরিক্ত সচিব ও মহাপরিচালক (বীজ) বলাই কৃষ্ণ হাজরা, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আবুল কালাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
একে/এসআরএস