বিশ্বব্যাংকের সদর দপ্তর/ ছবি: সংগৃহীত

করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতেও দেশে রেমিট্যান্স আহরণে রেকর্ড হয়েছে। রিজার্ভেও হয়েছে রেকর্ড, ছাড়িয়েছে ৪৩ বিলিয়ন (৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত) ডলার। এর বাইরেও করোনাকালে দেশের সার্বিক অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে সবধরনের উদ্যোগ। এরপরও দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি নিয়ে একটুও মন গলেনি বিশ্বব্যাংকের!   

বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির বিষয়ে গত বছরের অক্টোবরে প্রকাশিত পূর্বাভাসেই অনড় সংস্থাটি। অক্টোবরে প্রকাশিত পূর্বাভাসে বিশ্বব্যাংক বলেছিল, দক্ষিণ এশিয়ায় করোনাভাইরাসের প্রভাবে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে লাখ লাখ মানুষ চাকরি হারিয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি এ অঞ্চলের মানুষদের চরম দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এরপরও প্রবৃদ্ধি অর্জনে ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে থাকছে বাংলাদেশ। করোনার প্রভাবে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট জিডিপি এক দশমিক ছয় শতাংশ হবে। যেখানে পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধি হবে শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ।

তাদের হিসেবে, দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে ভারত। তাদের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল মাইনাস ৯ দশমিক ছয় শতাংশ।

তবে সম্প্রতি ‘বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সম্ভাবনা’ (গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্ট) শিরোনামে বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনেও আগের দেওয়া পূর্বাভাসেই অনড় রয়েছে সংস্থাটি। সেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হবে এক দশমিক ৬ শতাংশ।

অন্যদিকে বিশ্বব্যাংকের এমন প্রতিবেদনে ‘চটেছেন’ অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বুধবার (৬ জানুয়ারি) ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিপরিষদ কমিটির সভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক কী উদ্দেশে এগুলো বলে আমি জানি, বিশ্বব্যাংকও জানে। বিশ্বব্যাংক আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) তো একই বিল্ডিংয়ে। এরা দুজন একই সুরে কথা বলে। সপ্তাহে সপ্তাহে সেটা চেঞ্জও করে। মাসে কয়েকবার চেঞ্জ করে।’

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরে বাজেটে সরকারের পক্ষ থেকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছে আট দশমিক দুই শতাংশ। কিন্তু গত ৩১ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) অনুষ্ঠিত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের সভায় এ প্রবৃদ্ধি কমিয়ে সাত দশমিক চার শতাংশ করার কথা বলা হয়েছে। অন্যদিকে, আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছে সাত দশমিক সাত শতাংশ।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনা মহামারির নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের রপ্তানি, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থানসহ অন্যান্য খাতে। যার ফলে বাংলাদেশের দারিদ্র্য বেড়েছে। এ জন্য ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে এক দশমিক ৬ শতাংশ হবে। ২০২২ অর্থবছরে কিছুটা বেড়ে হবে তিন দশমিক চার শতাংশ। এর আগে, বাংলাদেশ সরকার ২০২০-২১ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে আট দশমিক দুই শতাংশ।

সংস্থাটি আরও জানায়, বাংলাদেশ পোশাক রপ্তানির জন্য ইউরোপ ও আমেরিকার ওপর অনেকটা নির্ভরশীল। কিন্তু করোনা মহামারিতে বর্তমানে দেশগুলোতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও ভোক্তা চাহিদা কমেছে। ফলে রপ্তানি ব্যাহত হয়ে অর্থনৈতিক ক্ষতিতে পড়বে বাংলাদেশ। এছাড়া জ্বালানি তেলের দাম কমায় উপসাগরীয় দেশগুলোতে রাজস্ব সংকট থাকায় প্রবাসী আয়েও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার সংযত বা মাঝারি ধরনের হবে।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ও অর্থনীতিবিদ ড. শামসুল আলম বলেন, ‘যেহেতু চলতি অর্থবছর শেষে দক্ষিণ এশিয়ার প্রবৃদ্ধি তিন দশমিক তিন শতাংশ হবে, সেহেতু বাংলাদেশ নিয়ে বিশ্বব্যাংকের এ হিসাব অবাস্তব। তারা মূলত কয়েকটা সেক্টরের ওপর ভিত্তি করে প্রবৃদ্ধির হিসাব করে থাকে। আমি বলব, বিশ্বব্যাংক টোটালি ভুল ফিগারের ওপর দাঁড়িয়ে এ তথ্য প্রকাশ করেছে।’

এসআর/এফআর