করোনা মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে ঋণ পরিশোধে বিশেষ ছাড় দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নতুন বছরে এ সুবিধা আর বাড়ানো হবে না। ফলে আগামী জানুয়ারি থেকে ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করলে গ্রাহক খেলাপিতে পরিণত হবেন।

মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আয়োজিত ব্যাংকার্স সভায় এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। সভা শেষে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম।

তিনি বলেন, করোনার কারণে ২০২০ সাল জুড়ে কোনো টাকা পরিশোধ না করলেও গ্রাহকদের খেলাপি করা যাবে না- এমন সুবিধা দেওয়া হয়েছে। ২০২১ সালে ২৫ শতাংশ পরিশোধ করেই খেলাপির বাইরে ছিলেন গ্রাহকরা। বেশিরভাগ গ্রাহক এই টাকা পরিশোধ করেছেন। কিছু গ্রাহক এখনো নতুন সুবিধার আশায় রয়েছেন। কিন্তু এই সুবিধা আর বাড়ছে না।

সিরাজুল ইসলাম বলেন, ক্ষুদ্র গ্রাহকদের ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রেও বিশেষ সুবিধার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মাত্র ১৫ শতাংশ অর্থের মাধ্যমেই খেলাপি হওয়ার হাত থেকে বেঁচে যাবেন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা। এখানে বিশেষ সুবিধা হিসেবে আরও রাখা হয়েছে এক দশমিক ৫০ শতাংশ প্রভিশনে ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ। এ সুবিধা শুধু করোনার সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য।

এর আগে, মহামারির কারণে ২০২০ সালে গ্রাহক কোনো টাকা পরিশোধ না করলেও তাকে খেলাপি করতে পারেনি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। পরে চলতি বছর সুবিধা কিছুটা কমানো হয়। এবছর ডিসেম্বরের মধ্যে ঋণের ২৫ শতাংশ পরিশোধ করলে খেলাপির বাইরে থাকবে গ্রাহক।

গত ১৫ ডিসেম্বর বিশেষ এ সুবিধা ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত বাড়াতে গভর্নরকে চিঠি দিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। তারা বলছেন করোনা মহামারিতে অর্থনৈতিক কার্যক্রম পুরোপুরি স্বাভাবিক না হওয়ায়, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা এখনো ভয়াবহ অবস্থা পার করছে। তাই ঋণ শ্রেণিকরণ (খেলাপি) সুবিধা আরও ছয় মাস বাড়ানোর দাবি করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ সুবিধা বাড়ানোর পক্ষে সায় দেয়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

চিঠিতে শর্ত শিথিলের প্রস্তাবে বলা হয়, ক্ষুদ্র, মাঝারি ও অন্যান্য শিল্প এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের বকেয়া ঋণের পরিমাণ ১০ কোটি টাকা বা তার কম হলে পরিশোধের ক্ষেত্রে প্রদেয় কিস্তিগুলোর কোনো প্রকার ডাউন পেমেন্ট না দিলেও মেয়াদোত্তীর্ণ হিসাবে শ্রেণিকরণ না করে ঋণ হিসাবটি পুনঃতফসিলকৃত বলে গণ্য করা। ১০ কোটি টাকার অধিক কিন্তু ৫০০ কোটি টাকা পর্যন্ত ২ শতাংশ পরিশোধ করা হলে এ ঋণখেলাপি (বিরূপমানের শ্রেণিকরণ) না করা। ৫০০ কোটি টাকার অধিক ঋণ ১ শতাংশ পরিশোধের শর্ত রেখে কাউকে খেলাপি না করার অনুরোধ।

মহামারি করোনায় সৃষ্ট অর্থনীতির সংকট মোকাবিলায় ২০২০ সাল জুড়ে ঋণের কিস্তির এক টাকা শোধ না করলেও গ্রাহককে খেলাপি করতে পারেনি ব্যাংক। ফলে কাগজে-কলমে কমে যায় খেলাপি ঋণ। খাতার হিসাবে ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি ৬ লাখ টাকার খেলাপিঋণ নিয়ে শুরু হয় ২০২১ সাল। এ বছর আগের মতো সুযোগ দেওয়া না হলেও অনেক ক্ষেত্রে ঢালাও সুবিধা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিভিন্ন শিথিলতার আওতায় চলতি বছর একজন গ্রাহকের যে পরিমাণ ঋণ পরিশোধের কথা, ডিসেম্বরের মধ্যে তার ২৫ শতাংশ পরিশোধ করলেও তাকে আর খেলাপি করা যাবে না। এরপরও বাড়ছে খেলাপিঋণ।

বছরের প্রথম ছয় মাসে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়ায় ৯৯ হাজার ২০৫ কোটি টাকায়। এখন লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে এটি। সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে ব্যাংক খাতের মোট ঋণ স্থিতি দাঁড়ায় ১২ লাখ ৪৫ হাজার ৩৯১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয় এক লাখ এক হাজার ১৫০ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ৮ দশমিক ১২ শতাংশ। চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে খেলাপি ঋণ বাড়ে ১২ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা।

এসআই/ওএফ/জেএস