পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত ব্যাংকে বিনিয়োগ এখনও নিরাপদ বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। তিনি বলেন, ব্যাংকগুলো এখন পর্যন্ত ফেল করেনি। আমি মনে করি ব্যাংকে বিনিয়োগ নিরাপদ। তবে আমাদের বিনিয়োগকারীরা এখন অনেক বিচক্ষণ। তারা কোথায় বিনিয়োগ করবে এটা তাদের ইচ্ছা।

মঙ্গলবার (২ ফেব্রুয়ারি) বিএসইসির সংবাদ সম্মেলন কক্ষে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে দুবাইয়ে প্রথমবারের রোড-শো করছে বিএসইসি। সে বিষয় জানাতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

চেয়ারম্যান বলেন, একটি ব্যাংকে আইপিওর অনুমোদন দিয়েছি। আরেকটি কোম্পানি আবেদন করেছে। সব ঠিক থাকলে সেটারও অনুমোদন দিয়ে দেবো। আরও বেশকিছু ব্যাংক ও বীমা কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসবে বলেও তিনি জানান।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বহুজাতিক কোম্পানিরগুলোর মাদার সংগঠনের অনেক টাকা পড়ে আছে। তারা তাদের সাবসিডারি কোম্পানিগুলোকে আধা কিংবা ১ শতাংশ সুদে ঋণ দেয়। সুতরাং তাদের টাকার দরকার নেই। তাই কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে আসছে না। এ অবস্থায় কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজার আনতে হলে দিতে হবে ফিসক্যাল বেনিফিট। কিন্তু গত বাজেটে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত-অতালিকাভুক্ত কোম্পানির কর সুবিধার হার আরও কমানো হয়েছে।

এসব ঝামেলার কারণে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো বাজারে আসছে না উল্লেখ করে বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, আমরা আগামী বাজেটে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত-অতালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হারের ব্যবধান ১৫ শতাংশ রাখার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। তাতে বিদেশিরা আকৃষ্ট হয়ে পুঁজিবাজারে আসবে।

সংবাদ সম্মেলনে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুল আলম বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারী এবং এনআরবিদের সামনে আমাদের ক্যাপিটাল মার্কেট তুলে ধরতে হবে। রোড-শোর মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগ অনেক বাড়বে এবং ক্যাপিটাল মার্কেটের ডেভেলপমেন্ট হবে।

তিনি আরও বলেন, দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি খুবই ভালো। দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির সঙ্গে আমাদের পুঁজিবাজার পিছিয়ে আছে। বিভিন্ন দেশের ইকোনোমিক গ্রোথের সঙ্গে সঙ্গে কিন্তু ক্যাপিটাল মার্কেট ডেভেলপ করে। ক্যাপিটাল মার্কেট থেকে মূলত লং টার্ম ফাইন্যান্সিং হয়ে থাকে। আমাদের অন্যান্য উন্নত ইকোনোমি যেভাবে ডেভেলপিং হয়েছে, সেভাবে আমাদের ক্যাপিটাল মার্কেটে কন্ট্রিবিউশনটা বাড়াতে চাই। ফাইন্যান্সিংয়ের জন্য দেশি বিনিয়োগ বাড়ছে। তবে বিদেশি বিনিয়োগটা কমে হচ্ছে।

মাহবুব আলম বলেন, পুঁজিবাজারের প্রবৃদ্ধি গত কয়েক মাসে অনেক ভালো। সুতরাং এখানে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এবং আমাদের যারা এনআরবিরা আছেন, তারা শো করছেন। আমাদের কাজ হচ্ছে তাদের এ আগ্রহটা কাজে লাগানো। তাদের সামনে আমাদের পুঁজিবাজারকে তুলে ধরা। আমাদের বাজারে নতুন নতুন প্রোডাক্ট আসছে। এ সময় নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিমসহ বিএসইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ‘রাইজিং অব বেঙ্গল টাইগার : পটেনশিয়াল অব বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেটস’ নামে চার দিনব্যাপী রোড-শো দুবাই মলের কাছে স্কাই ভিউ হোটেলে অনুষ্ঠিত হবে। রোড-শোতে অংশ নেবে বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বে কমিশনার ও নির্বাহী পরিচালক, ডিএসই, সিএসইসহ পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

চারদিনের অনুষ্ঠান সূচির মধ্যে যা রয়েছে

৯ ফেব্রুয়ারি সকালে প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিয়ে ইনভেস্টর সামিট : বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট অনুষ্ঠিত হবে। একই বিষয়ে দুপুরে আরকটি সেমিনার হবে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নিয়ে।

১০ ফেব্রুয়ারি সকালে সুকুক : দ্যা নিউ ইনভেস্টমেন্ট অপরচুনিটি ইন বাংলাদেশ শিরোনামে একটি সেমিনার হবে। এতে অংশ নেবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা।

১১ ফেব্রুয়ারি সকালে স্কোপ অব প্রাইভেট ইকুইটি অ্যান্ড ভেনচার ক্যাপিটাল ইনভেস্টমেন্ট ইন বাংলাদেশ শিরোনামে একটি সেমিনার হবে। এখানেও অংশ নেবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা।

১২ ফেব্রুয়ারি দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে বাইলেটারেল অ্যান্ড মাল্টিলেটারেল মিটিং। এখানে বিনিয়োগকারীদের ছোট ছোট গ্রুপ নেবে।

এমআই/এমএইচএস