মাত্র তিনদিনে ‘বাংলাদেশ ব্যাংক বিল’ নিলামের মাধ্যমে বাজার থেকে ১২ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। ৭, ১৪ ও ৩০ দিন মেয়াদি এ বিলের বার্ষিক সুদ দিচ্ছে দশমিক ৪৮ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ১ দশমিক ৩৫ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

মুদ্রাবাজারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে বাজারে অতিরিক্ত তারল্য নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছে বিল বিক্রি করে অতিরিক্ত টাকা তুলে নিয়েছে মুদ্রা বাজার নিয়ন্ত্রণকারী এ সংস্থাটি।

নিলামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ বাংলাদেশে নিবাসী সব ব্যক্তি এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী বিড দাখিল করতে পারলেও ব্যাংকগুলোই এ নিলামে অংশ নেয় বেশি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গেল ৯ আগস্ট নিলামের প্রথম দিন ৭ ও ১৪ দিন মেয়াদি বিলে অংশ নিতে আবেদনের সুযোগ ছিল। প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলো ৬ হাজার ৮৭৫ কোটি টাকার বিল কিনতে আবেদন করে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিলাম কমিটি ২ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এর মধ্যে এক হাজার ৫০৫ কোটি টাকার ৭ দিন মেয়াদি, যার সুদ ছিল দশমিক ৫৪ শতাংশ এবং ১১০০ কোটি টাকার ১৪ দিন মেয়াদি বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের সুদ ছিল দশমিক ৭৫ শতাংশ।

এর পর বুধবার (১১ আগস্ট) ৩০ দিন মেয়াদি বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের নিলাম হয়। ওই নিলামে ৪৭টি বিডের মাধ্যমে ৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকার বিল কেনার আবেদন পড়ে। এর মধ্যে ৪৩টি বিডের ৬ হাজার ৭০ কোটি টাকা তুলে নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যার বার্ষিক সুদ নির্ধারণ করা হয় দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে এক দশমিক ২৫ শতাংশ।

সবশেষ সোমবার (২৩ আগস্ট) ৩০ দিন মেয়াদি বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের নিলামে ৫৩ বিডে ৪ হাজার ৩৬০ কোটি টাকার আবেদন আসে। এর বিপরীতে বার্ষিক এক থেকে সর্বোচ্চ এক দশমিক ৩৫ শতাংশ সুদে ৪০০০ কোটি টাকা তুলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এর আগে ২০১৯ সালের ৩ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। ওই দিন একটি ব্যাংক মাত্র শূন্য দশমিক শূন্য ২ শতাংশ তথা ২ পয়সা সুদে ৭ দিনের জন্য ১৫০ কোটি টাকা রেখেছিল। এরপর থেকে নিলাম বন্ধ ছিল। বাজারে উদ্বৃত্ত তারল্য বেড়ে যাওয়ায় গত বৃহস্পতিবার সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীকে চিঠি দিয়ে নিলামের বিষয়টি জানানো হয়।

এর আগে ২৯ জুলাই চলতি অর্থবছরের মুদ্রানীতি ঘোষণায় বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, অতিরিক্ত তারল্য আর্থিক খাতে অস্থিরতা তৈরি করলে তা তুলে নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। অতিরিক্ত তারল্যের কারণে মূল্যস্ফীতি বা সম্পদের দাম বেড়ে গেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন নীতি গ্রহণে দ্বিধা করবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, করোনার মধ্যে প্রবাসী আয় যেমন বাড়ছে, তেমনি ব্যাংকগুলোতে আমানত বাড়ছে। ফলে ব্যাংকগুলোতে টাকা উদ্বৃত্ত পড়ে আছে।

আশানুরূপ ঋণ চাহিদা না থাকায় গত জুন পর্যন্ত দেশের ব্যাংক খাতে উদ্বৃত্ত তারল্য দাঁড়ায় ২ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা। বিধিবদ্ধ নগদ তারল্য (সিআরআর) সংরক্ষণের পর গত জুন শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে একেবারেই অলস ছিল ৬২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। অলস এ অর্থ থেকে ব্যাংক কোনো সুদ পায় না।

এ অর্থ যেন অনুৎপাদনশীল খাতে গিয়ে মূল্যস্ফীতি ওপর চাপ তৈরি করতে না পারে সে জন্য এভাবে টাকা তোলা হচ্ছে।

এসআই/এসএম