লুব-রেফের লটারি ২৩ ফেব্রুয়ারি, এনআরবিসির ৩ মার্চ
লুব-রেফ বাংলাদেশ লিমিটেডের এবং এনআরবি কমার্শিয়াল (এনআরবিসি) ব্যাংকের প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) সাবস্ক্রিপশন শেষ হয়েছে। এখন কোম্পানি দুটির লটারির তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
এর মধ্যে আইপিওর বুকবিল্ডিং পদ্ধতিতে আসা ‘বিএনও’ ব্রান্ডের লুব্রিক্যান্ট কোম্পানি লুব-রেফের লটারি অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি এবং ব্যাংক খাতের অপর কোম্পানির এনআরবি কমার্শিয়াল (এনআরবিসি) ব্যাংকের লটারি আগামী ৩ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে। ওইদিন বিজয়ীদের নাম প্রকাশ করা হবে। তারপর বিজয়ীদের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) অ্যাকাউন্টে শেয়ার জমা দেওয়া হবে। এরপর পুঁজিবাজারের লেনদেন শুরু করবে কোম্পানি দুটি। কোম্পানি দুটির কর্মকর্তরা বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন।
বিজ্ঞাপন
লুব-রেফ বাংলাদেশ লিমিটেডের সিএফও মফিজুর রহমান বলেন, আমরা স্টক এক্সচেঞ্জ এবং কমিশনের কাছে ২৩ ফেব্রুয়ারির জন্য আবেদন করেছি। আর এনআরবিসির এক কর্মকর্তা বলেন, ৩ মার্চ লটারির দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। ওই দিন সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে থেকে বিজয়ীদের নাম প্রকাশ করা হবে।
কোম্পানির তথ্য মতে, লুব-রেফ বাংলাদেশ লিমিটেডের আইপিও বরাদ্দকৃত ২ কোটি ২৬ লাখ ২১ হাজার ৫৪৪টি শেয়ার পেতে ১৪ লাখ ১ হাজার ৩৬১ আবেদন জমা পড়েছে। এই পরিমাণ আবেদন পুঁজিবাজারের জন্য নতুন রেকর্ড। বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে পুঁজিবাজার থেকে ১৫০ কোটি টাকা উত্তোলনের লক্ষ্য ছিল প্রতিষ্ঠানটির। ২ কোটি ২৬ লাখ ২১ হাজার ৫৪৪টি শেয়ার ২৭ টাকা দরে বিক্রি করে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ৬১ কোটি ৭ লাখ ৮৩ হাজার ২০০ টাকা সংগ্রহ করবে কোম্পানিটি। কোম্পানি শেয়ার পেতে ১৪ লাখ আবেদনের জন্য মোট ৭৫৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা জমা পড়েছে।
বিজ্ঞাপন
২৭ টাকা মূল্যের শেয়ার পেতে তিন ক্যাটাগরির সাধারণ বিনিয়োগকারী আবেদন করেছেন। এর মধ্যে বরাদ্দ করা আইপিওর শেয়ার পেতে ১১ লাখ ৯৫ হাজার ৯৫৬ জন দেশি সাধারণ বিনিয়োগকারী আবেদন করেছেন। যা টাকার অংকে দাঁড়ায় ৬৪৫ কোটি ৮৫ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ প্রয়োজনের তুলনায় ১৬ গুণ বেশি আবেদন। একই সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের আবেদন জমা পড়ে ৯৯ হাজার ৫৭৪টি। তাদের অর্থের পরিমাণ ৫৩ কোটি ৭৭ লাখ ২৬ হাজার ৬০০ টাকা। যা প্রয়োজনের তুলনায় ৫ দশমিক ৫০ গুণ বেশি।
এছাড়াও এনআরবি অর্থাৎ প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের আবেদন জমা পড়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ৮১৩টি। যা টাকার অংকে ৫৭ কোটি ১৮ লাখ ৩৮ হাজার ৪০০ টাকার আবেদন এবং প্রয়োজনের তুলনায় ৪ দশমিক ৬৮গুণ বেশি।
আর বাকি ২ কোটি ২৬ লাখ ২১ হাজার ৫৪৪ শেয়ার ইস্যু করে কোম্পানিটির বিডিংয়ে যোগ্য বিনিয়োগকারীদের মধ্য থেকে ৮৮ কোটি ৯২ লাখ ১৬ হাজার ৮০০ টাকা সংগ্রহ করবে। নিলামে কোম্পানিটির কাট-অফ প্রাইস নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ টাকা। তারপর সেখান এখান থেকে ১০ শতাংশ ডিসকাউন্ট করে অর্থাৎ ২৭ টাকায় আইপিওতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে শেয়ার বিক্রি করছে কোম্পানিটি।
পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি গত ২১ আগস্ট লুব-রেফকে আইপিওর মাধ্যমে শেয়ার ছেড়ে পুঁজিবাজার থেকে ১৫০ কোটি টাকা সংগ্রহের প্রাথমিক অনুমোদন দেয়। নতুন যন্ত্রপাতি কিনে ব্যবসা সম্প্রসারণ, ব্যাংক ঋণ পরিশোধ এবং আইপিও খাতে এ অর্থ ব্যয় হবে।
২০০১ সালের ১৮ নভেম্বর ব্যবসার অনুমোদন পাওয়া বিএনও লুব্রিকেন্টসের কার্যক্রম শুরু হয় ২০০৬ সালের ১৮ ডিসেম্বর। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান পণ্য হচ্ছে- ইঞ্জিন অয়েল, গিয়ার লুব্রিকেন্ট, হাইড্রলিক অয়েল, ট্রান্সফর্মার অয়েল ও গ্রিজ।
২০১৯ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত অর্থবছরে কোম্পানিটি ১৫৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করে লুব-রেফ ২০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা মুনাফা করেছে। এ কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ এবং চেয়ারম্যান রুবিয়া নাহার।
অপর দিকে এনআরবি কমার্শিয়াল (এনআরবিসি) ব্যাংকের আইপিওর আবেদনে চাহিদার তুলনায় ১০ দশমিক ৮৬ গুণ বেশি আবেদন জমা পড়েছে। গত ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি বিনিয়োগকারীরা এ আবেদন করেছেন।
ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতিতে ১২ কোটি সাধারণ শেয়ার ইস্যু করার জন্য আইপিও আবেদন গ্রহণ করে এনআরবিসি ব্যাংক। সর্বমোট ১২০ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে ব্যাংকটি। প্রতিটি শেয়ারের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ টাকা। ইলেক্ট্রনিক্স সাবস্ক্রিপশন পদ্ধতিতে ৩ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আবেদন সংগ্রহ করা হয়।
সূত্র জানায়, সর্বমোট ১২০ কোটি টাকা শেয়ারের মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিতরণ করা হবে ৬০ শতাংশ বা ৭২ কোটি টাকা। বাকি ৪০ শতাংশ শেয়ার পাবেন উপযুক্ত প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। সাধারণ বিনিয়োগকারী ক্যাটাগরির মধ্যে বাংলাদেশি সাধারণ জনগণের জন্য বরাদ্দ ৪০ শতাংশ বা ৪৮ কোটি টাকা। এই ৪৮ কোটি টাকার শেয়ার পেতে আবেদন করেছেন ১০ লাখ ৪৩ হাজার ৩০৩ জন। তাদের আবেদনের বিপরীতে জমা হয়েছে ৫২১ কোটি ৭০ লাখ ৫০ হাজার টাকা, যা তাদের জন্য বরাদ্দের ১০ দশমিক ৮৬ গুণ বেশি।
বাংলাদেশি সাধারণ জনগণ, ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারী ও প্রবাসী বাংলাদেশি ক্যাটাগরিতে বরাদ্দকৃত ৭২ কোটি টাকার শেয়ার পেতে ৫৯৭ কোটি ৭৭ লাখ টাকা জমা পড়েছে। অর্থাৎ বরাদ্দের তুলনায় আবেদন পড়েছে ৮ দশমিক ৩০ গুণ।
এমআই/এনএফ