১৯৯৬ ও ২০১০ সালের ধসের মত পুঁজিবাজার আর হবে না। আপনাদের আর সে রকম পরিস্থিতি দেখতে হবে না বলে মন্তব্য করেছেন স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান।

তিনি বলেন, ভারতের তুলনায় আমাদের পুঁজিবাজারে বেশ কিছু দুর্বলতা রয়েছে। এটা ঠিক, কিন্তু বর্তমান কমিশনের সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের কারনে সুশাসন নিশ্চিত হয়েছে, যা পুঁজিবাজারে সুবাতাস নিয়ে এসেছে।

বাজারে অনেক আইন-কানুন পরিবর্তন করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কারসাজি হচ্ছে কিনা তা দেখা যাচ্ছে। কেউ কারসাজি করে পার পাবে না।

বুধবার (২০ জানুয়ারি) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) নিকুঞ্জ ভবনে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন সাবেক সচিব ইউনুসুর রহমান।

সূচনা বক্তব্যে তিনি বলেন, করোনা মাহামারিতে পুঁজিবাজার বন্ধ ছিল ৬৬ দিন। পরে পুঁজিবাজারের লেনদেন শুরু হওয়ার পর সীমিত আকারে চলে কার্যক্রম। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি সহায়তা, বিএসইসির সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের কারণে সুশাসন নিশ্চিত হয়েছে, যা পুঁজিবাজারে সুবাতাস নিয়ে এসেছে।

তিনি বলেন, শিগগিরই ডিএসই ভবন একটি অর্থনৈতিক হাবে পরিণত হবে। আমরা তথ্য প্রযুক্তিতে এখনও কিছুটা পিছিয়ে আছি সত্য। তবে চীনের সঙ্গে আমরা প্রযুক্তি উন্নয়নে কাজ করছি।

চেয়ারম্যান বলেন, বর্তমানে ডিএসই নাসডাকের সঙ্গে সফটওয়্যারের চুক্তি রয়েছে। এ চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে ২০২৪ সালে। তারপর আমরা চীনের থেকে নতুন প্রযুক্তি নিয়ে আসবো, তখন আর এ সমস্যা হবে না।

ঊর্ধ্বমুখী পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের কোনো ঝুঁকি আছে কিনা বিষয়ে ডিএসই পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, বিনিয়োগকারীদের কখনও বলা হয় না, কোথায় কখন বিনিয়োগ করবেন। বর্তমান সার্ভিল্যান্স সিস্টেম অনেক শক্তিশালী। কোন খাতের শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক বাড়লে তার কারণ দর্শানো হয়। ফলে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে বিনিয়োগকারীদের সচেতন হতে হবে।

তিনি বলেন, আগে শেয়ারের অর্ডার আসতো মার্কেট লট হিসেবে। এখন একটি হিসেবে আসে। ফলে দিনে প্রচুর অর্ডার আসে। প্রযুক্তি খাতের সমস্যার জন্য এটি একটি বড় কারণ। তবে আগামী দুই বছরের মধ্যে আমরা আরও ভালো সেবা দিতে পারবো।

ডিএসই আরেক পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, ২০১০ সালে আমরা বিনিয়োগকারীদের মার্জিন লোন নিয়ে পুঁজিবাজারে না আসতে বলেছিলাম। কিন্তু তখন তা মানা হয়নি। তবে সে সময়ের তুলনায় এখন পুঁজিবাজার অনেক শক্তিশালী।

তিনি বলেন, লেনদেন যোগ্য শেয়ার সবচেয়ে বেশি ব্যাংকের। প্রায় ৭০ শতাংশ ব্যাংকের শেয়ার বিনিয়োগকারীদের হাতে। এক সময় ব্যাংকগুলো বেশি বেশি বোনাস দিয়ে পরিচালকরা টাকা নিয়ে যেত। এখন তারা ১০ টাকার শেয়ার কেনেন না। তাই এ খাতে সুশাসন খুবই জরুরি।

তিনি বলেন, আল্লাহরওয়াস্তে আপনারা না জেনে, না বুঝে পুঁজিবাজারে আসবেন না। আপনারা ক্ষতিগ্রস্ত হলে কেউ দায়িত্ব নেবে না। আমাদের ভয় হচ্ছে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ৯০ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে, যেখানে উন্নত দেশের কোম্পানির শেয়ারের সিংহভাগ থাকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে।

এ সময় ডিএসই পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহানসহ প্রতিষ্ঠানটির স্বাধীন পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।

এক প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান বলেন, এক্সচেঞ্জ ও কমিশনের মধ্যে সম্পর্ক এখন খুবই ভালো। তবে ৯৬ আর দেখতে হবে না।

তিনি বলেন, বীমা সম্পর্কে আইডিআরএ যে নির্দেশনা দিয়েছে তার ব্যাখ্যা ওই সংস্থা দিতে পারবে। তবে বিনিয়োগকারীদের সব কিছুর ব্যাখ্যা জেনে শেয়ার কেনা উচিত।

চেয়ারম্যান বলেন, ডিএসইর কোনো ডিজাস্টার রিকভারি সাইট নেই। সফটওয়্যারের যে সমস্যা সেটা আমাদের সামনে এসেছে মাস তিনেক আগে। এর পরিপ্রেক্ষিতে নিকুঞ্জে কাযর্ক্রম চলছে। আগামী জুনের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।

এমআই/এসএম