করোনার কারণে বাতিল হওয়া ২০২০ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশের জন্য পুরোদমে প্রস্তুত আন্তঃশিক্ষা বোর্ডগুলো। সংসদে উত্থাপিত এ সংক্রান্ত তিনটি বিল পাস হওয়ার পর তা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে। গেজেট প্রকাশের তিন দিনের মধ্যে ফল প্রকাশ করা হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) সকালে পরীক্ষা ছাড়াই এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করার জন্য জাতীয় সংসদে উত্থাপিত তিনটি বিল পাস করানোর সুপারিশ করেছে এ সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি। বিল তিনটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি পাসের সুপারিশ করেছে। সকালে সংসদীয় কমিটির সভাপতি ফজলে হোসেন বাদশা প্রতিবেদন উপস্থাপন করে বিল তিনটি পাসের সুপারিশ করেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, বিলটি পাস করতে সংসদের সামনে এখন মাত্র একটি ধাপ বাকি। সংসদ সদস্যের কাছে বিলটি নিয়ে সম্পূরক কোনো প্রশ্ন থাকলে সেই প্রশ্নের জবাব দেওয়া। না হলে বিলটি পাসের জন্য সংসদ সদস্যের সামনে ভোটে দেবেন জাতীয় সংসদের স্পিকার।

সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে পাস হলে একই দিনের মধ্যে তা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিলের আলোকে ফলাফল প্রকাশের জন্য একটি বিশেষ কমিটি গঠন করবে। সেই কমিটি সব আইন কানুন পর্যালোচনা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে ফল প্রকাশের সুপারিশ করবে। এরপর প্রধানমন্ত্রীর কাছে ফল প্রকাশের জন্য সময় আবেদন করে তার সম্মতিতে ফল প্রকাশ করা হবে। তবে এসব প্রক্রিয়া শেষ করতে দুই-তিন দিনের বেশি লাগবে না। অর্থাৎ গেজেট প্রকাশের তিন দিনের মধ্যে ফল প্রকাশ করা হবে। 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আন্তঃশিক্ষাবোর্ডের সমন্বয়ক ও ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর নেহাল আহমেদ বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা সংসদের দিকে তাকিয়ে আছি। বৃহস্পতিবার সংসদীয় কমিটি যাচাই-বাছাই করে বিলটি পাস করার সুপারিশ করেছে। আশা করছি এক-দুইদিনের মধ্যে বিলটি পাস হবে।

তিনি জানান, বিলটি গেজেট হিসেবে প্রকাশ হওয়ার তিন দিনের মধ্যে ফল প্রকাশ করার সব ধরনের প্রস্তুতি আমাদের আছে। তবে তার আগে বিলের বিষয়ে মতামত নেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ের একটি কমিটি গঠন হবে। তারা সব কিছু দেখে মন্ত্রণালয়ের কাছে ফল প্রকাশের সুপারিশ করবে। তবে আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত।

মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) সংসদে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ইন্টারমিডিয়েট অ্যান্ড সেকেন্ডারি অ্যাডুকেশন (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল-২০২১, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড (সংশোধন) বিল-২০২১, বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড (সংশোধন) বিল-২০২১ সংসদে উত্থাপন করেন। পরে ইন্টারমিডিয়েট অ্যান্ড সেকেন্ডারি অ্যাডুকেশন বিলটি একদিনের মধ্যে এবং বাকি দুটি দুদিনের মধ্যে পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।

১১ জানুয়ারি (সোমবার) মন্ত্রিসভায় করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারির কারণে পরীক্ষা ছাড়া এইচএসসি বা উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশে শিক্ষা বোর্ডগুলোর সংশোধিত আইন চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। সংশোধিত আইনে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারির কারণে পরীক্ষা ছাড়া এইচএসসি বা উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশে শিক্ষা বোর্ডগুলোকে ক্ষমতা দেওয়া হয়।

বৈঠক শেষে সচিবালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেছিলেন, ২০২০ সালের এইচএসসি পরীক্ষা না নিয়ে বিকল্প পদ্ধতিতে যে ফল দেওয়া হবে তার জন্য শিক্ষাবোর্ডের আইন সংশোধন প্রয়োজন। সেজন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিশেষ অধ্যাদেশের জন্য মন্ত্রিসভার অনুমোদন চায়। কিন্তু ক্যাবিনেটে আলোচনার পর দেখা গেল আর মাত্র ৭ দিন পর সংসদ বসবে।

পার্লামেন্ট যেহেতু অলরেডি কল করা হয়েছে, এর আগেও পার্লামেন্ট কল করার পরেও হয়েছে, এটা যেহেতু একেবারেই কাছে। ক্যাবিনেট সিদ্ধান্ত দিয়েছে দরকার নেই, এখন যদি আমরা অর্ডিন্যান্স করি তবে আবার অর্ডিন্যান্স গিয়ে পার্লামেন্ট থেকে এসে ভেটিং করতে করতে সময় পাওয়া যাবে না। কারণ মাত্র ১০ দিন পার্লামেন্ট বসবে। অধিবেশনেই প্রথম দিনই পাস করে ফেলা হবে।’ সেজন্য এটি এখন সংসদে যাবে।

এনএম/এসএম