স্বামী বাবুল আক্তারের সঙ্গে মাহমুদা খানম মিতু। কে জানত স্বামীর পরিকল্পনায় খুন হবেন তিনি

মাহমুদা খানম মিতু হত্যাকাণ্ডে গ্রেফতার হয়েছেন সাবেক পুলিশ সুপার স্বামী বাবুল আক্তার। গ্রেফতারের পর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) দিয়েছেন ঢাকার ভুল ঠিকানা। পরে সঠিক ঠিকানা দিলেও তার দুই সন্তান ও নতুন স্ত্রীর সন্ধান পায়নি তদন্তকারী দল।

অন্যদিকে, নিহত মিতুর বাবা-মা দুই সন্তানের দায়িত্ব পেতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এ অবস্থায় মিতুর দুই সন্তান এখন কোথায় এবং তারা কাদের কাছে আছে— বিষয়টি নিশ্চিত হতে পারেনি তদন্ত সংস্থা পিবিআই।

পিবিআই সূত্রে জানা গেছে, বাবুল আক্তার তার বাসার ভুল ঠিকানা দিয়েছেন। মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় যে মামলা করেছেন, সেখানেও উঠে এসেছে ভুল ঠিকানা।

এজাহারের তথ্য অনুযায়ী, বাবুল আক্তারের বাসার ঠিকানা লেভেল-৭, সড়ক নম্বর-১১, বাসা নম্বর-২২, ব্লক সি, বাবর রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা। গতকাল শুক্রবার পিবিআই তদন্ত দলের বিষয়টি নজরে আসে। সেখানে গিয়ে বাবুল আক্তারের দুই সন্তান বা পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে আজ (শনিবার) পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, পরিদর্শনে ভুল ঠিকানার বিষয়টি জানার পর বাবুল আক্তারকে ফের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তিনি পরে সঠিক ঠিকানা দেন। কিন্তু আমরা সেই ঠিকানায় বাবুল আক্তারের দুই সন্তান ও বর্তমান স্ত্রীর সন্ধান পাইনি। তারা এখন কোথায় আছে সেটাও জানা যায়নি।

মিতু-বাবুল আক্তারের দুই সন্তান। মিতুর মা শায়লা মোশাররফ চান, তারা যেন তাদের কাছেই থাকুক   

অন্যদিকে, মিতুর মা শায়লা মোশাররফ ঢাকা পোস্টকে বলেন, মিতু আমার প্রথম ও বড় সন্তান। মিতুর ছেলে মাহির আমার প্রথম নাতি। দুই নাতি-নাতনি খালা সুহাইলাকে বেশি ভালোবাসে। একমাত্র খালা ওদের আগলে রাখতে চায়। আমরা নানা-নানি তো আছি।

তিনি বলেন, বাবুল আক্তার আমাদের বাসা ছেড়ে যাওয়ার পর আর যোগাযোগ রাখেনি। দুই নাতি-নাতনিকে দেখতে পর্যন্ত দেয়নি। আজ মিতু কবরে, বাবুল জেলে। এ অবস্থায় দুই নাতি-নাতনিকে কে দেখবে? আমরা ওদের দায়িত্ব চাই। ওদের ঘনিষ্ঠ স্বজন বলতে আমরাই। আমরা মিতুর সন্তান দুটোকে চাই। সাড়ে তিন বছর ধরে আমি ওদের দেখি না। মিতুর মৃত্যুর পর বাবুল তিন বিয়ে করে। শুনেছি, বর্তমান স্ত্রী বাচ্চাদের অত্যাচার করে। আমি ওদের আমার বুকে চাই। এজন্য আমি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করি।

‘মিতু খুন হয়েছেন। বাবুল আক্তার খুনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতারের পর পুলিশি হেফাজতে রয়েছেন। এ অবস্থায় দুই সন্তানের দেখভাল কে করবে’— এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না? জানতে চাইলে পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একই প্রশ্ন আমাদের করেছেন। আগে বাবুল আক্তারের দুই সন্তানকে খুঁজে বের করব। তার (বাবুল আক্তার) কাছে জানতে চাইব দুই সন্তানের অভিভাবকত্বের বিষয়ে তার ইচ্ছার কথা। এরপর আদালতের বিষয় তো আছেই। দু-এক দিনের মধ্যে এ ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

গ্রেফতারের পর পিবিআই হেফাজতে বাবুল আক্তার

২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে খুন হন মিতু। কুপিয়ে ও গুলি করে তাকে হত্যা করা হয়। ওই সময় ঘটনাটি দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়।

ঘটনার সময় মিতুর স্বামী পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার অবস্থান করছিলেন ঢাকায়। পরে চট্টগ্রামে ফিরে তিনি পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমের জন্য স্ত্রীকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বলে মামলায় অভিযোগ আনেন বাবুল আক্তার। তবে দিন যত গড়িয়েছে মামলার গতিপথও পাল্টেছে। একপর্যায়ে সন্দেহের কেন্দ্রবিন্দুতে আসে স্বামী বাবুল আক্তারের নাম। তদন্তে তার বিরুদ্ধে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার সংশ্লিষ্টতা পায় পিবিআই। গত মঙ্গলবার (১১ মে) তাকে ডেকে এনে হেফাজতে নেয় তদন্ত সংস্থা।

গত বুধবার (১২ মে) দুপুরে বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন মিতুর বাবা। মামলায় আসামি করা হয় আরও সাতজনকে। তারা হলেন- কামরুল ইসলাম মুছা, কালু, ওয়াসিম, শাহজাহান, আনোয়ার, এহতেসামুল হক ভোলা ও সাকি।

জেইউ/এসকেডি/এমএআর/