এএনসি মেডিকেল ডিভাইস বিডি লিমিটেডে কর্মীরা/ ছবি- ঢাকা পোস্ট

দেশেই বিশ্বমানের মেডিকেল ডিভাইস নিয়ে আসছে ‘এএনসি মেডিকেল ডিভাইস বিডি লিমিটেড’ নামক বাংলাদেশি একটি প্রতিষ্ঠান। তাদের দাবি, এখন পর্যন্ত ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য বাংলাদেশে আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকলেও স্থানীয় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলাে প্রয়ােজনীয়তার মাত্র ১০ ভাগ পণ্য যােগান দিচ্ছে। বাকি ৯০ ভাগ পণ্যের জন্য বাংলাদেশ সম্পূর্ণভাবে আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভরশীল। এ অবস্থায় এএনসি অগ্রগণ্য ভূমিকা নিতে আরও জোরালােভাবে এগিয়ে এসেছে।

শনিবার (৬ মার্চ) দুপুরে স্বাস্থ্য বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ‘হেলথ জার্নালিস্ট বাংলাদেশ’র সদস্যদের কারখানা পরিদর্শনের সময় প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, কোভিড ১৯ মহামারি স্বাস্থ্যসেবার দুটি অপরিহার্য উপাদান হিসেবে ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য এবং মেডিকেল ডিভাইসের গুরুত্বের চিত্র নতুনভাবে সামনে এনেছে। চলমান টিকা কর্মসূচি এর প্রয়োজনীয়তা আরও প্রকট আকারে সামনে এনেছে। ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য বাংলাদেশের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে আছে। বিশ্বের শতাধিক দেশে ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য রফতানির সম্ভাবনাও রয়েছে। দুর্ভাগ্যক্রমে মেডিকেল ডিভাইস উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পিছিয়ে রয়েছে। বাংলাদেশের স্থানীয় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলাে প্রয়ােজনীয়তার মাত্র ১০ শতাংশ যােগান দিচ্ছে। বাকি ৯০ শতাংশের জন্য বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাজারের উপর নির্ভরশীল।

সাংবাদিকদের কারখানা পরিদর্শনের পর

এএনসি মেডিকেল ডিভাইস বিডি লিমিটেড আরও জানায়, প্রায় সমস্ত মেডিকেল ডিভাইস বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। এএনসিসহ কেবল মাত্র চারটি বড় দেশীয় প্রতিষ্ঠান মেডিকেল ডিভাইস উৎপাদন করছে। আন্তর্জাতিক মানের সার্জিকাল ডিভাইস উৎপাদনের মাধ্যমে দেশীয় চাহিদার ঘাটতি পূরণ করতে, এএনসি অগ্রগণ্য ভূমিকা নিতে চলেছে।

প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন) মাে. মােস্তফা জামান বলেন, এএনসি হলাে আমাদের টানা ৪ (চার) বছরের নিরলস পরিশ্রমের ফল। আমি আত্মবিশ্বাসী- এএনসি বাংলাদেশের মেডিকেল ডিভাইস বাজারে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।

তিনি আরও বলেন, এএনসির মূল লক্ষ্য নিরাপদ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে উদ্ভাবনী প্রযুক্তি প্রয়ােগের মাধ্যমে বিশ্বমানের মেডিকেল এবং সার্জিকাল ডিভাইস তৈরি করা।

তিনি জানান, এএনসি জিএমই গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান। ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত গ্রাফিক মেশিনারি অ্যান্ড ইকুপমেন্ট (জিএমই) গ্রুপ গত ৩০ বছর ধরে বিশ্বমানের মেডিকেল ও সার্জিক্যাল সরঞ্জাম সরবরাহের মাধ্যমে দেশের স্বাস্থ্য খাতে সেবা দিচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন এবং ভারতের প্রযুক্তিগত সহযােগিতা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।

মােস্তফা জামান বলেন, জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার পাশাপাশি এএনসি এই উদ্যোগের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করবে, যা জাতীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে। এএনসি বাংলাদেশের স্থানীয় জনগণের জন্য ৩ হাজার কর্মসংস্থানের সুযােগও সৃষ্টি করছে। এএনসি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে উৎপাদিত পণ্য রপ্তানির কথা বিবেচনা করছে। এএনসি ০.৫ মিলি অটো-ডিসেবল সিরিঞ্জ তৈরি করছে।

বর্তমানে এএনসি ডিজিডিএ থেকে অনুমােদন প্রাপ্ত ২২টি পণ্যের মধ্যে ৫টি পণ্য (তিন ধরনের ডিসপােজেবল সিরিঞ্জ, অ্যালকোহল প্রি-প্যাড এবং ভ্যাকুয়াম রক্ত সংগ্রহ টিউব) উৎপাদন করে বাজারজাত করছে। অনুমােদনপ্রাপ্ত ২২টি পণ্যের মধ্যে আছে বিভিন্ন ধরনের ডিসপােজেবল সিরিঞ্জ, ইনসুলিন সিরিঞ্জ, ভ্যাকুয়াম রক্ত সংগ্রহ টিউব, ডিসপােজেবল সুই, ইনফিউশন সেট, অ্যালকোহল প্রি-প্যাড, ফার্স্ট এইড ব্যান্ডেজ, স্কাল্প ভেইন সেট বা বাটারফ্লাই নিডেল, ব্লাড কালেকশন স্ট্রেইট নিডেল বা ফ্ল্যাশব্যাক, ব্লাড কালেকশন বাটারফ্লাই নিডেল, আইভি ক্যানুলা, দুটি ধরণের এডি সিরিঞ্জ, বুরেট সেট, আম্বিলিক্যালকর্ড ক্ল্যাম্প, ব্লাড ট্রান্সফিউশন সেট এবং স্পাইনাল নিডেল।

এএনসিই বাংলাদেশের প্রথম ভ্যাকুয়াম ব্লাড কালেকশন টিউব প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি আশাবাদী যে, আগামী তিন বছরের মধ্যে তারা স্থানীয় চাহিদা পূরণে সক্ষম হবে।

প্রতিষ্ঠানটির জেনারেল ম্যানেজার (উৎপাদন) ড. বিজয় কুমার শর্মা বলেন, আমি ভারতে ৩৭ বছর ধরে মেডিকেল ডিভাইস সেক্টরে কাজ করেছি। আমার দীর্ঘ কার্য সময়ে ভারতের বেশ কয়েকটি প্রথম সারির মেডিকেল ডিভাইস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করেছি। তবে আমি এএনসি মেডিকেল ডিভাইস বিডির মতাে এমন আধুনিক এবং সুপার স্ট্রাকচার্ড মেডিকেল ডিভাইস কারখানা দেখিনি।

মার্চ মাসের ২ তারিখে কারখানা পরিদর্শন শেষে ভারতের সাবেক ডেপুটি ড্রাগস কন্ট্রোলার মলয় কুমার মিত্র বলেন, বাংলাদেশ সরকারের ডিজিডিএ-র বিধি মােতাবেক এএনসি মেডিকেল ডিভাইস একটি সুন্দর এবং সুপার স্ট্রাকচার্ড মেডিকেল ডিভাইস কারখানা স্থাপন করেছে, যা বাংলাদেশ মেডিকেল ডিভাইস বাজারে মাইলফলক হয়ে থাকবে।

প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. চৌধুরী হাসান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশে ২০ হাজার কোটি টাকার একটি মেডিকেল ডিভাইসের বাজারে রয়েছে। অথচ বিনিয়ােগকারী শিল্পপতিরা এই মেডিকেল ডিভাইস খাতে বিনিয়ােগ করতে আগ্রহী নয়। বাংলাদেশের মেডিকেল ডিভাইস সেক্টর সম্প্রসারণের জন্য আমি এএনসি মেডিকেল ডিভাইস বিডি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে চিকিৎসা খাতের উন্নয়নে কাজ করতে বন্ধপরিকর।

টিআই/এইচকে