প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশের সীমান্ত জেলায় কঠোর লকডাউন জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।

শনিবার (২৯ মে) দুপুরে বিএসএমএমইউয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলার সংখ্যা ৩৫টি। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, যশোর, সাতক্ষীরা, পঞ্চগড়সহ বেশ কয়েকটি জেলার মানুষ ভারতে বেশি যাতায়াত করে। ফলে এসব জেলার মানুষের ভারতের ডাবল মিউট্যান্ট ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেশি। ভারতের ভ্যারিয়েন্টটি এক থেকে ২০ জন, ২০ থেকে ৪০০ জন পর্যন্ত মানুষকে আক্রান্ত করে।

বিএসএমএমইউ উপাচার্য বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ভয়াবহতা রোধ করতে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোয় কঠোর লকডাউন বাস্তবায়ন করতে হবে। যাতে সীমান্তবর্তী জেলার মানুষ অন্য শহরে না যেতে পারে। একইসঙ্গে অন্য জেলার মানুষও যেন সীমান্তবর্তী জেলায় প্রবেশ করতে না পারে। এছাড়া ভারত থেকে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোয় বৈধ বা অবৈধভাবে বাংলাদেশে যারাই আসুক না কেন তাদের অবশ্যই কোয়ারেন্টাইনে রাখতে হবে।

তিনি বলেন, যেহেতু সীমান্তবর্তী জেলাগুলোয় করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে তাই চিকিৎসা ব্যবস্থা জোরদারের পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, কঠোর লকডাউন বাস্তবায়ন করা এবং যারা ভারত থেকে বাংলাদেশে আসছে তাদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই। একইসঙ্গে আমাদের ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বা মিউকরমাইকোসিস নিয়েও সচেতন ও সতর্ক হতে হবে।

একই মাস্ক বারবার ব্যবহারে বাড়ে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের ঝুঁকি

তিনি বলেন, ব্যবহৃত মাস্ক পরিষ্কার না করে বারবার ব্যবহার করলে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। বর্তমানে ভারতে এই ফাঙ্গাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এই ফাঙ্গাস বা ছত্রাক প্রাণীদের বিষ্ঠায়, বাসী খাবার, বাসী ফল, ফ্রিজে দীর্ঘদিন ধরে রাখা সংরক্ষিত খাদ্য সামগ্রী, অপরিষ্কার মাস্ক, অক্সিজেন ও আইসিইউয়ের হিউমিডিফায়ারের মাধ্যমে সংক্রমিত হতে পারে।

বিএসএমএমইউ ভিসি বলেন, যারা অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে ভুগছেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে ভুগছেন, ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী, অতিরিক্ত ব্রড-স্পেকট্রাম অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার, অন্তঃসত্ত্বা নারী, অত্যধিক স্টেরয়েড গ্রহণ করা রোগী, কিডনি বা অন্য অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা রোগী এবং চরম অপুষ্টিজনিত রোগীদের ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের রাইনো-অরবিটাল-সেরিব্রাল ধরনটি নাক দিয়ে ঢুকে চোখ ও মস্তিষ্কে প্রবেশ করতে পারে। তাই এই জীবাণুটি আমাদের যাতে আক্রান্ত না করে সেজন্য এখনই অধিকতর সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের উন্নত চিকিৎসায় বিএসএমএমইউয়ে মেডিকেল বোর্ড

অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত রোগীদের উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগ, কমিউনিটি অপথালমোলজি বিভাগ, নাক কান ও গলা বিভাগ, ভাইরোলজি বিভাগ, অ্যানেসথেসিয়া (আইসিইউ) বিভাগসহ বেশ কয়েকটি বিভাগের সমন্বয়ে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, বোর্ডের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করবেন। সবশেষে তিনি ব্ল্যাক ফাঙ্গাস নিয়ে জনগণকে কোনো ধরনের গুজবে কান না দিয়ে বা আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

এর আগে সকালে নিজ কার্যালয়ে অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সঙ্গে নন কোভিড রোগী এবং জরুরি চিকিৎসাসেবা প্রয়োজন এমন রোগীদের চিকিৎসাসেবা জোরদার করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

সভায় উপউপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ রফিকুল আলম, উপউপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. জাহিদ হোসেন, উপউপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, ডেন্টাল অনুষদের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী আসগর মোড়ল, বেসিক সাইন্স অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. খন্দকার মানজারে শামীম, মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মাসুদা বেগম, সার্জারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমেদ, শিশু অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. শাহীন আকতার, নার্সিং অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন, মেডিকেল টেকনোলজি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. দেবব্রত বণিক, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল হান্নান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

টিআই/এসকেডি