সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জর্জ শাল্টজ মারা গেছেন।

বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির উল্লেখযোগ্য রূপান্তরের মধ্য দিয়ে স্নায়ুযুদ্ধ অবসানের নেতৃত্ব দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জর্জ শাল্টজ মারা গেছেন। তার বয়স হয়েছিল একশ বছর। খবর ব্রিটিশ সম্প্রচারমাধ্যম বিবিসির।

বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী থিঙ্কট্যাঙ্ক হুভার ইনস্টিটিউশন জানিয়েছে, স্থানীয় সময় শনিবার ক্যালিফোর্নিয়ার স্টানফোর্ডে নিজ বাসভবনে শতবর্ষী জর্জ শাল্টজ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের তিন রিপাবলিকানদলীয় প্রেসিডেন্ট ডোয়াইট আইজেনহাওয়ার, রিচার্ড নিক্সন এবং রোনাল্ড রিগ্যানের প্রশাসনে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। 

রোনাল্ড রিগ্যান প্রশাসনের অধীনে ১৯৮০’র দশকে জর্জ শাল্টজ তার বেশিরভাগ সময় অতিবাহিত করেছে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক উন্নয়নের কাজে। 

যুক্তরাষ্ট্রের তিনজন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন জর্জ শাল্টজ।

হুভার ইনস্টিটিউশন জানিয়েছে, রাষ্ট্রনেতা জর্জ শাল্টজ ‘স্নায়ুযুদ্ধের অবসান ঘটাতে কূটনীতির সরঞ্জামাদির ব্যবহার করে ইতিহাসের দিক পরিবর্তন করতে’ সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিলেন। ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক এই থিঙ্কট্যাঙ্কে বিশিষ্ট ফেলো হিসেবে কর্মরত ছিলেন সাবেক এই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। 

হুভার ইনস্টিটিউশনের পরিচালক ও সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কন্ডেলিৎসা রাইস বলেছেন, ‘আমেরিকার মহান নেতা ছিলেন শাল্টজ এবং বিশ্বের যে কোন দৃষ্টিভঙ্গি বিবেচনায় তিনি একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিক। ‘ইতিহাসে তাকে এমন একজন হিসেবে স্মরণ করবে, যিনি বিশ্বকে আরও উন্নত স্থান হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন।’ 

কে এই জর্জ শাল্টজ

১৯২০ সালে নিউইয়র্ক শহরে জন্ম নেওয়া শাল্টজন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর হয়ে কাজ করার পূর্বে অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। 

১৯৫০ এর দশকে তিনি আইজেনহাওয়ার প্রশাসনে অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন। ১৯৬৯ সালে রিচার্ড নিক্সন প্রেসিডেন্ট হওয়ার মধ্য দিয়ে রিপাবলিকানরা হোয়াইট হাউসের দখল ফিরে পাওয়ার পর তার প্রশাসনে শ্রম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান তিনি। 

পরে তিনি নিক্সন প্রশাসনের বাণিজ্য বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং কাউন্সিল অন ইকোনোমিক পলিসির চেয়ারম্যান হন। ১৯৮২ সালে রোনাল্ড রিগ্যান তাকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেন। 

বিবাদের জন্য কুখ্যাত রোনাল্ড রিগ্যানের হোয়াইট হাউসে জর্জ শাল্টজ ছিলেন সবচেয়ে কম বিতর্কিত ব্যক্তি এবং মিত্র ও শত্রুপক্ষের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকরী ব্যক্তি হিসেবে কাজ করেছেন।

সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতা মিখাইল গর্বাচেভের সঙ্গে জর্জ শাল্টজ।

১৯৮০’র দশকের দ্বিতীয়ার্ধে জর্জ শাল্টজ তৎকালীন সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্বাচেভকে স্নায়ুযুদ্ধের উত্তেজনা কমানোর জন্য অনুরোধ করেছিলেন।

১৯৮৭ সালের মধ্যে রোনাল্ড রিগ্যান এবং মিখাইল গর্বাচেভ ‘ইন্টারমেডিয়েট রেঞ্জ নিউক্লিয়ার ফোর্সেস’ নামে যুগান্তকারী একটি অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এর কয়েক বছর পর সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ঘটে।

আশির দশকে ইরানের সঙ্গে আলোচনায় যুক্ত ছিলেন শাল্টজ। ২০১৩ সালে বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই কূটনৈতিক জানান, আলোচনার জন্য ইরান একটি খুবই শক্ত প্রতিপক্ষ। তিনি বলেছিলেন, ইরানিরা ‘হাসতে হাসতে আপনাকে উৎসাহিত করার মাধ্যমে আপনার গলা কেটে ফেলার ব্যাপারে তারা খুব পারদর্শী।’ 

এএস