পদ্মা নদীর ইলিশ সরিয়ে নিতে ভারতের বহুল আলোচিত ফারাক্কার নতুন ‘নেভিগেশনাল লক’ নামে বিশেষ একটি করিডর তৈরির কাজ আগামী জুনে সম্পন্ন হতে পারে বলে জানিয়েছে নয়াদিল্লি। এই নেভিগেশনাল লক তৈরির কাজ শেষ হয়ে গেলে বাংলাদেশের পদ্মা নদীর ইলিশ পানির স্রোতের সঙ্গে ভারতীয় অংশে ঢুকে পড়ার পর সেখানে আটকা পড়বে। এর ফলে দেশটিতে ইলিশের উৎপাদন বেড়ে যাবে— এমন দাবি করেছে ওই লক তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান লার্সেন অ্যান্ড টুব্রো লিমিটেডের মালিকানাধীন এল অ্যান্ড টি জিওস্ট্রাকচার।

সংস্থাটির এক কর্মকর্তা বলেছেন, এই নেভিগেশনাল লক তৈরি হয়ে গেলে ফারাক্কা থেকে উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজ পর্যন্ত ইলিশের জোগান বাড়বে। বাংলাদেশ থেকে ইলিশ মাছ গঙ্গার উজান বেয়ে চলে আসবে ভারতের দিকে।

বর্তমানে ফারাক্কা বাঁধের স্লুইস গেটটির পানির স্তর যেখানে রয়েছে, এই লক তৈরি হয়ে গেলে সেটি বৃদ্ধি পাবে। যার অর্থ, স্লুইস গেট এতদিন যতটা খোলা থাকছিল, তারচেয়ে অনেকটা বেশি খোলা হবে এবং তা প্রতিদিন চার ঘণ্টার জন্য সেটি খোলা থাকবে। 

দেশটির এই বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তাদের দাবি, এর ফলে পদ্মা নদীর নোনা পানি থেকে গঙ্গা নদীর মিষ্টি পানিতে সাঁতার কেটে আরও বেশি সংখ্যক ইলিশের চলে আসার সম্ভাবনা বাড়বে। এই পরিস্থিতিতে গঙ্গায় ইলিশ মাছের ডিম পাড়ার সম্ভাবনাও বাড়বে।

সংস্থাটি বলছে, ১৯৭৬ সালে ফারাক্কা বাঁধের প্রথম নেভিগেশনাল লক তৈরির পরে প্রয়াগরাজ পর্যন্ত ইলিশ মাছের যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। ফারাক্কায় নতুন নেভিগেশনাল লক চলতি বছরের জুন থেকে খুলে দেওয়ার কথা রয়েছে। এই লক তৈরির কাজের দায়িত্ব দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের ইনল্যান্ড ওয়াটার ওয়েজ অথরিটি ওই বেসরকারি সংস্থাকে দেওয়া হয়েছে।

সংস্থাটির সূত্রগুলো বলছে, ফারাক্কা বাঁধের ফিডার খালের ওপর নেভিগেশনাল লকটি এখন তৈরি হচ্ছে। বর্তমান লক গেইটটি ১৯৭৮ সাল থেকে চালু রয়েছে। নতুন নেভিগেশনাল লক তৈরির ক্ষেত্রে আধুনিক ইলেক্ট্রো হাইড্রোলিক প্রযুক্তির ব্যবহার করা হবে। এর সঙ্গে প্রতিটি লক গেইটকে কন্ট্রোল রুম থেকে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।

কলকাতা থেকে ২৮০ কিলোমিটার দূরে ফারাক্কা বাঁধের নেভিগেশনাল এই লক তৈরি হলে কলকাতা বন্দরও লাভবান হবে বলে মনে করছেন এল অ্যান্ড টি জিওস্ট্রাকচারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এস কানাপ্পান।

তিনি বলেন, ‌‘আমরা খুশি যে এই নেভিগেশনাল লক তৈরির দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকার আমাদের দিয়েছে। এর ফলে গঙ্গার পরিবেশ এবং অভ্যন্তরীণ প্রাণীদের জীবনেরও পার্থক্য তৈরি হবে। সঙ্গে জাহাজ যাত্রার পথও সুগম ও দ্রুত হবে।’ নতুন নেভিগেশনাল লকটি দৈর্ঘ্য ২৫০ মিটার, উচ্চতা ২৫ মিটারের কিছু বেশি বলে সংস্থাটি জানিয়েছে। আনন্দবাজার।

এসএস