ব্রিটেনের ওষুধপ্রস্তুতকারক কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে করোনাভাইরাসের যে ভ্যাকসিন তৈরি করেছে; সেই ভ্যাকসিনটি শিশুদের শরীরে নিরাপদ কিনা এবং কী ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখায় প্রথমবারের মতো তা মূল্যায়নের জন্য একটি গবেষণা শুরু করছে।

শনিবার অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এক ই-মেইল বার্তায় বলছে, নতুন মধ্যবর্তী এই পরীক্ষায় ভ্যাকসিনটি ৬ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের শরীরে কার্যকর কিনা তা শনাক্ত করবে। প্রায় ৩০০ জন স্বেচ্ছাসেবককে এই পরীক্ষা কার্যক্রমের অন্তর্ভূক্ত করা হবে এবং চলতি মাসে প্রথম ডোজ দেয়া হতে পারে— প্রত্যাশা অক্সফোর্ডের।

অ্যাস্ট্রাজেনেকা-অক্সফোর্ডের তৈরি করোনার দুই ডোজের এই ভ্যাকসিন অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় সস্তা এবং বিতরণে সহজ হওয়ায় ‌‘বিশ্বের ভ্যাকসিন’ হিসেবে প্রশংসিত হচ্ছে। কিন্তু ইউরোপ এবং বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে তড়িঘড়ি করে অনুমোদন পাওয়ায় ভ্যাকসিনটির কার্যকর ডোজ এবং দুই ডোজের ব্যবধানের সময় নিয়ে সন্দেহ দানা বাধছে।

ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে দেখা গেছে, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাটির প্রথমে আধা ডোজ এবং পরে পুরো ডোজ দেয়া হলে তার কার্যকারিতা ৯০ শতাংশ।

চলতি বছরে ৩০০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন তৈরির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা। একই সঙ্গে বিশ্বজুড়ে মহামারি মোকাবিলায় আগামী এপ্রিল মাসের মধ্যে সরবরাহ দ্বিগুণ করে প্রত্যেক মাসে ২০ কোটি ডোজে উন্নীত করার অঙ্গীকার করেছেন ব্রিটিশ এই ফার্মাসিউটিক্যালস জায়ান্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) প্যাসকল সোরিওট।

সম্প্রতি এক পরীক্ষায় দেখা যায়, করোনাভাইরাসের অতিসংক্রামক দক্ষিণ আফ্রিকার ধরনটির বিরুদ্ধে এই ভ্যাকসিন কম কার্যকর। একই সময়ে ভ্যাকসিন সরবরাহে বিলম্ব নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টানাপোড়েনও শুরু হয়।

প্যাসকল সোরিওট বলেন, ‘ভ্যাকসিনটি কি নিখুঁত? না, এটি নিখুঁত নয়; তবে দুর্দান্ত। ফেব্রুয়ারিতে কে ১০ কোটি ডোজ তৈরি করেছে?’ তিনি বলেন, ‘আমরা হাজার হাজার মানুষের জীবন বাঁচাতে যাচ্ছি। যে কারণে আমরা প্রত্যেকদিন কাজ করছি।’

অ্যাস্ট্রাজেনেকা বলছে, আগামী মার্চে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্যাকসিনটির পরীক্ষার বহুল আকাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়ার আশা করছে তারা।

দক্ষিণ আফ্রিকার অতিসংক্রামক ধরনটিতে আক্রান্তদের মধ্যে যারা গুরুতর অসুস্থ, তুলনামূলকভাবে তারা ভালো সুরক্ষা পাবেন বলে ধারণা করছে ব্রিটিশ এই কোম্পানি। তবে করোনার হালকা উপসর্গের রোগীদের ক্ষেত্রে পরীক্ষার যে ফল এসেছে তা হতাশাজনক।

কোভিশিল্ডের কার্যকারিতা কেমন?

অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাটি দক্ষিণ এশিয়ায় তৈরি করছে বিশ্বের বৃহত্তম ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট। এ টিকাটি সাধারণ সর্দিজ্বরের ভাইরাসের একটি দুর্বল সংস্করণ থেকে তৈরি। এটি শিম্পাঞ্জির দেহে হয় এবং এর নাম অ্যাডেনোভাইরাস।

টিকা তৈরির জন্য এটিকে এমনভাবে পরিবর্তন করা হয়েছে; যা দেখতে অনেকটা করোনাভাইরাসের মতো। তবে তা মানবদেহে কোনও অসুস্থতা তৈরি করতে পারে না। এটা দেয়া হলে মানবদেহে রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি করতে শুরু করে এবং যেকোনও রকম করোনাভাইরাস দেহে ঢুকলে তাকে আক্রমণ করতে শিখে যায়।

চার থেকে ১২ সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজটি দেয়া হয় এবং এটি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যায়। ফলে ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকার চেয়ে এটি সহজে বিতরণ করা সম্ভব।

তবে এই পদ্ধতিতে টিকাটি দেওয়ার পক্ষে পরিষ্কার তথ্য নেই। কিন্তু প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের মধ্যে দীর্ঘবিরতি দিলে তার কার্যকারিতা বেড়ে যেতে দেখা গেছে এবং অপ্রকাশিত উপাত্তে আভাস মিলেছে যে, তা ৭০ শতাংশ পর্যন্ত কার্যকর হতে পারে।

সূত্র: রয়টার্স, এএফপি।

এসএস