যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প

অভিশংসনের বিচার থেকে দ্বিতীয়বারের মতো খালাস পাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, আমেরিকাকে আবারও মহান বানানোর জন্য তার রাজনৈতিক আন্দোলনের যাত্রা শুরু হলো মাত্র। শনিবার মার্কিন সাবেক এই প্রেসিডেন্ট সিনেটে অভিশংসনের বিচারে ৫৭-৪৩ ভোটে খালাস পাওয়ার পর এক বিবৃতিতে এমন মন্তব্য করেছেন।

গত ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জয় অনুমোদনের দিনে ওয়াশিংটন ডিসিতে কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটলে সমর্থকদের সহিংসতায় উসকে দেওয়ার অভিযোগে প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসিত হন ট্রাম্প। শনিবার সিনেটে এই অভিশংসনের পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের পর ভোটাভুটি হয়। এতে দুই তৃতীয়াংশ অর্থাৎ ৬৭ ভোটের দরকার হলেও তাকে অভিশংসনের পক্ষে ভোট পড়ে মাত্র ৫৭টি।

অভিশংসনের বিচার থেকে খালাস পাওয়ার পরপরই এক বিবৃতিতে ট্রাম্প বলেন, আমাদের দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় উইচ হান্টের আরেকটি পর্যায় এই বিচার। 

আমেরিকাকে আবারও মহান করে তোলার জন্য আমাদের ঐতিহাসিক, দেশপ্রেমিক ও সুন্দর আন্দোলনের শুরু হলো মাত্র।

অভিশংসনের বিচার থেকে খালাস পাওয়ার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প

গত ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের অফিস থেকে বিদায় নেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যে কারণে তাকে ক্ষমতা থেকে বিদায় করতে অভিশংসন কাজে আসেনি। কিন্তু ডেমোক্র্যাটরা ক্যাপিটলে দাঙ্গার জন্য ৭৪ বছর বয়সী ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করে আগামী নির্বাচনে তার অংশ নেওয়ার পথ বন্ধ করে দেওয়ার আশা করেছিলেন। ডেমোক্র্যাট শিবিরের সেই আশা প্রতিনিধি পরিষদে জাগলেও সিনেটে ভোটাভুটিতে ভেস্তে যায়।

দাঙ্গায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগ থেকে ট্রাম্প খালাস পেলেও তার দলের অন্তত সাতজন সদস্য অভিশংসনের পক্ষে ভোট দেয়। নিজ দলের এতসংখ্যক সিনেটর এর আগে কখনও প্রেসিডেন্টকে দোষী সাব্যস্ত করে অভিশংসনের পক্ষে ভোট দেয়নি। 

ট্রাম্পের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের ওয়েস্ট পাম বিচ থেকে আলজাজিরার প্রতিনিধি অ্যান্ডি গালাচার বলেন, ট্রাম্পের বিবৃতিতে একটি বার্তা আছে— তিনি কোথাও যাচ্ছেন না।

‌‘সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য ট্রাম্পের যে রাজনৈতিক পরিকল্পনা আছে; সেটি নিয়ে কোনও প্রশ্ন এখন আর নেই। কিন্তু তারা কি বলছে? অনেক মানুষের বিশ্বাস অনুযায়ী, তিনি কি ২০২৪ সালে আবারও নির্বাচন করছেন? নাকি তার বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া সাত রিপাবলিকান সিনেটরের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে যাচ্ছেন?’

যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেশটির প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসিত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প— অপরাধমূলক অভিযোগের একটি পদক্ষেপ ছিল এটি। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রতিনিধি পরিষদে দু’বার অভিশংসিত হয়েছেন তিনি। এছাড়া অফিস ছাড়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিশংসনের মুখোমুখি হন ট্রাম্প। 

কিন্তু দেশটির সিনেট অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে এখন পর্যন্ত কাউকে দোষী সাব্যস্ত করতে পারেনি। শনিবার সিনেটে ভোটাভুটিতে রিপালিকান নেতা মিচ ম্যাককনেল ট্রাম্পের পক্ষে ভোট দিলেও তার তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, ট্রাম্প যে সেদিনের উসকানির জন্য বাস্তবিক এবং নৈতিকভাবে দায়ী সেটি নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। তিনি বলেন, সেদিন যারা ক্যাপিটল ভবনে ভাঙচুর চালিয়েছিল, ধারণা করা হয়— তারা প্রেসিডেন্টের ইচ্ছা এবং নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করেছেন।

এখনও ফৌজদারি অপরাধের দায়ে ট্রাম্প বিচারের মুখোমুখি হতে পারেন বলে মন্তব্য করে রিপাবলিকান দলীয় এই সিনেটর। তিনি বলেন, অফিসে থাকাকালীন একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যা করেছিলেন; সেজন্য এখনও তিনি দায়ী। কোনো কিছু থেকে তিনি রেহাই পেতে পারেন না। এখনও না। 

জটিল সমস্যা

ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার আইনের অধ্যাপক ক্লেইর ফিনকেলস্টেইন বলেছেন, ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করতে যে রিপাবলিকানরা ভোট দিয়েছিলেন, তাদের বেশিরভাগই হলেন রাজনীতিবিদ। যাদের আবারও নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার পরিকল্পনা নেই।

তিনি বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নির্দোষ প্রমাণে যারা অবিচল ছিলেন; তারা মূলত রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে তার পাশে আছেন। তারা ট্রাম্পের কাছে নিজেদের সমর্পণ করেছেন। এবং তারা অ্যাজেন্ডা নিয়ন্ত্রণ করবেন। ২০২৪ সালে আবারও নির্বাচনে লড়াইয়ের জন্য এটি একটি চমৎকার প্ল্যাটফর্ম দেবে।

অধ্যাপক ক্লেইর বলেন, নিজের দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে জটিল সমস্যায় পড়বেন ম্যাককনেল। যে কারণে রিপাবলিকান সিনেটররা ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করার পক্ষে ভোট দেননি। রিপাবলিকান নেতা-কর্মীদের মধ্যে পরিষ্কার বিভাজন সত্ত্বেও শনিবারের ভোটাভুটিতে দলটি যে এখনও ট্রাম্পের নিয়ন্ত্রণেই থাকছে সেটি মোটামুটি নিশ্চিত।

সিনেটে রিপাবলিকান দলীয় সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ সিনেটর চাক গ্রাসলি বলেন, এই মানুষটির প্রভাব রাতারাতি ফুরিয়ে যেতে পারে না। গত কয়েক বছরে নিজের ভাবমূর্তি অনুযায়ী পুরো রিপাবলিকান পার্টিকে পুনর্গঠন করেছেন ট্রাম্প।

কিন্তু প্রশ্ন হলো রিপাবলিকান পার্টির এই ভাবমূর্তি কি সামনে এগিয়ে নেওয়া যাবে? তিনি যখন শেতাঙ্গ এবং কলেজে না যাওয়া অশিক্ষিত লোকজনের কাছে ভোটের আকুতি জানান, তখন বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের কাছে কি তিনি নির্বাচনে ভোট পাওয়ার আশা করতে পারেন? দ্রুত পরিবর্তনশীল জনগাষ্ঠীর ছোট্ট একটি অংশকে নিয়ে আপনি ভবিষ্যতের নির্বাচনে জিততে পারেন না।

সূত্র: আলজাজিরা, রয়টার্স, এএফপি।

এসএস