চলমান সামরিক শাসনবিরোধী বিক্ষোভের মধ্যে মিয়ানমারের বেশিরভাগ জায়াগায় ফের বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইন্টারনেট। পাশাপাশি দেশটির প্রধান শহর ইয়াঙ্গুনসহ বেশ কয়েকটি শহরে সাঁজোয়া যান নিয়ে দেশটির সেনাবাহিনীর সদস্যদের টহল দিতে দেখা গেছে।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে। গত ১ ফেব্রুয়ারি সেনা অভ্যুত্থানের পরপরই মিয়ানমারে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, এ নিয়ে দ্বিতীয় দফা ইন্টারনেট বন্ধ হলো দেশটিতে।

কাচিন রাজ্যের উত্তরে নিরাপত্তা বাহিনী সেনা অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে চলা বিক্ষোভে গুলি চালিয়েছে। জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা অভিযোগ করেছেন, মিয়ানমারের গণতন্ত্রকামী আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে  ‘যুদ্ধ ঘোষণা’ করেছে দেশটির সেনাবাহিনী।।

রোববার ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে সেনাবাহিনীকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়, মিয়ানমারের গণতন্ত্রকামী বিক্ষোভকারীরা দেশটির বৈধ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করছেন; তাদের প্রতি যেন সহিংস আচরণ করা না হয়।  

মিয়ানমার–বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ কর্মকর্তা টম অ্যান্ড্রুজ এ প্রসঙ্গে বলেন, জান্তা সরকার বেপরোয়া আচরণ করছে। এ জন্য তাদের জবাবদিহি করতে হবে।

মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে বেশ কয়েকদিন ধরে অব্যাহত রয়েছে বিক্ষোভ। রোববার হাজার হাজার বিক্ষোভকারী রাস্তায় নেমেছেন। কাচিন রাজ্যের মিতকিনা শহরে নিরাপত্তা বাহিনী ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় গুলির শব্দ শোনা গেছে। সেখানে রাবার বুলেট, না গুলি ছোড়া হয়েছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পাঁচজন সাংবাদিককে আটক করার খবর পাওয়া গেছে।

অভ্যুত্থানের পর সোমবার প্রথমবারের মতো ইয়াঙ্গুনে সেনাবাহিনীর সশস্ত্র গাড়ি টহল দিতে দেখা গেছে। এর আগের দিন সেখানে বৌদ্ধভিক্ষু ও প্রকৌশলীদের মিছিল করতে দেখা গেছে।

মিয়ানমারের টেলিকম অপারেটরা জানান, স্থানীয় সময় গতকাল রোববার দিবাগত রাত একটা থেকে আজ সোমবার সকাল নয়টা পর্যন্ত তাঁদের ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। গার্ডিয়ানের খবরে জানা গেছে, স্থানীয় সময় গতকাল শনিবার রাতে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২৪ ঘণ্টা পর তা আবার সচল হয়।

নেইপিদোর একটি হাসপাতালের চিকিৎসক বিবিসিকে বলেন, নিরাপত্তা বাহিনী রোববার রাতে বাড়িতে বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে।

নিরাপত্তার কারণে নাম প্রকাশ না করে ওই চিকিৎসক বলেন, ‘কারফিউ জারি করা হয়েছে। রাত আটটা থেকে ভোররাত চারটা পর্যন্ত বের হতে নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের মতো জরুরি প্রয়োজনে যাদের বের হতে হবে, তাদের পুলিশ ও সেনাবাহিনী গ্রেপ্তার করতে পারে। এসব নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন।’

মিয়ানমারে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে যারা বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন এবং বিক্ষোভ সংঘটিত করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে জান্তা সরকার। এই বিক্ষোভকারীদের যাতে আশ্রয় না দেওয়া হয়, সে জন্য জনসাধারণকে সতর্ক করেছে সামরিক সরকার।

মিয়ানমারে প্রথম প্রকাশ্য বিক্ষোভের ডাক দেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। এরপর বিক্ষোভে নেমেছিলেন সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের লক্ষ্য করেই এই গ্রেপ্তার অভিযান শুরু হয়েছে।

পুলিশ এখন সাত বিক্ষোভকারীকে খুঁজছে। ওই সাতজনের মধ্যে দেশটির সাধারণ জনগণের মধ্যে পরিচিতি পাওয়া কয়েকজন গণতন্ত্রকামী অধিকারকর্মী রয়েছেন। তাদের গ্রেপ্তারে সাহায্য করতে একটি ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

তবে এই হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও বিক্ষোভ দমন করা যাচ্ছে না। মিয়ানমারের রাজনৈতিক সংকট পর্যবেক্ষক সংগঠন অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স জানিয়েছে, দেশটিতে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৪০০ জন আইনপ্রণেতা, গণতন্ত্রকামী অধিকারকর্মী ও সরকারি কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে আরও অনেককে।

মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান হয় ১ ফেব্রুয়ারি। এর মধ্য দিয়ে ক্ষমতাচ্যুত করা হয় দেশটির স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি ও প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টকে। আর ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নেন দেশটির সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং। এ ছাড়া ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব দেওয়া হয় সাবেক জেনারেল ও বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট মিন্ট সোয়েকে।

এই অভ্যুত্থানের পেছনে অন্যতম কারণ হিসেবে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগের কথা বলেছে সেনাবাহিনী।

 এরপর পার্লামেন্টের প্রথম অধিবেশন শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে ১ ফেব্রুয়ারি প্রেসিডেন্ট মিন্ট, সু চিসহ শীর্ষ নেতাদের প্রথমে আটক এবং পরে বিভিন্ন অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরপর এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করা হয় মিয়ানমারে।

তবে অভ্যুত্থানের পরদিন থেকেই বিক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করে মিয়ানমারে, যা এখনো চলছে। আর সেই তা সামাল দিতেই বিভিন্ন কৌশল নিচ্ছে জান্তা সরকার।

সূত্র: বিবিসি

এসএমডব্লিউ