জলবায়ুর তুলনায় করোনা মহামারির সমাধান সহজ: বিল গেটস
১৯৯৪ সালে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে দাতব্য সংস্থা বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন বিল গেটস
জলবায়ু সঙ্কটের তুলনায় করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলা সহজ বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্বের বৃহত্তম সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও বিশ্বের চতুর্থ শীর্ষ ধনকুবের বিল গেটস। তিনি বলেছেন, জলবায়ু সঙ্কটের সমাধান করতে পারলে সেটি হবে মানবসভ্যতার সবচেয়ে বিস্ময়কর কাজ।
জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে তুলনা করে মাইক্রোসফটের এই প্রধান নির্বাহীর দাবি, করোনাভাইরাস মহামারির অবসান অত্যন্ত সহজ। কীভাবে জলবায়ু বিপর্যয় এড়ানো যায় সেসম্পর্কে লেখা ‘হাউ টু অ্যাভয়েড এ ক্লাইমেট ডিজ্যাস্টার’ নামের নতুন এক বইয়ে বিল গেটস এসব কথা বলেছেন।
বিজ্ঞাপন
গত সপ্তাহে বিবিসির জাস্টিন রোলাতের সঙ্গে আলাপকালে মার্কিন এই ধনকুবের বলেন, জলবায়ু চ্যালেঞ্জের ভয়াবহতাকে অবমূল্যায়ন করা যাবে না। আমরা এই সঙ্কট মোকাবিলায় আগামী ৩০ বছরের জন্য এখনও কিছুই করতে পারিনি। এটির কোনও নজির নেই।
প্রত্যেক বছর বিশ্বে ৫১ বিলিয়ন টন গ্রিনহাউস গ্যাস বায়ুমণ্ডলে যুক্ত হয়।
বিজ্ঞাপন
বায়ুমণ্ডলে এই গ্যাস নিঃসরণের পরিমাণ শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনা দরকার বলে মন্তব্য করেছেন বিল গেটস। আর এটি করতে তথ্যপ্রযুক্তি কীভাবে সহায়তা করতে পারে নিজের লেখা বইয়ে সেদিকেই গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি। মাইক্রোসফটের এই প্রতিষ্ঠাতা বলেছেন, বায়ুচালিত এবং সৌরবিদ্যুতের নবায়নযোগ্য উত্সগুলো বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ অন্তত ৩০ শতাংশ কমিয়ে আনতে সাহায্য করতে পারে।
গ্যাস, কয়লা, গাড়ির জ্বালানি থেকে পরিবেশে যে দূষণের সৃষ্টি এবং ক্ষয়ক্ষতি হয় সেজন্য অধিকাংশ ব্যবহারকারীই কোনও ধরনের ক্ষতিপূরণ দেন না। বিল গেটস বলেন, এই মুহূর্তে কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরণের মাধ্যমে আপনি যে ব্যথার সৃষ্টি করছেন তা দেখতে পাচ্ছেন না। এ কারণে বিশ্বের প্রত্যেক দেশের সরকারকে এই বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা যে সবুজ পণ্য চাই সেটি বেসরকারি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোকে জানানো দরকার। আর এটি করার জন্য গবেষণা এবং উন্নয়নখাতে সরকারগুলোর বিশাল বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে।
কে এই বিল গেটস?
• ১৯৭৫ সালে মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠা করেন
• ফোর্বসের তথ্য বলছে, বিশ্বের চতুর্থ শীর্ষ ধনী বিল গেটস
• তার মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার
• ১৯৯৪ সালে দাতব্য সংস্থা বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা
• ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ৫০ বিলিয়ন ডলার দান করেছেন তিনি
বছরে ৮৭ লাখ প্রাণ কেড়েছে জীবাশ্ম জ্বালানি
জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহারে সৃষ্ট বায়ু দূষণের কারণে ২০১৮ সালে বিশ্বজুড়ে মারা গেছেন ৮৭ লাখ মানুষ; অর্থাৎ ওই বছর মোট যত মানুষ মারা গেছেন বিশ্বে, তার প্রতি ৫ জনে ১ জনের মৃত্যুর কারণ যানবাহন, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ও অন্যান্য বিভিন্ন উৎসে জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো।
হার্ভার্ড, বার্মিংহাম, লিচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের গবেষকেরা এ নিয়ে যৌথ গবেষণা পরিচালনা করেছেন। গত মঙ্গলবার ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মৃত্যুর এই উচ্চহার এমনকি বিস্মিত করেছে এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞদেরও। এর আগের গবেষণাগুলোতে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারে এত মৃত্যুহারের বিষয়টি উঠে আসেনি।
২০১৮ সালে দূষণে ৮৭ লাখ মানুষের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে গবেষণা নিবন্ধে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক মৃত্যু ও রোগ সৃষ্টিতে মূল ভূমিকা রেখেছে এই দূষণ। প্রতিবছর ধূমপান ও ম্যালেরিয়ায় যত মানুষ মারা যান, দূষণে মৃত্যুর হার তার চেয়েও বেশি। গবেষকরা জীবাশ্ম জ্বালানিসৃষ্ট দূষণের সঙ্গে হৃদরোগ, শ্বাসকষ্টজনিত অসুস্থতা এমনকি দৃষ্টিশক্তি হ্রাসেরও সংশ্লিষ্টতা পেয়েছেন।
জীবাশ্ম জ্বালানির দূষণ না থাকলে বিশ্বের জনসংখ্যার গড় আয়ু এক বছরের বেশি বেড়ে যাবে এবং বৈশ্বিক অর্থনীতি ও স্বাস্থ্য খাতের খরচ ২ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ডলার কমে যাবে
হার্ভার্ড, বার্মিংহাম, লিচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় ও ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের গবেষণা
জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির স্কুল অব মেডিসিন অ্যান্ড হেলথ সায়েন্সেসের নাক, কান ও গলার চিকিৎসক নিলু তুমালা বলেন, ‘বায়ুদূষণ যে অদৃশ্য হন্তারক, এটা আমরা উপলব্ধি করতে পারি না। আমরা যে বাতাসে শ্বাস নিই, তা প্রত্যেকের ওপর প্রভাব ফেলে। তবে শিশু, বয়স্ক ও কম আয়ের মানুষের ওপর এর প্রভাব বেশি। শহুরে এলাকায় বসবাসকারী মানুষের ওপর সবচেয়ে বাজে প্রভাব পড়ে।’
দূষণের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে প্রতি ১০ জনের মধ্যে ১ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। চীন ছাড়াও পূর্ব এশিয়ায় দূষণের কারণে মৃত্যুহার বেশি। সে তুলনায় জীবাশ্ম জ্বালানি কম ব্যবহার হওয়ায় দক্ষিণ আমেরিকা ও আফ্রিকায় দূষণে মৃত্যুহার কম।
সূত্র: বিবিসি, দ্য গার্ডিয়ান।
এসএস