বিক্ষোভে অচল ইয়াঙ্গুন, সহিংসতার আশঙ্কা
ইয়াঙ্গুনে অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভ থেকে সু চির মুক্তি ও নির্বাচিত সরকার ফেরানোর দাবি উঠেছে
সহিংসতার তীব্র আশঙ্কার মাঝে মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের বিরোধিতায় হাজার হাজার মানুষ ইয়াঙ্গুনে জড়ো হয়ে সবচেয়ে যে বড় বিক্ষোভ শুরু করেছেন; তাতে অচল হয়ে পড়ছে দেশটির বৃহত্তম এই শহর। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ক্ষোভের প্রকাশ ঘটাতে বুধবার ইয়াঙ্গুনে এই বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন হাজারও মানুষ।
গত ১ ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে বেসামরিক সরকার উৎখাত এবং সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা ছিনিয়ে নেওয়ায় জনগণের সমর্থন রয়েছে বলে দেশটির সেনাবাহিনী যে দাবি করেছে বিক্ষোভকারীরা সেই দাবির বিরুদ্ধে বুধবারের এই সমাবেশের ডাক দিয়েছেন। গত ৮ নভেম্বরের নির্বাচনে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) সরকার বিপুল সংখ্যগরিষ্ঠতা পেয়ে দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় ফিরলেও সেনাবাহিনী জালিয়াতির অভিযোগ তোলে।
বিজ্ঞাপন
বুধবার সকাল থেকেই ইয়াঙ্গুনে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হতে থাকেন। এসময় গাড়িযাত্রীরাও রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন। হাজারও মানুষের বিক্ষোভে অচল হয়ে পড়েছে ইয়াঙ্গুন; বন্ধ রয়েছে সব ধরনের যান চলাচল।
বার্তাসংস্থা রয়টার্স বলছে, বিশাল জনসমাগমের পাশাপাশি লোকজন শহরের প্রধান প্রধান সব রাস্তায় কিংবা জংশনে তাদের গাড়ি থামিয়ে বনেট খোলা গাড়ি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখছেন। এর ফলে সামরিক বাহিনীর যে কোনও গাড়ি এই বিক্ষোভস্থলে পৌঁছানোর চেষ্টা করলে বাধার মুখোমুখি হবে।
বিজ্ঞাপন
এদিকে, মিয়ানমারে নিযুক্ত জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি টম অ্যান্ড্রুস বলেছেন, মিয়ানমারে ক্রমবর্ধমান সহিংসতার ঘটনায় তিনি ভীত। তিনি বলেছেন, দেশজুড়ে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের টহলের তথ্য পেয়েছেন। এর ফলে দেশটিতে বিক্ষোভকারীরা প্রকৃত ঝুঁকির মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান তিনি।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, গত ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক বাহিনী অবৈধভাবে সরকার উৎখাতের পর বুধবার মিয়ানমারে বড় ধরনের সহিংসতা হতে পারে বলে আমি আশঙ্কা করছি। ইন্টারনেট সংযোগ পর্যবেক্ষণকারী সাইট নেটব্লকস বলছে, টানা তৃতীয় রাতের মতো ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন ছিল মিয়ানমার; তবে বুধবার সকালের দিকে দেশটির কিছু কিছু অঞ্চলে পুনরায় ইন্টারনেট সংযোগ ফিরেছে।
অং সান সু চির মুক্তি ও নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি তুলেছেন বিক্ষোভকারীরা
বিক্ষোভকারীদের অনেকের হাতে দেশটির গৃহবন্দি নেত্রী অং সান সু চির ছবি ও মুক্তির দাবির সমর্থনে বিভিন্ন ধরনের ব্যানার দেখা যায়। সামরিক বাহিনীকে শিগগিরই ক্ষমতা থেকে বিদায় নিয়ে অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।
কয়েক দশকের সামরিক শাসনের অবসানের পর ১০ বছর আগে মিয়ানমারে গণতন্ত্রের যাত্রা শুরু হয়। সামরিক শাসনের আমলে দেশটিতে বিক্ষোভ-প্রতিবাদকারীদের ওপর সেনাবাহিনীর ব্যাপক সহিংসতা চালানোর অভিযোগ রয়েছে। বুধবার ইয়াঙ্গুন বিক্ষোভে অংশ নেওয়া অবসরপ্রাপ্ত এক স্কুল শিক্ষক বলেন, আমি শিগগিরই অং সান সু চি, প্রেসিডেন্ট ইউ উইন মিন্ট ও অন্যান্য নেতাদের দ্রুত মুক্তি চাই। আমরা আমাদের গণতন্ত্র ফিরে চাই।
Car owners say their cars are collectively breaking down as police and traffic officers scramble to address the problem throughout Yangon. #CDM #CivilDisobedienceMovement #WhatsHappeninglnMyanmar #Feb17coup pic.twitter.com/WkXQjuXSqJ
— Civil Disobedience Movement (@cvdom2021) February 17, 2021
দুই সপ্তাহের বেশি সময় আগে সামরিক বাহিনীর হাতে গৃহবন্দি হয়ে পড়ার পর থেকে অং সান সু চিকে দেখা যায়নি। তার আইনজীবী খিন মং জ্য বলেছেন, মঙ্গলবার আদালতে সু চির বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ দাখিল করেছে পুলিশ। গত বছরের নভেম্বরের নির্বাচনে করোনাবিধি সংক্রান্ত জাতীয় দুর্যোগ আইন লঙ্ঘনের নতুন অভিযোগ আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে।
সু চির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের পরবর্তী শুনানি আগামী ১ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে; জানিয়েছেন তার আইনজীবী।
এর আগে, মিয়ানমারের এই নেত্রীর বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ছয়টি ওয়াকিটকি আমদানি এবং অনুমতি ছাড়া ব্যবহারের অভিযোগ আনা হয়। সু চির আইনজীবীরা বলেছেন, চলতি সপ্তাহেই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সু চি আদালতে হাজিরা দেবেন। কিন্তু তার আইনজীবী সেখানে থাকতে পারবেন না। কারণ তাদেরকে ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’ দেওয়া হয়নি।
সু চির শারীরিক অবস্থার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তার আইনজীবী খিন বলেন, ‘কোনও সংবাদই ভালো নয়। আমরা এখনও কোনও ভাল অথবা খারাপ সংবাদ পাইনি।’
এসএস