রজকুমারী শেখ লতিফা বিনতে মোহাম্মদ আল-মাখতুম, বন্দি হওয়ার আগের ছবি

দুবাইয়ের শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল-মাখতুমের মেয়ে রাজকুমারী শেখ লতিফা বিনতে মোহাম্মদ আল-মাখতুমকে বাড়িতেই যত্নে রাখা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। শুক্রবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুবাইয়ের রাজপরিবার এই দাবি করেছে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

এর আগে দেশ ছেড়ে পালানোর ব্যর্থ চেষ্টা করার পর জোরপূর্বক ঘরবন্দি করে রাখা হয়েছে বলে গত মঙ্গলবার বিবিসির প্যানোরমা অনুষ্ঠানে প্রচারিত এক ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে অভিযোগ করেন রাজকুমারী লতিফা। প্রকাশিত ওই ভিডিওতে নিজের প্রাণনাশেরও আশঙ্কা করেছিলেন তিনি। এই ঘটনার পর সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে। এমনকি বন্দি ওই রাজকুমারীর বিষয়ে মুখ খোলে জাতিসংঘও।

নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক বন্দী করে রাখা হয়েছে বলে ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়

শুক্রবার দুবাই রাজপরিবার থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সে (রাজকুমারী লতিফা) উন্নতি করছে এবং উপযুক্ত সময়েই সে সামাজিক জীবনে ফিরে আসবে বলে আমরা আশা করছি।’

আলোচিত ওই রাজকন্যার নাম শেখ লতিফা বিনতে মোহাম্মদ আল-মাখতুম। তার বাবার নাম শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল-মাখতুম। তিনি দুবাইয়ের শাসক এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভাইস-প্রেসিডেন্ট। ২০১৮ সালের মার্চ মাসে শেখ লতিফা সমুদ্রপথে আরব আমিরাত থেকে পালানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এরপর থেকেই তাকে বন্দি করে রাখা হয়েছে বলে গোপনে ধারণ করা ওই ভিডিওতে অভিযোগ করেন তিনি।

বিবিসি প্যানারোমায় সম্প্রচারিত রাজকুমারী লতিফার ভিডিও ফুটেজ থেকে নেওয়া ছবি

ভিডিওটি প্রকাশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বজুড়ে এই ঘটনায় জাতিসংঘের তদন্তের দাবি উঠতে শুরু করে। এরপরই রাজকুমারী লতিফা যে এখনও জীবিত আছেন; সংযুক্ত আরব আমিরাতকে (ইউএই) তার প্রমাণ দেওয়ার আহ্বান জানায় জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা। তবে শুক্রবার রাজপরিবার থেকে বিবৃতি দেওয়া হলেও রাজকুমারীর জীবিত থাকার প্রমাণ হিসেবে কোনো ছবি বা ভিডিও প্রকাশ করা হয়নি।

লন্ডনে অবস্থিত আরব আমিরাত দূতাবাসের মাধ্যমে রাজপরিবার জানিয়েছে, ‘শেখ লতিফার বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিক্রিয়ায় যারা রাজকুমারীর ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, আমরা তাদের ধন্যবাদ জানাতে চাই। যদিও গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিও বা খবরে সঠিক তথ্য উঠে আসেনি।’

রাজকুমারী লতিফা, যখন বন্দি ছিলেন না

দূতাবাস জানিয়েছে, ‘পরিবারের সদস্য ও চিকিৎসকদের সহায়তায় বাড়িতেই রাজকুমারী শেখ লতিফার যত্ন নেওয়া হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছে তার পরিবার।’

ভিডিও বার্তায় যা বলেছেন তিনি:

বিবিসির প্যানোরামা অনুষ্ঠানকে দেওয়া ওই ফুটেজে রাজকুমারী লতিফা আল-মাখতুম বলেন, তিনি নৌকায় করে পালিয়ে যাওয়ার পর কমান্ডোরা তাকে মাদকাচ্ছন্ন করে এবং আবার তাকে বন্দিশালায় নিয়ে আসে। তবে নৌকা থেকে সেনাদের হাতে আটক হওয়ার আগে নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলেন লতিফা। নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে সেনা সদস্যদের ‘লাথি মেরেছিলেন এবং তাদের সঙ্গে মারামারিও করেছিলেন তিনি।

এমনকি নিজেকে মুক্ত করতে আমিরাতের এক কমান্ডোর হাতে কামড়ে ধরেছিলেন তিনি। পরে তাকে অচেতন করার ওষুধ দেওয়া হয়। এরপর তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন এবং তাকে একটি ব্যক্তিগত বিমানে তোলা হয়।

সেটি দুবাইয়ে অবতরণের আগপর্যন্ত অচেতন অবস্থায়ই ছিলেন তিনি। তিনি পুলিশের পাহারায় একটি বাড়িতে আটক ছিলেন। সেই বাড়ির জানালাগুলো বাইরে থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সেখানে তার কোনো চিকিৎসা বা আইনি সহায়তা নেওয়ার সুযোগ ছিল না।

লতিফাকে আটক করার পর দুবাইয়ে ফেরত নেওয়ার বছর খানেক পর তাকে গোপনে দেওয়া একটি ফোনে কয়েক মাস ধরে ওই ভিডিওগুলো রেকর্ড করা হয়েছিল। তিনি বাখরুমে বসে সেগুলো রেকর্ড করেছিলেন।

সূত্র: বিবিসি

টিএম