ইরানের কট্টরপন্থী আইনপ্রণেতারা বলেছেন, সম্প্রতি সরকারের সঙ্গে জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থার সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছে সেটি অবৈধ। এই চুক্তির জন্য প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানিকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। 

আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সাথে ইরানের সরকারের যে চুক্তি হয়েছে; সেটির বিচারবিভাগীয় পর্যালোচনার জন্য জাতীয় সুরক্ষা ও পররাষ্ট্রনীতি কমিশনের কাছে একটি প্রতিবেদন পাঠানোর পক্ষে সোমবার দেশটির সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ আইনপ্রণেতারা মত দিয়েছেন।

আইএইএর সঙ্গে চুক্তি হওয়ায় প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির সরকারকে পারমাণবিক কর্মসূচির অতিরিক্ত প্রোটোকলের স্বেচ্ছা বাস্তবায়ন বন্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে আইএইএর পরিদর্শকরা মঙ্গলবার থেকেই দেশটিতে বিস্তৃত পরিসরে পারমাণবিক কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে নজরদারি চালাতে পারবেন।

ইরানের আইনপ্রণেতারা বলেছেন, আইএইএ’র সঙ্গে ইরানের পরমাণু শক্তি সংস্থার (এইওআই) মধ্যে রোববার যে চুক্তি হয়েছে, তা গত ডিসেম্বরে পার্লামেন্টে পাস হওয়া একটি আইনের পরিষ্কার লঙ্ঘন।

ইরানের পরমাণু শক্তি সংস্থার এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আইন অনুযায়ী মঙ্গলবার থেকে অতিরিক্ত প্রোটোকলের বাস্তবায়ন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে। তবে পারমাণবিক কর্মসূচির বিস্তার রোধ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে চুক্তিতে যেসব মূলনীতি রয়েছে; সেসবের বাইরে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক সংস্থাটি অতিরিক্ত কোনোকিছুই করতে পারবে না।

গত ডিসেম্বরে সংসদে পাস হওয়া আইনের লঙ্ঘন করে আইএইএর মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি তেহরান সফরের পর চুক্তি হয়েছে বলে দেশটির কট্টরপন্থী আইনপ্রণেতারা মন্তব্য করেছেন।

ওই আইনে তেহরান নিজেদের পারমাণবিক কর্মসূচির তথ্য-উপাত্ত একপাক্ষিকভাবে সংরক্ষণ করবে এবং অতিরিক্ত প্রোটোকল অনুযায়ী জাতিসংঘের পারমাণবিক পরিদর্শকরা সীমিত কিছু বিষয়ে তথ্য পাবেন। তবে তাদের সঙ্গে পারমাণবিক কর্মসূচির তথ্য-উপাত্ত ভাগাভাগি করা যাবে না।

আইএইএর সঙ্গে চুক্তি তিন মাস কার্যকর থাকবে এবং এই সময়ের পর যুক্তরাষ্ট্র যদি সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে না নেয়; তাহলে পারমাণবিক কর্মসূচির রেকর্ডকৃত ডাটা ধ্বংস করে ফেলবে ইরান।

২০১৫ সালে বিশ্বের পাঁচ পরাশক্তির সঙ্গে ইরানের ঐতিহাসিক পারমাণবিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচির সীমিত করার লক্ষ্যে চুক্তি হলেও ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘ত্রুটিপূর্ণ’, ‘একপেশে’, ‘এর কোনো ভবিষ্যৎ নেই’ অভিযোগ তুলে সেটি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিয়ে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।

ইরানের সংসদের ক্ষুব্ধ সদস্যরা আইএইএ’র সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছে তা নিয়ে ভিন্ন মত পোষণ করছেন। সরকারের সঙ্গে বিবাদের কারণে কয়েক মাস ধরে ঝুলে থাকা বার্ষিক বাজেট বিলের আলোচনার পরিবর্তে সোমবার আইএইএর সঙ্গে তেহরানের চুক্তির বিষয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন তারা।

পরে এই চুক্তির বিচারবিভাগীয় পর্যালোচনার জন্য তারা একটি খসড়া প্রস্তাব সংসদে উপস্থাপন করেন। খসড়া এই প্রস্তাবে প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানিকে আইনি প্রক্রিয়ায় শাস্তি দেওয়ার দাবি জানানো হয়। সংসদে খসড়া প্রস্তাবটি সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে পাস হয়ে যাওয়ার পর আইনপ্রণেতা মুজতবা রেজাকাহ টুইটারে এক টুইটে বলেন, আদালতে যাওয়ার পথে আছেন প্রেসিডেন্ট!

সূত্র: আলজাজিরা, রয়টার্স।

এসএস