টিকা না থাকলে টাকা দিয়ে কী হবে: ডব্লিউএইচও প্রধান
অর্থনৈতিকভাবে উন্নত ও সমৃদ্ধশালী দেশগুলোকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত টিকা না কেনার অনুরোধ করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস। সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) এক আলোচনায় তিনি বলেছেন, ধনী দেশগুলোর এ ধরনের প্রবণতার কারণে ডব্লিউএইচওর কোভ্যাক্স প্রকল্পের টিকায় টান পড়ছে।
সম্প্রতি অনুন্নত ও অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর করোনা টিকা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রকল্প কোভ্যাক্স ভ্যাকসিন শেয়ারিং ইনিশিয়েটিভসের জন্য ৭০০ কোটি ডলার বরাদ্দ করেছে সাত শিল্পোন্নত দেশের সরকারপ্রধানদের জোট জি৭।
বিজ্ঞাপন
শুক্রবারের ভার্চুয়াল বৈঠক শেষে এক যৌথ বিবৃতিতে জি৭ নেতারা এই তথ্য জানান। বিবৃতিতে বলা হয়, বরাদ্দ করা ৭০০ কোটি ডলারের মধ্যে ৪০০ কোটি দেবে যুক্তরাষ্ট্র, ১০০ কোটি ২০ লাখ ডলার দেবে জার্মানি এবং বাকি ১০০ কোটি ৮০ লাখ ডলার দেবে সংগঠনের অপর পাঁচটি দেশ- ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, ইতালি, কানাডা ও জাপান।
এই নিয়ে সোমবার জার্মানির প্রেসিডেন্ট ফ্র্যাংক ওয়ালটার স্টেইনমেয়ারের সঙ্গে কথা হয় তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসুসের। আলাপচারিতায় কোভ্যাক্স প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দের জন্য জার্মানির প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ জানান গেব্রিয়েসুস; কিন্তু পাশাপাশি উন্নত দেশগুলোর প্রয়োজনের অতিরিক্ত টিকা কেনার প্রবণতার সমালোচনা করেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
বলেন, তাদের এই প্রবণতার কারণে টিকার সংকট দেখা দিয়েছে, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভ্যাক্স প্রকল্পকে হুমকির মুখে ফেলছে।
আলাপচারিতায় জার্মানির প্রেসিডেন্টকে ডব্লিউএইচও প্রধান বলেন, ‘পরিস্থিতি যদি এমন হয়, যে আপনার হাতে টাকা আছে, কিন্তু টিকা কিনতে পারছেন না- সেক্ষেত্রে টাকা থাকলেও কোনও লাভ নেই।’
‘তারা (উন্নত দেশগুলো) যখন টিকাদান কর্মসূচির জন্য কোম্পানিগুলোকে টিকার অর্ডার দেয়, তখন সম্ভবত দেশের জনসংখ্যা কত- এ ব্যাপারটি খেয়াল করতে ভুলে যায়।’
‘কিন্তু তাদের এই ভুলের খেসারত দিতে হচ্ছে দরিদ্র ও অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোকে। অনেক দেশের কাছে কোনও টিকাই নেই, যাদের আছে- তা ও প্রয়োজনের তুলনায় অতি অল্প।’
আলাপচারিতায় কোনও দেশের নাম উল্লেখ করেন নি ডব্লিউএইচও প্রধান, তবে ভোটারদের সন্তুষ্টির জন্যই ওই দেশগুলোর সরকার অতিরিক্ত টিকার ডোজ মজুত করছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘তাদের এই প্রবণতার জন্য কোভ্যাক্স প্রকল্পের কাজ পিছিয়ে যাচ্ছে। নিজেদের ভোটারদের তাদের বোঝানো উচিত, এই বিশ্ব যতদিন করোনামুক্ত না হচ্ছে, ততদিন আমরা কেউ নিরাপদ নই।’
২০২০ সালে দরিদ্র দেশগুলোতে টিকা বিতরণকারী আন্তর্জাতিক জোট গ্যাভি ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্সের সঙ্গে যৌথভাবে কোভ্যাক্স ভ্যাকসিন ইনিশিয়েটিভ প্রকল্প শুরু করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
এ প্রকল্পের আওতায় চলতি বছর ১০০ কোটি ৩০ লাখ ডোজ টিকা বিশ্বের অনুন্নত ও অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোতে সরবরাহের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
কিন্তু করোনা টিকা বাজারে আসার আগে থেকেই বেশ কয়েকটি উন্নত দেশ টিকা উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোকে কয়েক শ’ কোটি ডোজ টিকার অগ্রিম সংরক্ষণ (বুকিং) দিয়ে রেখেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে, কয়েকটি দেশ যে পরিমাণ টিকার অর্ডার দিয়েছে—তাতে ওই দেশের সব মানুষকে কয়েকবার টিকা দেওয়া সম্ভব।
সূত্র: আলজাজিরা
এসএমডব্লিউ