জান্তাবিরোধী বক্তব্য: জাতিসংঘে নিযুক্ত মিয়ানমারের দূত বহিষ্কার
জাতিসংঘে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত কিয়াও মোয়ে তুনকে বহিষ্কার করেছে দেশটির জান্তা সরকার। সামরিক বাহিনীকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিতে সাহায্য কামনা করে বক্তৃতা দেওয়ার পর শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) তাকে বহিষ্কার করা হয়।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, গণতান্ত্রিতভাবে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত সামরিক বাহিনীকে কারও সহযোগিতা করা উচিত নয় বলে জাতিসংঘে আবেগঘন বক্তৃতা দেন কিয়াও মোয়ে তুন। ক্ষমতা থেকে সামরিক শাসকদের বিদায় করতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি এসময় আহ্বানও জানান তিনি।
বিজ্ঞাপন
জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্যরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে সাধারণ পরিষদের ওই অধিবেশনে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত কিয়াও মোয়ে তুন বলেন, ‘অবিলম্বে সেনা অভ্যুত্থানের অবসান, নিরীহ মানুষের ওপর নির্যাতন বন্ধ, রাষ্ট্রক্ষমতা জনগণের হাতে ফিরিয়ে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সম্ভাব্য সবচেয়ে কঠোর পদক্ষেপ প্রয়োজন আমাদের।’
তিনি আরও বলেন, আমরা গণতান্ত্রিক সরকারের জন্য লড়াই অব্যাহত রাখব; যে সরকার জনগণের সরকার, জনগণের দ্বারা নির্বাচিত ও জনগণের স্বার্থে পরিচালিত হবে। মিয়ানমারে ক্ষমতাসীন সামরিক সরকারকে স্বীকৃতি না দিতে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে এসব দেশের পক্ষ থেকে যেন স্বৈরশাসকদের কোনো প্রকারের সহায়তা না করা হয় সেই অনুরোধও করেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
বক্তব্য শেষে তিন আঙুল উঁচিয়ে স্যালুট দেন মিয়ানমারের এই রাষ্ট্রদূত। এসময় উপস্থিত প্রতিনিধিরা করতালির মাধ্যমে রাষ্ট্রদূত কিয়াও মোয়ে তুনকে অভিনন্দিত করেন।
এরপরই শনিবার তাকে বহিষ্কারের কথা ঘোষণা করে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন। কারণ হিসেবে টেলিভিশনে বলা হয়, ‘তিনি দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন এবং রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন।’
গত ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক বাহিনী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাগ্রহণের পর থেকে অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে মিয়ানমার। অভ্যুত্থানের পর দেশটির নির্বাচিত নেত্রী অং সান সু চি ও তার দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) নেতাকর্মীদের আটক করে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। গত ৮ নভেম্বর দেশটিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জালিয়াতির মাধ্যমে এনএলডি জয়ী হয়েছে বলে অভিযোগ করে অভ্যুত্থানের পক্ষে সাফাই গাইছে সেনাবাহিনী।
এদিকে, দেশটির নেত্রী অং সান সু চি এখন কোথায় আছেন তা নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়ছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম মিয়ানমার নাউ শুক্রবার এনএলডির কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বলেছে, চলতি সপ্তাহে সু চিকে গৃহবন্দি থেকে অজ্ঞাত স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
দেশটিতে অভ্যুত্থানের পর লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে সামরিক জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করেন; যা তিন সপ্তাহ পর এখনও অব্যাহত আছে। পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের নিন্দা জানানোর পাশাপাশি বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেছে।’
সূত্র: বিবিসি
টিএম