প্রায় দুই বছর আগে শান্তিপূর্ণ বিশাল জনসমাবেশে সহায়তা করার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থী অন্তত সাত নেতা। তাদের মধ্যে আছেন হংকংয়ের ‘গণতন্ত্রের পিতা’খ্যাত অশীতিপর এক আইনজীবী; যিনি গণতন্ত্রপন্থীদের কাছে তুমুল জনপ্রিয় এবং বেইজিংবিরোধী কণ্ঠস্বর হিসেবে পরিচিত।

বৃহস্পতিবার হংকংয়ের পশ্চিম কোলুনের একটি আদালত ওই সাত গণতন্ত্রপন্থীকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। ফরাসী বার্তাসংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক সময় হংকংয়ের এই ব্যারিস্টারকে নগরীর ক্ষুদে সংবিধান রচনায় সহায়তার আহ্বান জানিয়েছিল বেইজিং।

কিন্তু তিনি বেইজিংবিরোধী অবস্থান নিয়ে গণতন্ত্রপন্থীদের অন্যতম আইনজীবী হিসেবে বিভিন্ন মামলায় লড়াই করেন। তার এমন অবস্থানের কারণে বেইজিং ৮২ বছর বয়সী মার্টিন লিকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ আখ্যা দিলেও আন্দোলনকারীদের পাশ থেকে একটু সরে যাননি তিনি।

গত কয়েক দশক ধরে হংকংয়ে গণতন্ত্র দেখতে চেয়ে নিষ্ফল আন্দোলন করে আসছেন মার্টিন লি। সবসময় তিনি গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বললেও অনেক সময় আন্দোলনকারীদের সহিংসতার বিরুদ্ধে নিজের সুরও চড়িয়েছিলেন।

দুই বছর আগে বিশাল এক শান্তিপূর্ণ জনসমাবেশে সহায়তার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন তিনি। ২০১৯ সালে হংকংয়ে যখন গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলন ব্যাপক জোরাল আকার ধারণ করে তাতে নিজের সমর্থন জানিয়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় বর্তমানে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের মুখোমুখি হয়েছেন তিনি।

সরকারবিরোধী ওই বিক্ষোভে জড়িত থাকার দায়ে মিডিয়া মুঘল হিসেবে পরিচিত হংকংয়ের জিমি লাইও এই মামলায় অভিযুক্ত হয়েছেন।

গত বছর গ্রেফতার হওয়ার পরপরই ব্যারিস্টার মার্টিন লি বলেছিলেন, ‌‘অবশেষে আমিও একজন বিবাদী হয়ে গেলাম। আমি কেমন অনুভব করছি? আমি বেশ স্বস্তি অনুভব করছি।’  

তিনি বলেছিলেন, ‘অনেক বছর ধরে, অনেক মাস ধরে, অনেক ভালো তরুণদের গ্রেফতার এবং অভিযুক্ত করা হচ্ছিল। তবে আমাকে গ্রেফতার করা হচ্ছিল না। এ জন্য আমি দুঃখবোধ করেছি।’

মার্টিন লির মতো প্রখ্যাত আইনজীবী ও গণতন্ত্রকামীদের দণ্ডিত হওয়ার মানে হলো হংকংয়ে ভিন্ন মতাবলম্বীদের জায়গা ধীরে ধীরে ফুরিয়ে আসছে। এমনকি যারা গণতন্ত্রকামীদের জন্য মধ্যপন্থী হিসেবে পরিচিত তাদের জন্যও কঠিন জায়গা হতে যাচ্ছে হংকং।

এক জেনারেলের ছেলে

মার্টিন লির ক্যারিয়ার হংকংয়ের সাম্প্রতিক ইতিহাস এবং তার পরিবারের রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি বহন করে। তার বাবা লি ইন-উও ছিলেন কুওমিংটং সেনাবাহিনীর একজন জেনারেল। এই বাহিনী চীনের গৃহযুদ্ধের সময় কমিউনিস্ট মাও সেতুংয়ের বাহিনীর কাছে হেরে যায়।

মতের ভিন্নতা সত্ত্বেও কমিউনিস্ট পার্টির ঝো এনলাই-সহ শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত ছিল জেনারেল কাম শিক্ষক লি ইন-উওর। ঔপনিবেশিক শাসনের সময় হংকংয়ের স্থানীয় অভিজাতদের মধ্যেও মার্টিন লি ছিলেন একেবারে সাধারণ।

ব্রিটেনে আইনে পড়াশোনা করা লি ইংলিশ, ক্যান্তোনিজ ও মান্দারিন ভাষায় বেশ দক্ষ। ১৯৬৭ সালে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময়  বামপন্থীদের দাঙ্গায় বিপর্যস্ত হয়েছিল হংকং। সেই সময় মার্টিন লি অস্থিতিশীলতার জন্য যাদের দায়ী করা হচ্ছিল তাদের আইনজীবী হিসেবে লড়াই করেন। ১৯৯৭ সালে হংকংকে চীনের কাছে হস্তান্তরের সময় সেখানকার মৌলিক আইনের খসড়া তৈরির জন্য বেইজিং তাকে নিয়োগ দেয়।

এক দেশ দুই নীতির আদলে হংকংয়ের নির্দিষ্ট কিছু স্বাধীনতা এবং স্বায়ত্তশাসনের বিধান তিনি সেই আইনে যুক্ত করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে চীন সেই খসড়া আইনে পরিবর্তন আনায় বেইজিংবিরোধী অবস্থান নেন মার্টিন লি। 

১৯৮৯ সালে তিয়ানআনমেন স্কয়ারে বেইজিং যখন ট্যাঙ্ক পাঠিয়ে দেয়, লি তখন চীনের সমালোচনা শুরু করেন। একই সঙ্গে চীনের মৌলিক আইনবিষয়ক হংকং কমিটি থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। এই সময় এসে চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে লিকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়।

এসএস