চীনের উহানে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর এ নিয়ে প্রতিবেদন করায় দেশটির এক নারী ‘নাগরিক সাংবাদিক’কে চার বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন দেশটির আদালত।

ঝ্যাং ঝান নামে ৩৭ বছর বয়সী ওই সাংবাদিক গত মে মাসে গ্রেফতার হন। এরপর সোমবার (২৮ ডিসেম্বর) আইনজীবীসহ সাংহাইয়ের একটি আদালতে হাজির হওয়ার পর তাকে এ দণ্ড দেয়া হয়।
 
বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, সাংবাদিক ঝ্যাংয়ের বিরুদ্ধে ‘ঝগড়া বাঁধানো এবং সমস্যাকে উসকানি‘ দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।

গ্রেফতার হওয়ার পর এর প্রতিবাদে কয়েক মাস আমরণ অনশনে বসেছিলেন সাবেক আইনজীবী ঝ্যাং ঝান। তার আইনজীবী জানিয়েছেন, ঝ্যাংয়ের শারীরিক অবস্থা বর্তমানে খুবই নাজুক। 

উহানে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর পর প্রতিবেদনে করে ‘বিপদে‘ পড়া চীনের বেশ কয়েকজন নাগরিক সাংবাদিকের (সিটিজেন জার্নালিস্ট) একজন হলেন ঝ্যাং ঝান। 

অভিযোপত্রে বলা হচ্ছে, ঝ্যাং গত ফেব্রুয়ারিতে উহান ভ্রমণ করেন এবং সেখানে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া নিয়ে স্বাধীনভাবে প্রতিবেদন করেন। তার প্রতিবেদন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়। এরপর প্রতিবেদনের বিষয়টি চীনা কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। 

দেশটির বেসরকারি সংস্থা দ্য নেটওয়ার্ক অব চাইনিজ হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডারস (সিএইচআরডি) বলেছে, ঝ্যাংয়ের করা প্রতিবেদনে শুধু করোনাভাইরাসের বিষয়টিই ছিল না। ওই প্রতিবেদনে অন্য স্বাধীন সাংবাদিকদের আটক এবং তাদের পরিবারকে হয়রানির বিষয়টিও ছিল, যারা ন্যায় বিচার খুঁজছিলেন। 

সিএইচআরডি জানিয়েছে, গত ১৪ মে হঠাৎ সাংবাদিক ঝ্যাংয়ের কোনো খোঁজ মিলছিল না। এর একদিন পর জানা যায়, সাংহাইয়ের ৪০০ মাইলের বেশি দূরের একটি এলাকা থেকে পুলিশ তাকে আটক করেছে। 

নভেম্বরের শুরুতে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। তাতে বলা হয়, উইচ্যাট, টুইটার ও ইউটিউবের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়েছেন সাংবাদিক ঝ্যাং। এছাড়া বিদেশি সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাতকারে উহানের ভাইরাস নিয়ে বিদ্বেষপূর্ণভাবে তথ্য দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। 

এক বিবৃতিতে ঝ্যাংয়ের আইনজীবী ঝ্যাং কেকে বলেন, মে মাসে গ্রেফতার হওয়ার পর এর প্রতিবাদে আমরণ অনশনে বসেন ঝ্যাং ঝান। পরে কর্তৃপক্ষ জোর করে তাকে নলের সাহায্যে খাবার খাওয়ায়। তিনি ডিসেম্বরের শুরুতে ঝ্যাংয়ের সঙ্গে দেখা করেছেন। ঝাং মাথাব্যথা, মাথাঘোরা ও পেটব্যথাসহ বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন। 

সিএইচআরডি জানিয়েছে, এর আগেও ঝাং ঝান চীনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঝামেলায় পড়েছিলেন। হংকংয়ের অ্যাক্টিভিস্টদের পক্ষে দাঁড়ানোয় ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরেও তাকে তলব করেছিল দেশটির পুলিশ।

এএস