ভারতের কিংবদন্তি যৌন বিশেষজ্ঞ ডা. মহিন্দর ওয়াটসা

ডা. মহিন্দর ওয়াটসা। একজন ভারতীয় যৌন বিশেষজ্ঞ। সংবাদপত্রে লেখা স্পষ্টভাষী কলামের জন্য দেশ তথা বিশ্বনন্দিত ছিলেন। সোমবার ৯৯ বছর বয়সে জীবনাবসান হয়েছে কিংবদন্তি এই ভারতীয় চিকিৎসকের।

প্রশিক্ষিত প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মহিন্দর ওয়াটসা গত দশ বছর ধরে ‘আসক দ্য সেক্সপার্ট’ শিরোনামে তার বিখ্যাত কলাম লিখে আসছিলেন। মানুষের অসংখ্য সমস্যার সমাধানের সঙ্গে দিয়েছেন নানান পরামর্শ। 

বিবিসি তার মৃত্যুর খবর জানিয়ে লিখেছে, জীবদ্দশায় ডা. ওয়াটসা হাজার হাজার ভারতীয়’র উদ্বেগজনক নানা রকম প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। বুদ্ধি এবং স্পষ্টতা— উভয়ের মাধ্যমে তাদের সবাইকে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

সেক্স অর্থাৎ যৌনজীবন একটি আনন্দের বিষয়। কিন্তু বেশিরভাগ লেখক এটা না করে বরং একে একটা মেডিকেল ও গুরুতর বিষয় হিসেবে তুলে ধরেন সবার সামনে

ডা. মহিন্দর ওয়াটসা

ডা. ওয়াটসা এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, ‘সেক্স অর্থাৎ যৌনজীবন একটি আনন্দের বিষয়। কিন্তু বেশিরভাগ লেখক এটা না করে বরং একে একটা মেডিকেল ও গুরুতর বিষয় হিসেবে তুলে ধরেন সবার সামনে।’

বাবার মৃত্যুর খবর জানিয়ে দেওয়া এক বিবৃতিতে তার সন্তানরা বলেছেন যে, ‘তিনি (ডা. মহিন্দর ওয়াটসা) নিজের পছন্দমতো একটি গৌরবময় জীবনযাপন করে গেছেন।’

ডা. মহিন্দর ওয়াটসা গত দশ বছর ‘আসক দ্য সেক্সপার্ট’ শিরোনামে তার বিখ্যাত কলাম লিখেছেন

তবে মৃত্যুর সময় ডা. ওয়াটসা কোনো ধরনের অসুস্থতায় ভুগছিলেন কিনা সেটা অবশ্য স্পষ্ট হওয়া যায়নি। 

দশ বছর আগে যখন তার বয়স আশি তখন মুম্বাই মিরর পত্রিকায় বর্তমানে ভারতে সর্বাধিক জনপ্রিয় যৌন পরামর্শ বিষয়ক কলাম ‘আসক দ্য সেক্সপার্ট’ লেখা শুরু করেছিলেন ডা. মহিন্দর ওয়াটসা। 

আমরা এই কলামটি প্রকাশ করার আগ পর্যন্ত ভারতীয় গণমাধ্যমে ‘লিঙ্গ’ এবং ‘যোনী’র মতো শব্দগুলোর ব্যবহার কখনো হয়নি বললেই চলে

মুম্বাই মিররের সম্পাদক মীনাল বাঘেল

যৌনতার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি এখনও ভারতীয় উপমহাদেশে ‘ট্যাবু’ হওয়ায় এ নিয়ে তার স্পষ্টভাষী লেখা কলামগুলো প্রকাশিত হতে শুরু করলে, অনেকের আগ্রহের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় ব্যাপক সমালোচনাও। 

মুম্বাই মিররের সম্পাদক মীনাল বাঘেল ২০১৪ সালে বিবিসিকে বলেছিলেন, ‘আমরা এই কলামটি প্রকাশ করার আগ পর্যন্ত ভারতীয় গণমাধ্যমে ‘লিঙ্গ’ এবং ‘যোনী’র মতো শব্দগুলোর ব্যবহার কখনো হয়নি বললেই চলে।’  

মুম্বাই মিররের এই নারী সম্পাদক বলেন, এর কারণে অশ্লীলতার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। পেয়েছেন নানারকম ঘৃণাপূর্ণ ও হুমকিসূচক ই-মেইল। কিন্ত তিনি ভেবেছিলেন এসব কিছুর চেয়ে ওই কলাম প্রকাশ করাটা গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য নানা সমস্যার মধ্যেও পড়তে হয়েছে পত্রিকাটিকে। 

গত শতকের ষাটের দশকে নারী বিষয়ক একটি সাময়িকীতে ডা. মহিন্দর ওয়াটসাকে প্রথমবার ‘ডিয়ার ডাক্তার’ শিরোনামে কলাম লেখার আহ্বান জানানো হয়।

বাঘেল আরও জানিয়েছেন, ‘শুধু মিররে তিনি (ডা. ওয়াটসা) বিশ হাজার পাঠকের প্রশ্নের বিস্তারিত উত্তর দিয়েছেন। একজন যৌন বিশেষজ্ঞ হিসেবে তার পেশাগত জীবনে এই সংখ্যাটা হয়তো ৪০ হাজারের বেশি। এর মধ্যে অবশ্য সরাসরি এবং সাক্ষাতে পরামর্শ দিয়েছেন এমন মানুষ কিংবা রোগীকে হিসেবে ধরা হয়নি।’

গত শতকের ষাটের দশকে নারী বিষয়ক একটি সাময়িকীতে ডা. মহিন্দর ওয়াটসাকে প্রথমবার ‘ডিয়ার ডাক্তার’ শিরোনামে কলাম লেখার আহ্বান জানানো হয়। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ত্রিশ বছর। 

তরুণ বয়সে ডা. মহিন্দর ওয়াটসা। বয়স যখন ত্রিশ তখন থেকেই তিনি কলাম লেখা শুরু করেন।

২০১৪ সালে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেছিলেন, ‘আমার তেমন কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। তবে আমি যা জানি তা অবশ্যই আমাকে জানাতে হতো। তাই শুধু যা জানতাম তাই স্বীকার করে লিখেছি।’   

তবে শিগগিরই তিনি অনুধাবন করেন পাঠকরা যেসব সমস্যা কথা তাকে লেখেন তার বেশিরভাগই তাদের যৌনশিক্ষার অজ্ঞতার ফল। এরপরই তিনি আজীবন মানুষকে এসব বিষয় জানানোর তাগিদ অনুভব করেন। 

১৯৭৪ সালে, যখন ডা, মহিন্দর ওয়াটসা এফপিএ ইন্ডিয়ার পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করছিলেন, তখন তিনি তাদের যৌন পরামর্শ এবং এ বিষয়ক শিক্ষার জন্য একটি কর্মসূচি চালু করতে রাজি করান তাদের

প্রথমে ভারতের পরিবার পরিকল্পনা সংস্থার (এফপিএআই) মাধ্যমে শুরু করলেও এরপর তিনি তার নিজের দ্য কাউন্সিল অব সেক্স এডুকেশন অ্যান্ড প্যারেন্টহুড ইন্টারন্যাশনাল প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তা জানাতে থাকেন।

১৯৭৪ সালে, যখন ডা, মহিন্দর ওয়াটসা এফপিএ ইন্ডিয়ার পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করছিলেন, তখন তিনি তাদের যৌন পরামর্শ এবং এ বিষয়ক শিক্ষার জন্য একটি কর্মসূচি চালু করতে রাজি করান তাদের। 

ভারতের প্রথম যৌনশিক্ষা, কাউন্সেলিং ও থেরাপি সেন্টারের প্রতিষ্ঠা করে; নেপথ্যে ছিলেন কিংবদন্তি ডা. মহিন্দর ওয়াটসা।

তখন যৌন সম্পর্কে কথা বলাটা ছিল নিষিদ্ধ একটি বিষয় (ট্যাবু)। অনেকেই তার এমন যৌন পরামর্শ দেওয়ার বিষয়টিকে অশ্লীল বলে সমালোচনাও করেন। স্বাস্থ্যখাতে পেশাদাররাও তখন বলেন এটা নাকি ‘অবৈজ্ঞানিক’।

তবে পরিবার পরিকল্পনা সংস্থা (এফপিএআই) এ কাজে তাকে সহযোগিতা করে এবং ভারতের প্রথম যৌনশিক্ষা, কাউন্সেলিং ও থেরাপি সেন্টারের প্রতিষ্ঠা করে; নেপথ্যে ছিলেন কিংবদন্তি ডা. মহিন্দর ওয়াটসা।

এএস