নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখন একসঙ্গে কোভিড-১৯, অর্থনীতি, জলবায়ু পরিবর্তন এবং বর্ণ বৈষম্যের মতো চারটি সংকট মোকাবিলা করছে। 

রোববার টুইটবার্তায় বাইডেন বলেন, ‘করোনা থেকে শুরু করে অর্থনীতি, জলবায়ু পরিবর্তন এবং বর্ণ বৈষম্য- আমাদের জাতিকে একই সময়ে এই চারটি সংকটের মোকাবিলা করতে হচ্ছে এবং আগামী জানুয়ারি থেকে নষ্ট করার মতো সময় আর আমাদের হাতে থাকবে না। 

জানুয়ারির ১ তারিখ থেকেই যেন এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া যায়, তার প্রস্তুতি গ্রহণ করতে আমি এবং আমার টিম কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছি

নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন

ওই টুইট বার্তায় তিনি আরও লিখেছেন, ‌‘জানুয়ারির ১ তারিখ থেকেই যেন এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া যায়, তার প্রস্তুতি গ্রহণ করতে আমি এবং আমার টিম কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছি’। 

ওই টুইটের ঘন্টাখানেক পর বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় প্রণোদনা ও সরকারি ব্যয়ের ২.৩ টিলিয়ন ডলারের আর্থিক প্যাকেজ বিলটিতে স্বাক্ষর করেন।

নতুন এ প্রণোদনায় ট্রাম্প সই না করার হুমকিতে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রণোদনা তো দূরের কথা, প্রায় দেড় কোটি মার্কিনির বেকারভাতাই বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়।

ট্রাম্প যে প্যাকেজে সই করেছেন সেই ২ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের মধ্যে এক দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলারই সরকারি ব্যয়; বাকি ৯০ হাজার কোটি ডলার বরাদ্দ করোনাভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের জন্য।

নতুন এ প্রণোদনায় বছরে ৭৫ হাজার ডলারের নিচে আয় করা মার্কিনিদের জন্য এককালীন ৬০০ ডলার দিতে বলা হয়েছে।

কয়েক মাসের দর-কষাকষির পর গত সপ্তাহে কংগ্রেসের উভয়কক্ষে ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় বিলটি পাস হয়।

ট্রাম্প এককালীন এই অর্থের পরিমাণ দুই হাজার ডলার করতে চেয়েছিলেন। এছাড়া বিলে বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর জন্য বরাদ্দ নিয়েও আপত্তি ছিল তার।

কয়েক মাসের দর-কষাকষির পর গত সপ্তাহে কংগ্রেসের উভয়কক্ষে ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় বিলটি পাস হয়।

কিন্তু ট্রাম্পের সই না করার হুমকিতে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রণোদনা তো দূরের কথা, প্রায় দেড় কোটি মার্কিনির বেকারভাতাই বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। 

বাইডেনের শপথ গ্রহণের আগে মার্কিন সরকারের একাংশ অচল হয়ে পড়ে কিনা তা নিয়েও শঙ্কা দেখা দেয়।

শনিবার এ নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমালোচনা করে একটি টুইটও করে ট্রাম্প তার ‘দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছেন’ উল্লেখ করে তাকে এই বিলে স্বাক্ষর করার আহ্বান জানান জো বাইডেন। 

টুইটবার্তায় বাইডেন বলেন, ‘আজ ক্রিসমাসের দ্বিতীয় দিনে দেশের লাখ লাখ পরিবার এই অনিশ্চয়তায় ভুগছে যে আগামী দিনগুলো তারা কিভাবে পার করবে। কারণ ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনো সেই আর্থিক প্রণোদনা বিলটিতে স্বাক্ষর করেননি, যেটি কংগ্রেসের দুই পক্ষের সম্মতিতে নিরঙ্কুশভাবে পাশ হয়েছে’।  

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. অ্যান্থনি ফাউসি সম্প্রতি বলেছেন, চলমান ছুটির মৌসুমের পর আগামী সপ্তাহগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রে কোভিড-ি১৯ সংক্রমণ আরও প্রাণঘাতি আকার নিতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. অ্যান্থনি ফাউসি

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-কে দেওয়া সাক্ষাতকারে ফাউসি বলেন, ‘আমি এবং দেশের জনস্বাস্থ্য বিভাগে নিয়োজিত আমার সব সহকর্মী আশঙ্কা করছি বড়দিন এবং নতুন বছরের ছুটির পর সংক্রমণ আবার নতুন করে জোর গতিতে বৃদ্ধি পাবে’।

‘এই মুহূর্তে আমরা খুবই সংকটজনক অবস্থায় রয়েছি। নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জয়ী জো বাইডেনের উদ্দেশ্যে আমি বলতে চাই, পরবর্তী কয়েক সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে’।

গত সপ্তাহে জো বাইডেন বলেছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসের কঠিনতম দিনগুলো আমরা এখনো পেছনে ফেলে আসতে পারিনি; বরং সামনে এই দিনগুলো আমাদের মোকাবিলা করতে হবে’।

যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সোমবারের তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে দেশটিতে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা ১ কোটি ৯১ লাখ ৭৬৭৫ জন এবং এ রোগে দেশটির ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৬৯ মানুষের মৃত্যু হয়েছে ।

এসএমডব্লিউ/এএস