পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে মমতা বন্দোপাধ্যায় নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেসের কাছ থেকে ক্ষমতা নিজেদের দখলে নেওয়ার জন্য নরেন্দ্র মোদির বিজেপি কোমর বেঁধে মাঠে নামলেও বিজয়ের হাসি কেন হাসতে পারলো না তা নিয়ে এখন দলটিতেই শুরু হয়েছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।

রাজ্যটির ২৯৪ আসনের মধ্যে দুইশটির বেশি আসন নিয়ে ক্ষমতায় আসতে যাচ্ছেন বলে নির্বাচনী প্রচারণায় বারবার দাবি করেছিলেন বিজেপির দুই কান্ডারি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তবে দুইশো দূরে থাক ৭৪টি আসনে জয় পেয়েছে দলটি।

গেরুয়া শিবিরের আশা ছিল এবার ক্ষমতায় আসবে বিজেপি। শুধু বিজেপির কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতারাই নয়, গোটা আরএসএস পরিবার অনেকটাই নিশ্চিত ছিল জয় নিয়ে। কিন্তু জয় না পাওয়ার পর বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে। তাতে প্রাথমিকভাবে ৫টি কারণ দেখছেন নেতারা।

১। মুখের অভাব। রাজ্য বিজেপি নেতারা নির্বাচনী প্রচারপর্বে অনেক পরিশ্রম করলেও কোনও মুখ তুলে ধরতে পারেননি। এই সিদ্ধান্ত ছিল বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বেরই। নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহরা বারবার বাংলার ‘ভূমিপুত্র’ মুখ্যমন্ত্রী হবেন বলে জানালেও আলাদা করে কারও নাম বলেননি। অন্যদিকে, তৃণমূলের মুখ ছিলেন দুইবারের মুখ্যমন্ত্রীলড়াকু নেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

২। বাংলার কোনো নেতাকে মুখ হিসেবে তুলে না ধরার বিপরীতে রাজ্যের ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে অনেক বেশি নির্ভরতা ছিল কেন্দ্রীয় নেতাদের ওপরে। আর সেই নির্ভরতাকে ‘বহিরাগত’ তকমা দিয়ে আক্রমণ শানিয়েছে তৃণমূল। বিজেপি নেতারা প্রাথমিকভাবে মনে করছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়সহ তৃণমূলের এই আক্রমণকেই সমর্থন দিয়েছে বাংলার মানুষ।

৩। রাজ্য বিজেপি আরও একটি কারণকে গুরুত্ব দিচ্ছে। দলটি বলছে, ২০১৬ সালে বিজেপি মাত্র ৩টি আসনে জয় পেয়েছিল। সেখান থেকে একেবারে ক্ষমতায় আসার যে লক্ষ্য স্থির করা হয়েছিল তা দলের অভিজ্ঞতার তুলনায় অনেকটাই বেশি। লোকসভা নির্বাচনের ফলকে বিধানসভা ভোটের ক্ষেত্রেও প্রাধান্য দেওয়া ঠিক হয়নি। তাই এই হারকে বড় মনে হচ্ছে।

৪। মেরুকরণকে হাতিয়ার করে নীলবাড়ির লড়াইয়ে ফায়দা তুলতে চেয়েছিল বিজেপি। প্রচার পর্বে অনেক ক্ষেত্রেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে তোষণের অভিযোগ তুলতে কড়া ভাষা প্রয়োগ করেছেন নেতারা। রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছে, এর ফলে মুসলিম ভোট এককাট্টা হলেও হিন্দু ভোটের সিংহ ভাগ ঝুলিতে টানা যায়নি।

৫। বিজেপিতে ‘আদি ও নব্য’ বিবাদ অনেক দিনের। বিগত লোকসভা নির্বাচনের পর থেকেই এই অভিযোগ নিয়ে দলের মধ্যে অনেক গোলযোগ হয়েছে। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনের আগে আগে তৃণমূল থেকে যারা এসেছেন তাদের প্রাধান্য দেওয়ার বিষয়টি দলের কর্মী, সমর্থক এবং ভোটটাররা ভাল চোখে নেয়নি বলেই মনে করছে বিজেপি। একই সঙ্গে রাজ্য নেতাদের বক্তব্য, রাজ্যের সর্বত্রই প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে অনেক ভুল ছিল।

সূত্র: আনন্দবাজার

এএস