ইরানের হুমকি, পারস্য উপসাগরেই থাকছে মার্কিন রণতরী
গত নভেম্বর থেকে পারস্য উপসাগরে টহল দিচ্ছে ইউএসএস নিমিৎজ ছবি: মার্কিন নৌবাহিনী
উপসাগরীয় অঞ্চলে ইরানের ক্রমবর্ধমান হুমকির কারণে মার্কিন বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস নিমিৎজকে পারস্য উপসাগরের আন্তর্জাতিক জলসীমা থেকে দেশে ফিরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর ফলে মার্কিন এই বিমানবাহী রণতরী উপসাগরীয় অঞ্চলে থেকে নিয়মিত টহল পরিচালনা করবে বলে জানিয়েছে পেন্টাগন।
গত নভেম্বরের শেষের দিক থেকে মার্কিন এই রণতরী পারস্য উপসাগরে টহল দিচ্ছে। গত ৩১ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রী ক্রিস্টোফার সি মিলার প্রায় ১০ মাসের টহল শেষ করে উপসাগরের জল থেকে সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার নির্দেশ দেন।
বিজ্ঞাপন
প্রভাবশালী দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমস দেশটির কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বলেছে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতার শেষের দিনগুলোতে এসে তেহরানকে যেকোনও ধরনের উত্তেজনা এড়ানোর বার্তা দিতে রণতরী ইউএসএস নিমিৎজকে পারস্য উপসাগর থেকে দেশে ফেরার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।
কিন্তু রোববার মিলার যে বিবৃতি দিয়েছেন তাতে ভিন্ন সুর দেখা গেছে। বরং এই যুদ্ধজাহাজকে পারস্য উপসাগরে আগের অবস্থানে থেকেই টহল অব্যাহত রাখতে বলা হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ইরানের নেতারা যে ধরনের হুমক দিয়েছেন; তা বিবেচনায় আমি ইউএসএস নিমিৎজকে পুনরায় মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছি।
বিজ্ঞাপন
বিবৃতিতে মার্কিন এই মন্ত্রী বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় কমান্ডের আওতাধীন এলাকায় অবস্থান করবে ইউএসএস নিমিৎজ। যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতার বিষয়ে কারও সন্দেহপোষণ করা উচিত নয়।’ তবে ইরান কি ধরনের হুমকি তৈরি করেছে সেবিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি মন্ত্রী ক্রিস্টোফার সি মিলার।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর ড্রোন হামলায় নিহত বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর অভিজাত শাখা কুদস ফোর্সের প্রধান কাসেম সোলেইমানি ও মিলিশিয়া নেতা আবু মাহদি আল-মুহান্দিসের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী ঘিরে তেহরানের সঙ্গে ওয়াশিংটনের চরম উত্তেজনা ও বাক-বিতণ্ডার মাঝে যথাসময়ে নির্দিষ্ট টার্গেটে আঘাত হানার হুমকি দিয়েছেন ইরানের নেতারা।
তেহরানের এই হুমকির পর পেন্টাগন উপসাগরীয় অঞ্চল থেকে রণতরী ফিরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করল।
এর আগে, রোববার ইরাকের রাজধানী বাগদাদ ও অন্যান্য শহরে হাজার হাজার মানুষ কাসেম সোলেইমানি ও আল-মুহান্দিসের স্মরণে শোক পদযাত্রা করেছেন। এ সময় ইরাকিরা ‘আমেরিকা আর নয়’, ‘প্রতিশোধ চাই’, ‘আমেরিকার মৃত্যু চাই’সহ নানা ধরনের স্লোগান দেন। মার্কিন হামলায় নিহত ইরানি ও ইরাকি এ দুই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয়েছে সিরিয়া, লেবানন, ইয়েমেন ও ওই অঞ্চলের অন্যান্য দেশেও।
২০১৯ সালের জুনের পর থেকে এখন পর্যন্ত এ দুই দেশের মাঝে ইতোমধ্যে অন্তত দুবার যুদ্ধে জড়ানোর মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়। বিশেষ করে কুদস ফোর্সের প্রধান কাসেম সোলেইমানি হত্যাকাণ্ডের পর তেহরান-ওয়াশিংটন যুদ্ধংদেহী অবস্থানে চলে যায়।
কাসেম সোলেইমানি হত্যাকাণ্ডের কয়েকদিন পর ইরাকে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে কয়েক ডজন ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে ইরান।
ইরানের সঙ্গে ছয় বিশ্ব শক্তির স্বাক্ষরিত পারমাণবিক চুক্তি থেকে ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেয়ার পর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তেহরানের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের নীতি নেন। একই সঙ্গে দেশটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ওয়াশিংটন।
সূত্র : আলজাজিরা, নিউইয়র্ক টাইমস।
এসআইএস