পশ্চিমবঙ্গকে ভাগ করে রাজ্যটির উত্তরাঞ্চল নিয়ে ‌নতুন একটি রাজ্য গঠনের দাবি তোলা বিজেপির দুই নেতা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাওয়ার পর বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন, এটা কি বাংলা ভাগের দাবি তোলার পুরষ্কার? 

উত্তরবঙ্গের জন্য আলাদা রাজ্যের দাবি তোলা আদিবাসী নেতা জন বার্লার এবং নিশীথ প্রামাণিক এখন ভারতের ​কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। তৃণমূলের আশঙ্কা, যেহেতু পশ্চিমবঙ্গ দখলে বিজেপি ব্যর্থ হয়েছে, তাই এবার তারা বাংলা ভাগ করতে উদ্যোগী হতে পারে।

এই অবস্থার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, ‘বিজেপি পশ্চিমবঙ্গ ভাগের বিরুদ্ধে। এটাই দলীয় অবস্থান। কেন্দ্রে মন্ত্রী হওয়া জন বার্লা বা অন্য কেউ যদি ফের এ রকম কিছু বলেন, তাহলে আমাদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে ​তা জানাতে হবে।’

জন বার্লা আগের দাবি থেকে সরেননি। দিল্লিতে দায়িত্ব নেয়ার পর বলেছেন, ‘বিভাজনের প্রয়োজন আছে।’ বার্লা বলেছেন, ‘উত্তরবঙ্গকে আলাদা রাজ্য করার দাবি একশ বছর পুরনো। আমি কেন্দ্রের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলব। জনগণের দাবিকে দাবিয়ে রাখা যাবে না।’

পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দোপাধ্যায় নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস শুরু থেকে বিজেপির দুই নেতার অবস্থানের সমালোচনা করে আসছে। দলটি অভিযোগ তুলেছে, ​জন বার্লাদের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী করার সিদ্ধান্ত পশ্চিমবঙ্গ ভাগের বিষয়টি উসকে দিচ্ছে।

তৃণমূল মুখপাত্র ও রাজ্যসভায় চিফ হুইপ সুখেন্দু শেখর রায় বলেছেন, ‘বিজেপি পশ্চিমবঙ্গ দখল করতে চেয়েছিল। যখন সেটা পারল না, তখন তারা উত্তরবঙ্গকে আলাদা করার কথা বলছে। কিন্তু উত্তরবঙ্গের মানুষ কোনোদিন এভাবে আলাদা রাজ্যের দাবি তোলেননি।’

তিনি বলেন, ‌‘উত্তরবঙ্গের মধ্যে দার্জিলিং জেলার মানুষ আলাদা গোর্খাল্যান্ডের দাবি করেছেন। গ্রেটার কোচবিহারের দাবি উঠেছে। কিন্তু উত্তরবঙ্গের নয় জেলা আলাদা উত্তরবঙ্গের দাবি কখনো করেনি। যেভাবে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ বিজেপির ‘বাংলা দখলের’ পরিকল্পনা ব্যর্থ করেছে, সেভাবেই রাজ্য ভাগ করাকেও তারা ঠেকাবে।’

বিজেপি এখন এই বিতর্ক ধামাচাপা দিতে তৎপর। দলের সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু দাবি করেছেন, জন বার্লাদের যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী করা হয়েছে, সেটা উত্তরবঙ্গকে আলাদা রাজ্য করা নিয়ে তারা যে দাবি তুলেছিলেন, তার পুরস্কার নয়।’

তিনি বলছেন, ‘যারা আলাদা রাজ্য করার কথা বলেছিলেন, সেটা তাদের ব্যক্তিগত মত এবং তারা হতাশ হয়েই বলেছিলেন। তৃণমূলের আমলে উত্তরবঙ্গে কোনো উন্নয়ন হয়নি। কিন্তু তাই বলে পশ্চিমবঙ্গকে ভাগ করার কোনো প্রস্তাবে দলের সায় নেই।’

তবে সুখেন্দুর অভিযোগ, ‘বিজেপি বিভাজনের রাজনীতি করে চলছে। কোথাও জাতি, কোথাও ধর্ম, কোথাও বর্ণের নামে তারা বিভাজন করছে। এবার তো তারা পশ্চিমবঙ্গকেই ভাগ করতে চাইছে।’

তার দাবি, ‘বার্লা ছাড়া আরেকজনকে যে মন্ত্রী করা হয়েছে, তার বিরুদ্ধেও গুরুতর অভিযোগের মামলা রয়েছে। হলফনামায় সেকথা তিনি উল্লেখও করেছেন। তাকে নরেন্দ্র মোদি সরকারে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী করা হলো। এসব অন্য ইঙ্গিত নয় কি?’

এএস