ট্রাম্পকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ভোট দেন যে ১০ রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদে দ্বিতীয়বারের মতো অভিশংসিত হয়েছেন বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের মাত্র ৭ দিন আগে দ্বিতীয়বারের মতো একই পরিণতি বরণ করলেন তিনি। এর মাধ্যমে লজ্জার বিরল এক ইতিহাস গড়লেন দেশটির বিদায়ী এই প্রেসিডেন্ট।
বুধবার (১৩ জানুয়ারি) মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে ট্রাম্পের অভিশংসনের পক্ষে-বিপক্ষে ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে অভিশংসনের পক্ষে পড়ে ২৩২ ভোট এবং বিপক্ষে পড়ে ১৯৭ ভোট।
বিজ্ঞাপন
তবে ক্যাপিটল ভবনে হামলার ঘটনায় সর্থকদের উস্কে দেওয়ার অভিযোগে ট্রাম্পের অভিশংসন প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছেন তার রিপাবলিকান পার্টিরই ১০ জন আইনপ্রণেতা।
যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের প্রতীক বলে পরিচিত ক্যাপিটল ভবনে হামলার ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে ট্রাম্পকে ক্ষমতাচ্যুত করার পক্ষে ভোট দেন তারা। এই ১০ রিপাবলিকান আইনপ্রণেতার পরিচয় প্রকাশ করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
বিজ্ঞাপন
তারা হলেন- ইলিনয়িস অঙ্গরাজ্যের আইণপ্রণেতা অ্যাডাম কিনজিনগার, ওয়োমিং অঙ্গরাজ্যের আইণপ্রণেতা লিজ চেনেই, নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের আইনপ্রণেতা জন কাটকো, মিশিগান অঙ্গরাজ্যের আইণপ্রণেতা ফ্রেড আপটোন, ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যের আইণপ্রণেতা জেমি হেরেরা ব্যুতলার, ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যের আইণপ্রণেতা ড্যান নিউহাউস, মিশিগান অঙ্গরাজ্যের আইণপ্রণেতা পিটার মেইজার, ওহিও অঙ্গরাজ্যের আইণপ্রণেতা অ্যান্থনি গনজালেস, সাউথ ক্যারোলিনা অঙ্গরাজ্যের আইণপ্রণেতা টম রাইস এবং ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের আইণপ্রণেতা ডেভিড ভালাদাও।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে মাত্র দু’জন প্রেসিডেন্ট অভিশংসিত হয়েছিলেন। কিন্তু মাত্র এক বছরের কিছু বেশি সময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কোনো প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প লজ্জাজনকভাবে দু’বার অভিশংসিত হলেন। এখন তার ভাগ্য ঝুলছে সিনেটের হাতে।
এর আগে ২০১৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসিত হন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই সময় দেশটির পার্লামেন্টের এই নিম্নকক্ষ প্রেসিডেন্টকে অভিশংসিত করে। কিন্তু উচ্চকক্ষ সিনেটের নিয়ন্ত্রণ রিপাবলিকানদের হাতে থাকায় ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ সংক্রান্ত অভিশংসন থেকে মুক্তি পান ট্রাম্প।
গত ৬ জানুয়ারি ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনে কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে হামলা চালায় ট্রাম্প সমর্থকরা। কংগ্রেসের যৌথ ওই অধিবেশনে সেদিন জো বাইডেনকে আনুষ্ঠানিক ভাবে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করার প্রস্তুতি চলছিল।
একপর্যায়ে ক্যাপিটল ভবনের নিরাপত্তা ব্যারিকেড ও মূল ফটক ভেঙে ভিতরে ঢুকে পড়েন ট্রাম্প সমর্থকরা। হামলাকারীদের অনেকেই ছিল সশস্ত্র। ভেতরে ঢুকে সিনেট হলে রীতিমতো তাণ্ডব চালায় তারা।
শুধু তা-ই নয়, স্পিকার ন্যান্সি পেলোসিসহ বেশ কয়েকজন আইনপ্রণেতার কার্যালয়ও তছনছ করে তারা। হামলা-সংঘর্ষে এক পুলিশ সদস্যসহ নিহত হন পাঁচজন। সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ৬ জানুয়ারি একটি কলঙ্কিত দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়।
এই ঘটনার পর ক্যাপিটলে হামলার ঘটনায় সমর্থকদের উসকানি দেওয়া অভিযোগ ওঠে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে জোরেশোরে মাঠে নামে ডেমোক্র্যাটরা।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা অভিশংসনের অভিযোগে বলা হয়, তিনি বারবার নির্বাচনে জয়ের মিথ্যা দাবি করেছেন এবং সমর্থকদের গত ৬ জানুয়ারির সহিংসতায় ইন্ধন দিয়েছেন; যারা ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গায় অংশ নেন।
শুধু তাই নয়, নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করতে জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের রিপাবলিকান দলীয় প্রতিনিধিকে চাপ প্রয়োগ করেছিলেন ট্রাম্প।
ডোনাল্ড ট্রাম্প অবশ্য দাবি করেছেন , ক্যাপিটল হিলে যারা হামলা করেছে তারা ‘বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী লোকজন’ বা ‘অ্যান্টিফা পিপল’। তার ভক্ত বা অনুসারী নয়।
অভিশংসন প্রস্তাব পাশ হওয়ার আগে যুক্তরাষ্ট্রের পত্রিকা নিউইয়র্ক টাইমস’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের রিপাবলিকান সদস্য মিচ ম্যাককোনেল বলেন, ডেমোক্র্যাট পার্টির আনইপ্রণেতারা ট্রাম্পের অভিশংসনের যে প্রস্তাব এনেছেন, তাতে তিনি সন্তুষ্ট; কারণ এই প্রস্তাব পাস হলে রিপাবলিকান পার্টি থেকে ট্রাম্পকে বহিষ্কার করা সহজ হবে।
তিনি আরো বলেছিলেন, ট্রাম্প যে অপরাধ করেছেন তা অবশ্যই অভিশংসনের উপযোগী।
সূত্র: সিএনএন
টিএম