যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের স্টেট হাউসগুলোর সামনে রোববার (১৭ জানুয়ারি) বিচ্ছিন্নভাবে বিক্ষোভ করেছেন ট্রাম্প সমর্থক ও  উগ্র ডানপন্থী বিভিন্ন গ্রুপের সদস্যরা। এসব বিক্ষোভকারীরা সংখ্যায় অল্প হলেও তাদের মধ্যে অনেকেই অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

এদিকে সম্প্রতি ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনে ট্রাম্প সমর্থকদের রক্তাক্ত হামলা ও সহিংসতার পর নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বাইডেনের শপথের আগে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে স্টেট হাউসগুলোর সামনে বিক্ষোভকারীরা জড়ো হওয়ায় টেনশন ও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।

বিবিসি বলছে, টেক্সাস, অরেগন, মিশিগান ও ওহিওসহ বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের ক্যাপিটল ভবনের সামনে জড়ো হয়ে রোববার বিক্ষোভ করে মানুষ। তবে অনেক অঙ্গরাজ্যের স্টেট হাউসগুলো রোববার শান্তও ছিল।

এদিকে আগামী বুধবার (২০ জানুয়ারি) নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠানকে ঘিরে হামলা ও সহিংসতার আশঙ্কা থাকায় ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনসহ সব অঙ্গরাজ্যের স্টেট হাউসগুলো নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে। বুধবারের ওই শপথ অনুষ্ঠানকে ঘিরে ট্রাম্প সমর্থকরা সশস্ত্র বিক্ষোভে নামতে পারে বলে আগেই সতর্ক করেছে এফবিআই।

জো বাইডেনের ক্ষমতাগ্রহণের মাত্র দুই সপ্তাহ আগে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের প্রতীক ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনে সশস্ত্র হামলা ও সহিংসতা চালায় ট্রাম্প সমর্থকরা। এতে এক পুলিশ কর্মকর্তাসহ নিহত হয় পাঁচ জন। সমর্থকদের চালানো এই হামলায় ট্রাম্প উস্কানি দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এরপরই বহুমুখী তৎপরতার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়। এমনকি মোতায়েন করা হয়েছে ন্যাশনাল গার্ডের সেনাও।

এদিকে রোববার সশস্ত্র বিক্ষোভে নামতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ও উগ্র ডানপন্থী বিভিন্ন অনলাইন নেটওয়ার্কে আহ্বান জানিয়ে পোস্ট দেয় ট্রাম্পপন্থী বিভিন্ন গ্রুপ। কিন্তু অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও ‘পুলিশের ফাঁদ হতে পারে’ ভেবে অনেক সংগঠনই তাদের অনুসারীদের এসব আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিক্ষোভে অংশ না নেওয়ার নির্দেশ দেয়।

তাই এখন পর্যন্ত খুব অল্পসংখ্যক বিক্ষোভকারীরই কয়েকটা শহরের রাস্তায় নেমেছেন। যার কারণে বেশিরভাগ স্টেট হাউসগুলোর সামনের রাস্তা এখনও খালি।

নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, রোববার ‘বুগালো বোয়িস’ নামক এক সংগঠনের প্রায় ২৫ জন সশস্ত্র সদস্য ওহিও অঙ্গরাজ্যের কলম্বাসে অবস্থিত স্টেট হাউসের সামনে অবস্থান নেয়। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে একজনের দাবি- অস্ত্র রাখার অধিকার নিশ্চিতের লক্ষ্যেই তারা বিক্ষোভে নেমেছেন এবং তাদের এই কর্মসূচি অনেকদিন আগেই ঘোষণা করা হয়েছিল।

একইভাবে মিশিগান অঙ্গরাজ্যের স্টেট হাউসের সামনেও রোববার প্রায় দুই ডজন বিক্ষোভকারী বিক্ষোভে অংশ নেয়। তাদের অনেকের হাতে ছিল রাইফেল। অবশ্য সামনে পুলিশ দাঁড়িয়ে থাকলেও বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

সেখানে উপস্থিত এক বিক্ষোভকারী বার্তাসংস্থা রয়টার্সের কাছে দাবি করেন,‘সহিংসতা চালাতে আমরা এখানে আসিনি। আশা করি সহিংস হতে আমাদেরকে কেউ বাধ্য করবে না।’

একইভাবে রোববার টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের অস্টিনে ক্যাপিটল ভবনের বাইরে অবস্থান নেয় প্রায় এক ডজন বিক্ষোভকারী। তাদের মধ্যে কয়েকজনের হাতে ছিল রাইফেল।

পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের হ্যারিসবার্গে অবস্থিত ক্যাপিটল ভবনের বাইরেও অবস্থান নেয় বিক্ষোভকারীরা।

শপথ গ্রহণের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্ট হিসেবে আগামী বুধবার দায়িত্ব নেবেন জো বাইডেন। সেদিন আরও বেশি বিক্ষোভ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

রাজধানীর সড়কগুলোতে ব্যারিকেড বসিয়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বাইডেনের টিম যুক্তরাষ্ট্রবাসীকে কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে রাজধানীতে না আসার আহ্বান জানিয়েছে।

ওয়াশিংটন ডিসির মেয়রসহ স্থানীয় কর্মকর্তারা জনগণকে নতুন প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠান দূর থেকে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন।

মেরিল্যান্ড, নিউ মেক্সিকো ও উটাহ রাজ্যের গভর্নররা জরুরি অবস্থা জারি করেছেন। ক্যালিফোর্নিয়া, পেনসিলভানিয়া, মিশিগান, ভার্জিনিয়া, ওয়াশিংটন ও উইসকনসিনসহ অনেক রাজ্যে পরিস্থিতি মোকাবেলায় ন্যাশনাল গার্ড সদস্যদের মোতায়েন করেছে।

সূত্র: বিবিসি

টিএম