নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বুধবার (২০ জানুয়ারি) শপথ নেবেন। ইতিহাস নিশ্চিত করছে যে, বাইডেনের মতো করে আমেরিকার ইতিহাসে এর আগে কোনো প্রেসিডেন্টের হোয়াইট হাউসে অভিষেক ঘটেনি। 

বৈশ্বিক এক মহামারির মধ্যে অল্পসংখ্যক মানুষের উপস্থিতিতে মার্কিন পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিলে পশ্চিম দিকে হবে বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠান। বাইডেনের অভিষেক উপলক্ষে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রাখা হয়েছে রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিসহ গোটা যুক্তরাষ্ট্র।

বাইডেনের অভিষেকের দিন যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে সহিংসতার শঙ্কা থেকেই এহেন নিরাপত্তা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ওইদিন নির্বাচনে পরাজয় না মানা বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সমর্থকরা ফের হামলা করতে পারেন বলে শঙ্কা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ এফবিআই। 

কেননা দুই সপ্তাহ আগে মার্কিন কংগ্রেস ক্যাপিটল হিলে ট্রাম্পের উসকানিতে তার সমর্থকদের সহিংস হামলায় পাঁচ জনের প্রাণহানি হয়েছিল। বাইডেনকে আনুষ্ঠানিকভাবে জয়ী হিসেবে স্বীকৃতি দিতে ওইদিন কংগ্রেসের উভয়কক্ষের যৌথ অধিবেশন চলাকালীন এই হামলা হয়।

তবে শুধু গত ৬ জানুয়ারির সহিংস হামলার কারণে যে এবারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের অভিষেক ভিন্নরকম হচ্ছে তেমনটাও অবশ্য নয়। মহামারি করোনায় সবচেয়ে বিপর্যস্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্রে অবশ্য এর আগেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েই ছিল। 

স্বাভাবিকভাবে অন্য সময়ে যেখানে অভিষেক অনুষ্ঠানের জন্য আমেরিকানদের কাছে দুই লাখ টিকিট বিক্রি করা হয় এবার সেখানে সামাজিক দূরত্ব মেনে কংগ্রেসের আনুমানিক হাজারখানেক সদস্য আর সাবেক প্রেসিডেন্টরা হয়তো থাকবেন। 

কিন্ত কংগ্রেসে হামলার পর থেকে অভিষেকের অনুষ্ঠান নিয়ে কালো ছায়া আরও গাঢ় হয়েছে। এর মাধ্যমে আরও একবার আমেরিকার গভীর রাজনৈতিক বিভাজনের বিষয়টি সামনে এসেছে; আগামীতে যা হবে বাইডেনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

কংগ্রেসে দাঙ্গায় উসকানির অভিযোগে দ্বিতীয়বার অভিশংসিত ও উচ্চকক্ষ সিনেটে শুনানির মুখোমুখি ডোনাল্ড ট্রাম্প ১৮৬৯ সালের পর প্রথম ক্ষমতাসীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিষেক অনুষ্ঠানে থাকছেন না।


 
শুধু ট্রাম্প নয় তার দল রিপাবলিকান পার্টির একাংশও এখনো বাইডেনের জয় মেনে নেয়নি। ইতিহাসবিদরা বলছেন, আমেরিকার ইতিহাসের আধুনিক যুগে এমন চরম পরিস্থিতিতে কোনো প্রেসিডেন্টের অভিষেক হয়নি।  

উনবিংশ শতাব্দীতের গৃহযুদ্ধ চলাকালীন আব্রাহাম লিংকন এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির মহামন্দার সময় ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট ছাড়া আমেরিকার কোনো প্রেসিডেন্ট এমন মাত্রায় অনিশ্চয়তা ও বিভাজনের মধ্যে অভিষিক্ত হননি। 

প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির রাজনৈতিক ইতিহাসের অধ্যাপক জুলিয়ান জেলিজার মার্কিন সংবাদমাধ্য দ্য হিলকে বলেন, ‘এবারের অভিষেকে অনাকাঙ্ক্ষিত এই পরিস্থিতির জন্য তো নিজেই অনন্য। এমনটা আগে হয়নি।’ 

তিনি বলেন, ‘অনেক রীতি এবার মানা হচ্ছে না। এর মধ্যে দেখা দিয়েছে জাতীয় নিরাপত্তা শঙ্কা। আমার মনে হয় আমরা এমনটা আগে দেখিনি। এটা দেখে অনেক কর্মকর্তাও বুঝতে পারছেন না যে তাদের কি করা উচিত।’ 

মহামারি করোনাভাইরাস নয় সহিংসতার ভয়ে ওয়াশিংটন ডিসি এখন এক প্রকার লকডাউন। দেশটির রাজধানীজুড়ে ২১ হাজার ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করা হয়েছে। যাদের মধ্যে বেশিরভাগ সদস্যই সশস্ত্র। 

মার্কিন কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটল হিলের— যেখানে গত ৬ জানুয়ারি নজিরবিহীন হামলা হয়— চারপাশ ঘিরে নিরাপত্তা বলয় ও নিরাপদ অঞ্চল (গ্রিন জোন) তৈরি করা হয়েছে। নতুন করে তৈরি হয়েছে নিরাপত্তাবেষ্টনী।      

এফবিআই পরিচালক ক্রিস্টোফার রে বলেছেন, তার সংস্থা ওয়াশিংটন ডিসি এবং সব অঙ্গরাজ্যের রাজধানী শহরে সম্ভাব্য সহিংস বিক্ষোভ ও সমাবেশ সম্পর্কে বিস্তৃত আকারে অনলাইন নজরদারি বাড়িয়েছে। 

ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সসহ সংবাদ ব্রিফিংয়ে জেনারেল ড্যানিয়েল হোকানসন বাইডেনের নিরাপত্তা ও শান্তি রক্ষায় ন্যাশনাল গার্ডের প্রচেষ্টাকে যেভাবে তুলনা করেন তা মূলত বিদেশে মোতায়েন সেনাদের করা হয়।  

জেনারেল হোকানসন বলেন, ‘আমি প্রতি রাতে এসব নারী-পুরুষের সঙ্গে দেখা করছি এবা তারা এই মিশনের গুরত্ব বুঝতে পারছে। প্রেসিডেন্টের অভিষেক ও পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখায় তাদের প্রস্তুতি এখন প্রমাণিত।’ 

ওয়াশিংটন ডিসিরি যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থা দ্রুত কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। সাধারণ ব্যাপক জনবহুল এলাকা দ্য ন্যাশনাল মল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছি। ক্যাপিটল হিল সংলগ্ন সব রাস্ত বন্ধ। দেওয়া হয়েছে ব্যারিকেড। 

আগামী বুধবার স্থানীয় সময় দুপুরে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বাইডেন মার্কিন কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটল হিলের পশ্চিম অংশটিতে দাঁড়িয়ে শপথ নেবেন। বাইডেন অবশ্য বলেছেন, প্রকাশ্যে আসার বিষয়ে তিনি ভীত নন। 

এএস