প্রথম দিনে বাইডেনের প্রধান চার উদ্যোগ
যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দুপুরে শপথ নেওয়ার পর বিকেলে হোয়াইট হাউসে প্রবেশের পর পূর্বসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্পের একাধিক সিদ্ধান্ত বদলে দিয়ে জো বাইডেন বুঝিয়ে দিলেন, তিনি ট্রাম্পের পথে হাঁটবেন না।
বাইডেন তার ওভাল অফিসের প্রথম দিনে ট্রাম্পের গৃহীত মার্কিন নীতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য ১৫টি নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন। বাইডেনের নেওয়া প্রধান চারটি উদ্যোগ নিচে তুলে ধরা হলো।
বিজ্ঞাপন
নির্বাহী আদেশগুলোর মধ্যে রয়েছে প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে নতুন করে যোগ দেওয়া, করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে হোয়াইট হাউসে নতুন অফিস, মুসলিম নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের বাজেটে স্থগিতাদেশ।
প্যারিস জলবায়ু চুক্তি
বিজ্ঞাপন
বারাক ওবামা প্রেসিডেন্টে ও জো বাইডেনে ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ২০১৫ সালের এই চুক্তিতে বিশ্বের বহু দেশ সই করেছিল। এই মুহূর্তে ১৮৯টি দেশ এই চুক্তির অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পরপরই ২০১৭ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গুরুত্বপূর্ণ এই জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন।
প্রতিটি দেশে ফসিল ফুয়েল বা খনিজ জ্বালানির ব্যবহারের ওপর বিধিনিষেধ তৈরি করেছিল এই চুক্তি। চুক্তির মূল লক্ষ্য ছিল, দূষণ হয় না, এমন অর্থাৎ পুনর্নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে পৃথিবীকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
কিন্তু প্যারিস জলবায়ু চুক্তি মার্কিন অর্থনীতিকে দুর্বল করে দিচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি অন্যায় করা হচ্ছে, এমন অভিযোগে তুলে ২০১৭ সালে এই চুক্তি থেকে সরে আসেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ট্রাম্পের ওই সিদ্ধান্তে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন হয়েছিল। ক্ষমতায় এসেই সেই চুক্তিতে ফের যোগ দেওয়ার ঘোষণা করেছেন বাইডেন। শুধু তাই নয়, বাইডেন জানিয়েছেন, পরিবেশ নিয়ে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেবে তার প্রশাসন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও করোনা
ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ ছিল, মহামারি করোনাভাইরাসে প্রথম দিকে গুরুত্ব দেননি তিনি। তার প্রশাসন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি বলেই মহামারিতে সবচেয়ে বিপর্যস্ত দেশ এখন যুক্তরাষ্ট্র।
বাইডেন জানিয়েছেন, করোনা মোকাবিলার জন্য একটি আদেশে সই করেছেন তিনি। এতে দেশের সব মানুষকে আগামী ১০০ দিন মুখে মাস্ক পরতে হবে। যেকোনো পাবলিক প্লেসে মাস্ক পরা বাধ্য়তামূলক করা হচ্ছে।
বাইডেনের বক্তব্য, চার লাখ মানুষকে হারিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আর কাউকে হারাতে চাই না। সাধারণ কিছু নিয়ম তাই মেনে চলতেই করতেই হবে। এজন্য হোয়াইট হাউসে করোনার জন্য একটি বিশেষ অফিস তৈরি করেছেন তিনি।
ওই অফিস দেশে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে খবর রাখবে এবং প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবে। বাইডেন জানিয়েছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাতেও ফের অংশীদার হবে যুক্তরাষ্ট্র। মহামারি করোনার প্রকোপের মধ্যেই ট্রাম্প ডাব্লিউএইচও-র জন্য তহবিল বন্ধ করে দিয়ে জাতিসংঘের স্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্থাটি বেরিয়ে আসার ঘোষণা দিয়েছিলেন।
মুসলিমদের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার
ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় থাকাকালীন ১৩টি মুসলিম দেশের ওপর ‘ট্র্যাভেল ব্যান’ অর্থাৎ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন। এরপর এসব দেশের নাগরিকরদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায়। ট্রাম্পের বক্তব্য ছিল, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্যই এমন পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি।
প্রথম দিনে বাইডেন ওই নিষেধাজ্ঞা বাতিল করে নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন। তিনি বলেছেন, অভিবাসন নীতি ট্রাম্পপূর্ব সময়ে ফিরিয়ে নেওয়া হবে। বস্তুত, ট্রাম্পের পদক্ষেপ দেশের ভেতরে এবং বাইরে চূড়ান্ত বিতর্ক তৈরি করেছিল। নির্বাচনী প্রচারণার সময়ই বাইডেন জানিয়েছিলেন, ক্ষমতায় এলে তিনি বিতর্কের অবসান ঘটাবেন।
মেক্সিকোর দেয়াল
মেক্সিকোর সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ট্রাম্প। যা ছিল ট্রাম্পের অন্যতম স্বপ্নের প্রকল্প। সে জন্য ইমার্জেন্সি ডিক্লারেশনও দিয়েছিলেন তিনি। যাতে দেয়াল তোলার বাজেট আটকে না থাকে।
ক্ষমতায় বসার পর প্রথম দিনে যুক্তরাষ্ট্রের নয়া প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ট্রাম্পের সেই ডিক্লারেশন বাতিল ঘোষণা করেছেন। সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ বাইডেনের আমলে আদৌ কার্যকর হয় কিনা, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
সূত্র: ডয়েচে ভেলে ও এএফপি
এএস